সব প্রতিকূলতা জিতে ফাইনালে বাংলাদেশ

Bangladesh Team
ফাইল ছবি: এএফপি

টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই চোটে পড়ে বাদ তামিম ইকবাল, পাকিস্তানের বিপক্ষে নামার আগে নেই সাকিব আল হাসানও। টপ অর্ডারদের ফর্মহীনতা, চোট সমস্যা, বিরূপ কন্ডিশন, সব মিলিয়ে অনেক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নামতে হয়েছিল বাংলাদশকে। পাঁজরের ব্যথা নিয়ে সেইসব প্রতিকূলতা জিতিয়েছেন মুশফিকুর রহিম, অধিনায়কত্বের দাপট আর তাতিতে দেওয়ার আগ্রাসণ নিয়ে জিতিয়েছেন মাশরাফি মর্তুজা। বাংলাদেশ প্রতিকূলতা জিতেছে মোস্তাফিজুর রহমান-মেহেদী হাসান মিরাজের নৈপুণ্যেও। 

বুধবার আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের করা ২৩৯ রানের জবাবে পাকিস্তান থেমেছে ৯ উইকেটে ২০২ রানে । ৩৭ রানে জিতে তাই টানা দ্বিতীয়বার এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। গত চার এশিয়া কাপের মধ্যে তিনবারই বাংলাদেশ উঠল ফাইনালে। ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে তিন ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার তিন বছর পরের দেখাতেও পাকিস্তানকে হারাল বাংলাদেশ।

খাদের কিনারে পড়ে যাওয়া দলকে ব্যাট হাতে আবারও তুলে এনেছিলেন মুশফিকুর রহিম, প্রথম ম্যাচের মতো যোগ্য সঙ্গত পেয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুনের কাছ থেকে। তবু দলের সংগ্রহটা ছিল না নিরাপদ। কেবল দারুণ বোলিং-ফিল্ডিং করলেই বদলানো যেত পরিস্থিতি। বাংলাদেশ করতে পেরেছে ঠিক সেটাই। বল হাতে মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমানরা দেখিয়েছেন ঝাঁজ। ফিল্ডিংয়ে অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজাই ক্ষিপ্রতায় তাতিয়ে দেন গোটা দলকে।

ফাইনালে উঠার ম্যাচে ব্যাট হাতে ৯৯ রান মুশফিকের, মিঠুন করেছেন  ৬০। তবে বল হাতে কাজের কাজটা করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান । ৪৩ রানে ৪  উইকেট নিয়েছেন তিনি। ১০ ওভার বল করে মাত্র ২৯ রানে ২ উইকেট মিরাজের।

২৩৯ রান ডিফেন্ড করতে হলে বোলারদেরই করতে হতো বিশেষ কিছু, ফিল্ডিংয়েও দেখাতে হতো আগুন। উইকেটের  দরকার ছিল শুরুতেই। সবই খাপে খাপে মিলেছে।  মেহেদী হাসান মিরাজ ইনিংসের প্রথম ওভারেই এনে দেন উইকেট। এই টুর্নামেন্টে রান না পাওয়া ওপেনার ফখর জামান চার মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড অনে। লাফ দিয়ে তা হাতে জমান রুবেল।

পরের ওভারেই মোস্তাফিজের বাজিমাত। বাবর আজমকে দারুণ এক ইনস্যুইংঙ্গারে কাবু করেন ১ রানেই। দুই চারে শুরু করা অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ মোস্তাফিজের পরের ওভারেই কাটারে পরাস্ত হয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

রান তাড়ায় ১৮ রানেই ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান।  ঠিক মুশফিক-মিঠুনের মতই সেখান থেকে প্রতিরোধ গড়েছিলেন শোয়েক মালিক ও ইমাম-উল হক। তবে তাদের জুটি অতদূর যায়নি। জুটি ভাঙার বড় অবদান বাংলাদেশ অধিনায়কেরই। রুবেলের বলে ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন মালিক , মিড উইকেটে ক্ষিপ্র লাফে সেই বল হাতে জমান মাশরাফি।

বিশেষজ্ঞ চার বোলার নিয়ে খেলায় অকেশনাল বোলারদের দিয়ে বাকি ১০ ওভার পূরণ করাতে হত মাশরাফিকে। দুই অকেশনাল বোলার সৌম্য সরকার আর মাহমুদউল্লাহ বিশেষজ্ঞ বোলারদের মতই দেখিয়েছেন নিজেদের মুন্সিয়ানা। অলরাউন্ডার শাদাব খানকে বাউন্সারে পরাস্ত করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান সৌম্য। তবে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত উইকেটটি নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।

ওপেনার ইমামের সঙ্গে জমে গিয়েছিলেন হার্ড হিটার আসিফ আলি। ঝুঁকি না নিয়ে দুজনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন লক্ষ্যের দিকে । তাদের জুটিতে পঞ্চাশ পেরুনোর পর মোস্তাফিজ দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই কুপোকাত করেছিলেন আসিফকে। তার এজ হওয়া বল উইকেটের পেছনে এক হাত দিয়ে ধরতে গিয়ে ফেলে দেন লিটন। ২২ রানে জীবন পাওয়া আসিফ কি খেলা পালটে দেবেন এমন শঙ্কা জমতেই মিরাজের বলে আসিফকে স্টাম্পিং করে ক্যাচ ফেলার ‘অপরাধ’ মুক্ত হয়েছেন লিটন। খানিক পর মাহমুদউল্লাহর ওই উইকেট। ইনিংস সর্বোচ্চ ৮৩ রান করা ইমামকে বেরিয়ে আসতে দেখে জোরের উপর বল দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ওই বল ধরে স্টাম্পিং করতে কোন ভুল করেননি লিটন। ১৬৭ রানেই পাকিস্তানের ৭ উইকেট নেই। তখনই আসলে ম্যাচ হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভয়াবহ। ম্যাচের ঠিক আগে সাকিব আল হাসানের ছিটকে পড়ার দুঃসংবাদ আরও ঘনীভূত করেছে টপ অর্ডার।

অন্যদের ব্যর্থতায় প্রায় এক বছর পর দলে ফিরেছিলেন সৌম্য সরকার। সুযোগ কাজে লাগাবেন কি, পুরনো রোগই সারাতে পারলেন না। জুনায়েদ খানের বলে পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ক্যাচ দিয়েছেন স্কয়ার লেগে। 

সাকিবের জায়গায় দলে আসা মুমিনুল হক নেমেছিলেন ওয়ানডাউনে। শাহিন আফ্রিদিকে মিড উইকেট দিয়ে দারুণ চারে শুরুর পরের বলেই ভেতরে ঢোকা বলে খুইয়েছেন স্টাম্প। বলটা ছিল দারুণ তবে আরেকটু দ্রুত সচল হলে হয়ত বাঁচতে পারতেন।

একই অবস্থা লিটন দাসের। জুনায়েদের ভেতরে ঢুকা বলে খেলতে গিয়েছিলেন মিড উইকেট দিয়ে। বলে লাইন মিস করে হয়েছেন বোল্ড।

১২ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর তখন খাদের কিনারে বাংলাদেশ। ওই অবস্থা থেকে ঠিক প্রথম ম্যাচের মতো দারুণ আরেক জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন মুশফিক ও মিঠুন। ১৪৪ রানের জুটিতে দুজনেই পাকিস্তানি বোলারদের সামলেছেন অনায়াসে। তাদের দাপটে মিলছিল বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত। কিন্তু প্রথম ম্যাচে শতরানে জুটির পর যেভাবে বাজে শটে থেমেছিলেন মিঠুন। এবার সেই একই পুনরাবৃত্তি। বোলার মালিঙ্গার জায়গায় হাসান আলি। ব্যাক অফ লেন্থের বলটা স্লগ করতে গিয়েছিলেন, টপ এজ হয়ে হাসানের হাতেই জমা পড়েছে তার ৬০ রানের ইনিংস।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে রশিদ খানকে সামলাতে ছয়ে নামানো হয়েছিল ইমরুল কায়েসকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে একই পরিকল্পনা করা হয় শাদাব খানকে ঘিরে। কিন্তু মুখোমুখি হওয়া শাদাবের প্রথম বলেই এলবডব্লিওর ফাঁদে পড়েন ইমরুল।

তখনই আসলে ফের বাঁক বদল বাংলাদেশের ইনিংসে। মুশফিক থাকায় তবু মিলছিল লড়াইয়ের আশা। নার্ভাস নাইটিজের শিকার হয়ে তিনি ফেরার পর চ্যালেঞ্জিং স্কোরের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। ভালো শুরুর পর জুনায়েদের বলে ২৫ রানেই বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ। এক ছক্কায় ঝড়ের আভাস দিয়েও মাশরাফি থেমেছেন ১৩ রানে। বাংলাদেশও তাই থেমে যায় ২৩৯ রানে।

ওই রান নিয়ে কীভাবে মহারণে জিততে হয় পরে তা দেখিয়েছেন বোলাররা।

২৮ সেপ্টেম্বর দুবাইতে ফাইনালে বাংলাদেশের অপেক্ষায় আছে ভারত।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২৩৯/১০ (৪৮.৫)  ( লিটন ৬, সৌম্য ০, মুমিনুল ৫,  মুশফিক ৯৯, মিঠুন ৬০,  ইমরুল ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৫, মিরাজ ১২, মাশরাফি ১৩, রুবেল ১, মোস্তাফিজ ০*   ; জুনায়েদ ৪/১৯, শাহিন ২/৪৭, হাসান ২/৬০, নাওয়াজ ০/৩৯, মালিক ০/১৪, শাদাব ১/৫২)

পাকিস্তান:  ২০২/৯   (৫০) (ফখর ১, ইমাম ৮৩, বাবর ১, সরফরাজ ১০,  মালিক ৩০ , শাদাব ৪, আসিফ ৩১ , নাওয়াজ ৮, হাসান ৮ , শাহিন ১৪* , জুনায়েদ ৩*  ;  মিরাজ ২/২৮,  মোস্তাফিজ ৪/৪৩, মাশরাফি ০/৩৩, রুবেল ১/৩৮, মাহমুদউল্লাহ ০/৩১, সৌম্য ১/১৯)

ফল: বাংলাদেশ ৩৭ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম 

Comments

The Daily Star  | English

Air ambulance carrying Hadi departs Dhaka for Singapore

Critically injured Dhaka-8 aspirant set for Singapore treatment after emergency government decision

1h ago