শাবানার জীবনে কোনো অপূর্ণতা নেই!

শাবানা। ছবি: স্টার

বাংলা চলচ্চিত্রে সোনালি সময়ের অভিনেত্রী শাবানা। অভিনয় করেছেন তিনশোর মতো চলচ্চিত্রে। আট বছর বয়সে ‘নতুন সুর’  ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের সূচনা। ‘চকোরী’ দিয়ে নায়িকা হিসেবে অর্বিভাব। নায়িকা হিসেবে নয় বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একবার পেয়েছেন প্রযোজক হিসেবে। ২০১৭ সালে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা। প্রায় ২৩  বছর চলচ্চিত্র থেকে দূরে আছেন এই অভিনেত্রী। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্প্রতি দেশে এসেছেন তিনি। বারিধারা ডিওএইচএস-এ নিজ বাসায় বসে অভিনয় জীবনের সোনালি অতীত, চলচ্চিত্রের বর্তমানসহ একান্ত অনেক কিছু ভাগাভাগি করলেন দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে।

 

প্রায় ২৩ বছর হলো চলচ্চিত্র থেকে দূরে আছেন। দূরে থাকাটা কী আপনার জন্য বেদনার?

এখন আমি পুরোপুরি পরিবারিক মানুষ। পরিবার নিয়েই সময় কাটে। নাতি নাতনিতের নিয়ে খেলা করে, আড্ডা দিয়েই সময় পার করি। আমার সঙ্গী তারা। মাঝে মাঝে দেশে আসছি। আত্মীয়-স্বজন, সিনেমার পুরোনো মানুষজনদের সঙ্গে দেখা হয়। সময়ট বেশ ভালোই কাটে।

টেলিভিশনে যখন নিজের পুরেনো ছবিগুলো দেখেন  কেমন লাগে?

তখন সেই দিন গুলোতে চলে যাই। তখনকার শুটিংয়ের বিভিন্ন ঘটনা ছবির মতো একের পর এক চোখের মধ্যে ভাসতে থাকে। কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। কয়েকদিন আগে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘ভাত দে’ ছবিটা টেলিভিশনে দেখাচ্ছিল। অনেক কথা মনে পড়ছিল।

দেশের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী ছিলেন আপনি। প্রবাস জীবনে এটা অনুভব করেন?

প্রতিটা মানুষের জীবনে একটা অতীত থাকে। সেটা ভালোমন্দ মিলেই রচিত হয়। সাধারণত মানুষ তার জীবনে অতীতের সুন্দর সময়টা অনুভব করে বেশি। আমিও তার বাইরে নয়।  একদিন অনেক সুন্দর সময় গেছে। ব্যস্ততায় ভরপুর ছিল সবকিছু। মাসের ত্রিশ দিনই ক্যামেরার সামনে থাকতে হয়েছে। সেই দিনগুলো খুব অনুভব করি। দেশের মানুষের এতো ভালোবাসা পেয়েছি। এখনো আমাকে দেখে  তাদের চোখে মুখে যে আনন্দ ও তৃপ্তির ছাপ থাকে সেটা ভাষায় বোঝাতে পারব না।

আপনার সমসাময়িক আরও কয়েকজন নায়িকাও দর্শকপ্রিয় ছিলেন। তাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কতটা বন্ধুত্বের ছিল?

তখন আসলেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সোনালী একটা সময় ছিল। এফডিসির কোনো ফ্লোর ফাঁকা থাকত না। ববিতা, কবরীসহ বেশ কয়েকজন তখন জনপ্রিয়। সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক ছিল। তবে আমাদের মধ্যে দেখা কম হতো। প্রত্যেকেই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় দেখা করার ফুরসত হতো না। তবে সম্পর্কের অবনতি হয়নি আমাদের মধ্যে। সবার মাঝে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা ছিল। নিজেদের অবস্থান থেকে ভালো কাজ উপহার দেওয়ার চেষ্টা করতেন। যে ছবিগুলোতে অভিনয় করতাম, চাইতাম আমার অভিনয় সবচেয়ে ভালো হোক। আমার বিপরীতে কে আছেন সেটা বিষয় ছিল না। চরিত্রের প্রয়োজনেই চারদিকের মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতাম।

আপনার সঙ্গে যারা অভিনয় করেছেন তাদের মধ্যে সেরা পাঁচ নায়কের তালিকায় কোন নামগুলো উঠে আসবে?

তখন যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তারা সবাই অসম্ভব ভালো ছিলেন। আলমগীর ভাই ও রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে যেমন আমার বেশি ছবিতে অভিনয় করা হয়েছে। এছাড়া ফারুক ভাই, বুলবুল আহমেদ, সোহেল রানা ভাই এবং জাফর ইকবালের সঙ্গেও অভিনয় করেছি। এরা সবাই সুপারস্টার নায়ক। এর মধ্যে কাকে এগিয়ে রাখব বলুন? সবাই আমার চোখে সেরা।

এখনকার চলচ্চিত্র অঙ্গনের খবর রাখেন?

অনেক বছর বাংলা ছবি দেখা হয় না। চলচ্চিত্রের খবরও তেমন একটা রাখা হয় না। দেশে আসলে  সিনেমার পুরনো মানুষজনের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের কাছ থেকেই কিছু খবর পাই। এখন শাকিব খান ভালো করছে এটা জানি। বাংলাদেশের সিনেমার হাল ধরে আছে একাই। এর আগে  রিয়াজ, ফেরদৌস ভালো কাজ করত। এখন নাকি সিনেমায় লগ্নী উঠে আসে না প্রযোজকদের। আমাদের সময়ে ১২০০ হল ছিল। এখন সেই সংখ্যা নাকি ৬০। এটা শুনে খারাপ লাগে।

আপনার পরে যারা অভিনয়ে এসেছে তাদের মধ্যে কোন নায়িকা আপনার উত্তসূরী বলে মনে করেন?

আমাদের পরে মৌসুমী শাবনূর এসেছে চলচ্চিত্রে। এরা দুজনই অভিনয় ভালো করে। পূর্ণিমা, পপি অভিনয়ে অনন্য। তাদের সবার সঙ্গেই পরিচয় আছে। এদের পর  অনেকেই ভালো কাজ করছে কিন্তু  তাদের নাম জানি না।

বেগম রোকেয়ার জীবনী নিয়ে তৈরি ছবিতে অভিনয় শুরু করেছিলেন। সেই কাজটা অনেকদিন থেমে আছে। এর কারণ কী?

বিভিন্ন কারণে ছবিটি শেষ হয়নি। সুভাষ দত্ত ছবিটা বানাচ্ছিলেন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শুটিংয়ের অনুমতি নেয়া হয়েছিল। তারপর তো আমি সিনেমা থেকেই বিদায় নিলাম। বিদেশে চলে আসলাম। সুভাষ দত্ত আমাকে বলতেন, আমার মুখের আদলটা বেগম রোকেয়ার সঙ্গে নাকি বেশি যায়। আমি দেশ ছেড়ে চলে আসার পর অন্য কাউকে নিয়ে ছবিটা শেষ করতে বলেছিলাম, পরিচালক রাজী ছিলেন না।

আপনার মধ্যে কি কোনো অপূর্ণতা কাজ করে কখনো?


একজন শাবানার কোনো অপূর্ণতা নেই। সবই পেয়েছি। অভিনয় করে দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছি। এখনও অনেক ভালোবাসা পাচ্ছি। সিনেমার সোনালি দিনের সাক্ষী। পরিবার পরিজন  নিয়ে সুখেই আছি। আমি চলে গেলে  মানুষ আমাকে হয়তো মনে রাখবেন এমন কিছু কাজ করেছি। কোনো অপূর্ণতা নেই আমার জীবনে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

7h ago