নীরবে গাজায় নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে হামাস: রয়টার্স
ইসরায়েলি গণহত্যায় বিধ্বস্ত গাজায় একটি মুরগির দাম কত হবে, অথবা সিগারেটের ওপর কত কর বসবে তা হামাস নির্ধারণ করে দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন উপত্যকার অধিবাসীরা। সংগঠনটি নীরবে উপত্যকায় নিয়ন্ত্রণ বিস্তারে কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
গাজাবাসীদের অনেকে মনে করছেন, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনায় সেখানকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করা হলেও সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে হামাস গাজায় তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে।
তারা আরও মনে করেন—এমন পরিস্থিতিতে, হামাসের বিরোধীরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না যে, পূর্ব ঘোষিত প্রতিশ্রুতি মেনে তারা হামাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধাচরণ করবে কিনা।
গতকাল শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এমনটি তুলে বলা হয়, প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধ গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে বন্ধ হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর হামাস ইসরায়েলি বাহিনীর সরে যাওয়া এলাকাগুলোয় দ্রুত নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সেসময় ইসরায়েলকে সহযোগিতা, চুরি ও অন্যান্য অপরাধের অভিযোগে বেশ কয়েককে হামাস যোদ্ধারা হত্যা করে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসহ কয়েকটি দেশ চায় হামাস অস্ত্র ত্যাগ করুক এবং গাজা পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে দিক। তবে কারা হামাসের পরিবর্তে গাজা পরিচালনা করবে তা নিয়ে সেসব দেশ এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।
গাজার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেছেন, তারা বুঝতে পারছেন যে হামাস নিজেদের মতো করে নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করে যাচ্ছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোয় কোন ধরনের পণ্য আসছে বা সেখান থেকে কী যাচ্ছে এর সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এর সবকিছু হিসাবও আছে তাদের কাছে।
জ্বালানি ও সিগারেটসহ ব্যক্তিগতভাবে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক ধরা ও কোনো ব্যবসায়ী অতিরিক্ত গণ্য আনলে তাকে জরিমানা করার কাজও হামাস করছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন গাজার কয়েকজন ব্যবসায়ী।
হামাস সরকারের গণযোগাযোগ বিভাগের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতা সংবাদ সংস্থাটিকে জানান—জ্বালানি ও সিগারেটের মতো পণ্যের ওপর শুল্ক ধার্যে হামাসের ভূমিকা নিয়ে যা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। সরকার শুল্ক বাড়ায়নি বলেও জানান তিনি।
গাজার একটি মার্কেটের মালিক হাতেম আবু দালাল বলেন, 'যেহেতু গাজায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য আসছে না তাই পণ্যের দাম অনেক। সরকারের প্রতিনিধিরা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। তারা পণ্য দেখে মূল্য নির্ধারণ করছেন।'
গাজার মধ্যাঞ্চলে নুসেইরাত এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ খলিফা জানান যে, মূল্য নিয়ন্ত্রণে ক্রমাগত চেষ্টা করা সত্ত্বেও পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। 'এটা যেন দেখতে পুঁজিবাজারের মতো,' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
'মানুষের আয়-রোজগার নেই; অথচ পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। খুবই খারাপ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে সবাই যাচ্ছে। এখানে জীবন অনেক কঠিন। এমন অবস্থায় শীত আসছে,' যোগ করেন তিনি।
গাজার ২০ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই হামাস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বসবাস করেন। ২০০৭ সাল থেকে হামাস এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো গাইত আল-ওমারি রয়টার্সকে বলেন, 'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজা পরিচালনার দায়িত্ব নিতে যত দেরি করবে হামাসের নিয়ন্ত্রণ তত বাড়বে।'
গাজায় আসা পণ্যের ওপর হামাসের শুল্ক নির্ধারণের প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, 'এ কারণে হামাসকে গাজা শাসন করতে দেওয়া হবে না।'
গাইত আল-ওমারি জানান, যুদ্ধ শুরুর আগে গাজায় হামাস সরকারে ৫০ হাজারের মতো কর্মী ছিল। তাদের মধ্যে কয়েক হাজার কর্মী যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। যারা বেঁচে আছেন তারা নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
হামাসের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, গাজার চার অঞ্চলে চার গভর্নর নিহত হওয়ায় হামাস নতুন গভর্নর নিয়োগ দিয়েছে। এ ছাড়াও, যুদ্ধে নিহত হামাসের পলিটব্যুরোর ১১ সদস্যের জায়গায় নতুন সদস্য নেওয়া হয়েছে।
গাজা সিটির এক মানবাধিকারকর্মী মুস্তাফা ইব্রাহিম মনে করেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় হামাস সেই সুযোগে নিজেদের শাসন শক্তিশালী করছে। যতদিন না বিকল্প সরকার বসছে ততদিন হামাস এই কাজ করতে থাকবে।


Comments