গাজায় ‘লাইভ স্ট্রিমিং করে’ গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল, অভিযোগ অ্যামনেস্টির

গাজায় দেড় বছরে বড় আকারে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল। ছবি: এএফপি
গাজায় দেড় বছরে বড় আকারে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল। ছবি: এএফপি

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত গণহত্যা চালানো হচ্ছে এবং এর শতভাগ দায় ইসরায়েলের।

আজ মঙ্গলবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল নিখুঁত পরিকল্পনার মাধ্যমে গাজাবাসীদের তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ওই অঞ্চলে ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারা সামাজিক মাধ্যমে 'লাইভ স্ট্রিমিং' করে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ও গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ইসরায়েল গাজার ফিলিস্তিনিদের নির্মূলের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে, যা গণহত্যার সমতুল্য।'

অ্যামনেস্টি, অন্যান্য অধিকার সংস্থা ও কয়েকটি দেশ একই অভিযোগ আনলেও গাজায় 'গণহত্যা' চালানোর অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে ইসরায়েল।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদন। ছবি: অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইট
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদন। ছবি: অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইট

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণ সীমান্তে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা হামলা চালায়। ওই হামলায় এক হাজার ২১৮ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।

পাশাপাশি, হামাসের হাতে বন্দি হন ২৫১ জন ব্যক্তি, যাদের ৫৮ জন এখনো গাজায় আছেন বলে ধারণা করা হয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ভাষ্য, তাদের মধ্যে ৩৪ জন ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন।

এই হামলার প্রতিশোধ নিতে সেদিনই গাজায় নির্বিচার ও গণহত্যামূলক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। মাঝে দুই দফায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি চালু থাকলেও দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলমান এই হামলায় অন্তত ৫২ হাজার ২৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। 

অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড প্রতিবেদনের ভূমিকায় বলেন, '২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরাধ করে এবং ২৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে জিম্মি করে। এর পর থেকেই লাইভ স্ট্রিমিংয়ে প্রচারিত (ইসরায়েলি) গণহত্যার দর্শক হতে বাধ্য হচ্ছে সারা বিশ্ব।' 

'যখন ইসরায়েল হাজারো ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে, কয়েক প্রজন্মের মানুষসহ সমগ্র পরিবারকে নির্মূল করছে, বাড়িঘর, জীবন-জীবিকা, হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস করছে, তখন গোটা বিশ্ব ক্ষমতাহীন হয়ে তা চেয়ে চেয়ে দেখেছে', যোগ করেন তিনি।

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযান গাজার বেশিরভাগ ফিলিস্তিনিকে 'বাস্তুচ্যুত, গৃহহীন, ক্ষুধার্ত করেছে এবং প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্তের ঝুঁকিতে ফেলেছে। তাদেরকে চিকিৎসা সেবা, বিদ্যুৎ ও খাওয়ার পানি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।'

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, তারা ২০২৪ সালের পুরো সময়টায় 'ইসরায়েলের একাধিক যুদ্ধাপরাধের বিস্তারিত তথ্য নথিবদ্ধ করেছে, যার মধ্যে আছে বেসামরিক মানুষ ও স্থাপনায় সরাসরি হামলা এবং সার্বিকভাবে, নির্বিচার ও মাত্রা ছাড়ানো হামলার ঘটনা।'

ইসরায়েলের অভিযান ১৯ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে, যা গাজার জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের সমান। তারা 'জেনেবুঝে এক নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।'

পশ্চিমা দেশগুলোর রাজধানীতে জনমানুষ সড়কে নেমে প্রতিবাদ জানালেও, 'বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার একক ও সমষ্টিগত ভাবে (ইসরায়েলের) এসব নিন্দনীয় উদ্যোগ থামানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে এবং এমন কী, যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতেও তারা অনেক দেরি করেছে।'

পাশাপাশি, অ্যামনেস্টি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি অভিযানের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি দিয়েছে। আগেও অ্যামনেস্টি অভিযোগ করেছিল, দক্ষিণ আফ্রিকায় যেভাবে দেশটির স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে 'বর্ণবাদ' চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, একইভাবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের 'অচ্ছুৎ' হিসেবে বিবেচনা করে তাদেরকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। এবারের বার্ষিক প্রতিবেদনেও একই অভিযোগ করেছে সংস্থাটি। 

গাজায় দেড় বছরে ৫২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি
গাজায় দেড় বছরে ৫২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি

'ইসরায়েলের অবলম্বন করা নীতির ফলে অধিকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা বাড়ছে। আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং প্রশাসনের ইন্ধনে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলার মাত্রাও নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।

অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক হেবা মোরায়েফ 'গত এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিদিন গাজার ফিলিস্তিনিরা যে ভয়াবহ পর্যায়ের দুর্দশার শিকার হয়েছে' তার নিন্দা জানা।

তিনি মন্তব্য করেন, 'এই গণহত্যা বন্ধে গোটা বিশ্ব অপারগতা প্রকাশ করেছে এবং প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাব দেখিয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Victory day today: A nation born out of blood and grit

The tide of war had turned by mid-December in 1971. The promise of freedom was no longer a dream. It had hardened into tangible certainty.

7h ago