‘প্রেসিডেন্ট’ ট্রাম্পের ফৌজদারি মামলার ভবিষ্যৎ কী

ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স ফাইল ফটো

২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেওয়া এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা।

স্থানীয় সময় গতকাল সারাদিন ভোট দেন মার্কিনীরা। ভোট গণনায় আজ বুধবার ইতোমধ্যে ট্রাম্প ২৭৭ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ম্যাজিক ২৭০ ভোট পার করে ফেলেছেন।

এর অর্থ হচ্ছে আগামী জানুয়ারিতে তিনি ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাগুলোর কী হবে?

ট্রাম্প একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন যার বিরুদ্ধে বেশকিছু ফৌজদারি মামলা আছে। এর মধ্যে ফেডারেল আদালতেও তার বিরুদ্ধে মামলা আছে।

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে মামলা আছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এটিসহ মোট চারটি মামলা তিনি এ বছর মোকাবিলা করছিলেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তার নিজের বিরুদ্ধে ফেডারেল মামলাগুলো বন্ধ করার ক্ষমতা পাবেন। কিন্তু, নিউইয়র্কের আদালতে ঘুষের মামলা বা জর্জিয়ায় ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোটের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা মামলার বিষয়ে প্রেসিডেন্টের কিছু করার থাকবে না।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার তারিখ এলে প্রেসিডেন্ট পদে থাকা অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদালতে ফৌজদারি মামলায় হাজিরা দেওয়া হবে এক অনন্য নজির।

দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়, দ্বিতীয় মেয়াদে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফেডারেল আদালতে গুরুতর ফৌজদারি মামলা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এর মধ্যে আছে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের কাছে রাখা এবং গত নির্বাচনের ভোটের ফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে মামলা।

ম্যানহাটনের আদালতে ঘুষের মামলায় ট্রাম্প ৩৪টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। জর্জিয়ার আদালতেও নির্বাচন নিয়ে মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি।

ডেমোক্র্যাটরা আশা করেছিল, ফৌজদারি মামলাগুলোর কারণে রিপাবলিকানদের কাছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্পের মামলার সরকারি প্রসিকিউটররা বড়সড় আইনি বাধা ও জটিল অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন বলে ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়।

ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির বিচার বিভাগের সাবেক প্রধান ক্যারেন ফ্রিডম্যান অ্যাগ্নিফিলো এবিসি নিউজকে বলেন, 'বিজয়ী হলে (ট্রাম্প) সব ফৌজদারি মামলা বাতিল করে দেবেন।' তার মতে, ট্রাম্পের বিজয় তার 'কারামুক্তির কার্ড' হিসেবে কাজ করবে।

বোস্টন কলেজের আইনের অধ্যাপক জেফরি কোহেনের বরাতে এবিসি নিউজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হলেও সাজা নভেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে। যদিও নতুন পরিস্থিতি বিচারকের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারক অল্প সাজা আরোপ করতে পারেন বা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। যেমন: একদিনের প্রতীকী কারাবাস বা ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদ না ছাড়া পর্যন্ত সাজা বিলম্বিত করতে পারেন।

কোহেন বলেন, 'একজন প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব পালনের সময় কারারুদ্ধ হতে বাধ্য করা হবে না। তাই তিনি পদ ছাড়ার পর শাস্তি কার্যকর করা যেতে পারে।'

ট্রাম্পের আইনজীবীরাও নির্বাচনের ফলাফলের আলোকে সাজা বিলম্বিত করার চেষ্টা করতে পারেন বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জর্জিয়া ও ম্যানহাটনের মামলা ফেডারেল বিচার বিভাগের এখতিয়ারের বাইরে। তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ দুই মামলাকে প্রভাবিত করা অনেক কঠিন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে থাকলে রাজ্য আদালতের এই মামলা চালানোর সম্ভাবনা নেই।

গোপন নথি রাখার মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি অভিযোগ। ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় প্রসিকিউটরদের আপিল প্রত্যাহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে করেন ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির বিচার বিভাগের সাবেক প্রধান ক্যারেন ফ্রিডম্যান অ্যাগ্নিফিলো।

হোয়াইট হাউসের দৌড়ে জয়ী হয়ে ট্রাম্প মামলাগুলো থেকে নিজেকে ক্ষমা করবেন বলে জল্পনা চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেকে ফৌজদারি মামলা থেকে নিজেকেই রেহাই দেননি।

ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প নিজেকে সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিলে বা সাজা থেকে মুক্তি দিলে তা হবে অনন্য নজির। আর বিচার বিভাগ যদি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলাগুলো খারিজ করে দেয়, তাহলে আর নিজেকে ক্ষমা করার প্রয়োজন হবে না তার।

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt project to save 4 rivers around Dhaka falters

Even 16 years after HC directive to restore Dhaka’s four rivers to their original state, the govt has yet to complete even half of the work

11h ago