মাহফুজ আনামের কলাম

অধ্যাপক ইউনূস, জুলাই সনদ ও আমাদের ভবিষ্যৎ

অধ্যাপক ইউনূস, জুলাই সনদ ও আমাদের ভবিষ্যৎ
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

যখন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে রাজি হলেন, তখন বাংলাদেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। আমরা ভেবেছিলাম, সত্যিই আমরা সবচেয়ে যোগ্য মানুষটিকে পেয়েছি। হ্যাঁ, তার সরকারি কাজের সরাসরি অভিজ্ঞতা না থাকতে পারে, কিন্তু তিনি গ্রামীণ ব্যাংক গড়ে তুলেছেন। ড. ইউনূসের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানটিও নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। আমি এটি উল্লেখ করছি কারণ, কোনো প্রতিষ্ঠান নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মানে ওই প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ব্যবস্থা, স্থায়িত্ব ও নৈতিক কার্যক্রম অত্যন্ত মানসম্পন্ন এবং তারা কর্মচারী অধিকার রক্ষা ও অডিটসহ অন্যান্য নিয়মাবলী মেনে চলেছে।

এমন একটি প্রতিষ্ঠান দশকের পর দশক ধরে পরিচালনায় তিনি দক্ষ। তার প্রতিষ্ঠিত ৪০টিরও বেশি ব্যবসা ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে অসঙ্গতি, বিশেষ করে আর্থিক অনিয়ম খোঁজার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু ড. ইউনূস যথাযথভাবেই তার প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে গেছেন। সুতরাং এমন একজন মানুষের প্রতি আমাদের আস্থা রাখার বিষয়টি অবশ্যই যৌক্তিক।

তবে, গত ১৪ মাস ধরে তার সরকারের কাজকর্ম বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, সন্দেহ ও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

প্রথমেই বলতে হবে, তিনি ভালো একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে পারতেন এবং বড় ভুল হলো পরবর্তীতে উপদেষ্টা পরিষদে কোনো পরিবর্তন না করা। কেবল দুয়েকটি মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে দায়িত্ব অদল-বদল করা হয়েছে, তাও বিশেষ কারণে। সাধারণত যখন দায়িত্ব বেশি ও সময় কম থাকে, তখন সরকার প্রধানরা তাদের ক্যাবিনেটে রদবদল করে থাকেন।

তবুও, অধ্যাপক ইউনূস এখনো সরকার প্রধান হিসেবে গ্রহণযোগ্য, যদিও শুরুতে তার প্রতি যে পরিমাণ সমর্থন ও সহায়তা ছিল, তা এখন কমেছে।

সম্প্রতি তিনি গর্বের সঙ্গে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের ঘোষণা দিয়েছেন। এটি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের ফল, যা আমাদের নিপীড়নমূলক শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্ত করেছে। এই সনদে বাংলাদেশের জন্য নতুন দিশা থাকার কথা, যে বাংলাদেশে অধিকার, বৈষম্যহীনতা, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। তিনি এটিকে 'বর্বরতা থেকে সভ্যতায় উত্তরণ' হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার বক্তব্যে একাধিকবার এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু তিনি যদি 'বর্বরতার' সময়কাল নির্দিষ্ট করতেন, যেমন শেষ শাসনকাল, তাহলে তার বক্তব্যের অর্থ স্পষ্ট হতো। এখন যেভাবে বলা হয়েছে, তাতে মনে হতে পারে, স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরই 'বর্বরতার' মধ্যে কেটেছে।

কোনো গর্বিত বাংলাদেশি কি এটি মেনে নিতে পারবে? আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও পুরো সময়কালের সাক্ষী হিসেবে এমন নিন্দা মেনে নিতে পারি না। এটি আমাদের কেমন মানুষ হিসেবে দেখায়? বিশ্বে আমাদের সম্পর্কে কী ধারণা তৈরি করে? হ্যাঁ, আমাদের কিছু ব্যর্থতা আছে, কিন্তু আমরা কি সত্যিই 'বর্বর' ছিলাম?

তার বক্তব্যে তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, আমরাও তাদের শ্রদ্ধা জানাই এবং ভবিষ্যতেও জানাব। তিনি বলেছেন, 'তরুণরা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বকেও নেতৃত্ব দেবে'। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর ১৫ মাস পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে আমরা কি আমাদের জন্য কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি? বিশ্বের কথা বাদই দিলাম! এখনো শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ ও ন্যায্য নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ আছে, যা গণতন্ত্রের মূল শর্ত।

বাংলাদেশের তরুণরা কীভাবে কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও বিশ্বের জন্য তারা কী করবে—জুলাই সনদের মাধ্যমে তা জানা যায় বলে উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক ইউনূস। তবে আশ্চর্যজনকভাবে জুলাই সনদে তরুণদের বিশেষ ও জরুরি চাহিদা নিয়ে কোনো সুপারিশ নেই, যেমন: শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, নেতৃত্বের দক্ষতা, ভালো চাকরির সুযোগ ইত্যাদি। এমনকি তাদের আন্দোলনের মূল কারণ ছিল চাকরিতে কোটা সমস্যা, সেটিও উহ্যই রয়ে গেছে।

জুলাই সনদে দারিদ্র্য দূরীকরণের কোনো সুপারিশ নেই। দারিদ্র্যকে গুরুত্ব না দিয়ে বাংলাদেশ ভবিষ্যতের স্বপ্ন গড়তে পারে? দারিদ্র্য, কৃষক ও বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকশ্রেণির সমস্যা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত ৮৪টি সুপারিশে একবারও উল্লেখ করা হয়নি। আবারও দেখা গেল, রাষ্ট্রের এই বিশাল জনগোষ্ঠী সরকারের মনোযোগ পায়নি, কারণ তারা ক্ষমতার বলয়ে এখনো জায়গা করতে পারেনি।

আরও বিস্ময়কর হলো, বাংলাদেশ যে দ্রুত জলবায়ু সংকটের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, যা পুরো বিশ্বকে গ্রাস করছে এবং বাংলাদেশ তার সামনের সারিতে আছে তা জুলাই সনদে উল্লেখ নেই। আমাদের উপকূলীয় এলাকার কোটি মানুষ ইতোমধ্যে জীবন-জীবিকা নিয়ে বড় সমস্যার মুখোমুখি। নদীর পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি মিঠা পানির মাছ ধ্বংস করছে এবং ফসল উৎপাদনে সমস্যা তৈরি করছে। আর ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হওয়ায় সুপেয় পানির সংকট তৈরি হয়েছে। অথচ আমাদের ভবিষ্যতের 'ভিশন'-এ এই গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো কোনো জায়গা পায়নি।

এ ছাড়াও, জুলাই সনদের নারী উন্নয়নের কোনো সুপারিশ নেই, যারা আমাদের জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ। আমরা কি সত্যিই গণতন্ত্র গড়ার আশা করতে পারি? এটা অবাক করার মতো, কারণ এটি এমন একজন ব্যক্তি থেকে এসেছে যিনি মাইক্রোক্রেডিট কর্মসূচি দিয়ে বিশ্বখ্যাতি পেয়েছেন এবং যার নারীকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের নারীদের ওপর একক মনোযোগ আমাদের গ্রামীণ সমাজে পরিবর্তন এনেছিল, এজন্য অধ্যাপক ইউনূসের কৃতিত্ব আছে। অথচ এখন তার সরকারের জুলাই সনদে নারীরা উপেক্ষিত! তিনি এমন একটি সংস্কার প্রক্রিয়াকে কীভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেন, যেখানে নারীদের উপেক্ষা করা হয়েছে?

এরপর আছে তার 'থ্রি জিরো' বা 'তিন শূন্য' তত্ত্ব, যা খুবই অনুপ্রেরণামূলক, বিস্তৃত, ভবিষ্যৎকেন্দ্রিক ও অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেছেন, বিশ্বের উচিত এই একটি নীতি গ্রহণ করা যেখানে থাকবে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণ। এই তিনটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি তার সব লেখা পড়েছি। তাকে নিয়ে গর্ব হয়েছে। মনে হয়েছে পুরো বিশ্ব যেন তার কথা শোনে।

কিন্তু এখন তিনি জুলাই সনদ ঘোষণা করেছেন, যেখানে এই জরুরি ও মানবতার অস্তিত্ব সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর প্রতিফলন নেই। হয়তো আমাদের জন্য শূন্য কার্বন নিঃসরণের দিকে যাওয়া এখনই সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা কি শূন্য দারিদ্র্য ও শূন্য বেকারত্বের দিকে যেতে পারব না? এগুলো না উল্লেখ করার মানে হলো, এগুলো আমাদের ভিশনে নেই এবং আমাদের লক্ষ্যেও নেই।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন হয়তো বলবে, উপরোক্ত বিষয়গুলো জুলাই সনদে নেই, কারণ এগুলো তাদের 'টার্মস অব রেফারেন্স' বা দায়িত্বের মধ্যে ছিল না, অর্থাৎ এগুলো তাদের আলোচনার বিষয় ছিল না। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার অন্তত ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল, কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কেবল পাঁচটি কমিশনের নির্বাচিত সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শেয়ার করেছিল তাদের মতামত ও সম্মতি নেওয়ার জন্য। এগুলো হলো—সংবিধান সংস্কার কমিশন থেকে ৭০টি সুপারিশ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন থেকে ২৭টি সুপারিশ, বিচার ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন থেকে ২৩টি সুপারিশ, দুদক সংস্কার কমিশন থেকে ২৭টি সুপারিশ এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন থেকে ২৬টি সুপারিশ।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সরাসরি সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল, কারণ সব সুপারিশ প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য। তবে আশ্চর্যজনকভাবে পুলিশ সংস্কারে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যেটি মানুষ সবচেয়ে বেশি চেয়েছিল। কারণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পুলিশ জড়িত। সম্প্রতি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৮ মাস ধরে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে, যার মধ্যে দুইটি জোটও ছিল, এসবের নেতৃত্বে ছিলেন পুরুষরা। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদলেও নারীর উপস্থিতি প্রায় ছিল না, কেবল এক বা দুটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল। ঐকমত্য কমিশন নারীদের জন্য বিশেষ একটি অধিবেশনের আয়োজন করতে পারত। কারণ দেশের নাগরিক হিসেবে তাদেরও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনের এই প্রক্রিয়ায় মত প্রকাশের অধিকার আছে।

ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছাড়া অন্যান্য কমিশনের সহজে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশের তালিকা আলাদাভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এটি করা হয়েছিল, অর্থাৎ সাত মাসেরও বেশি সময় আগে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এই সুপারিশগুলো নিয়ে কোনো কাজ হয়নি কেন? এ ধরনের প্রশ্ন তোলা হলে তাদের খুব সাধারণ উত্তর থাকে, 'আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি'। অথচ সংশ্লিষ্ট কমিশনের সদস্যরাও জানেন না এই সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন অবস্থা কী, সংবাদমাধ্যম বা সাধারণ মানুষের কথা না হয় বাদই দিলাম। এতদিন উপদেষ্টারা কী করছিলেন? এটি কি অন্তর্বর্তী সরকারের নিজের ঘোষিত লক্ষ্যগুলোর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা নয়? যেখানে সরকার সব সময় সংস্কারের কথা বলছে, তখন কি এই প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক হবে যে, তারা কি সত্যিই সংস্কারের প্রতি আগ্রহী?

আমরা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে একমত যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৮৪টি বিষয়ে সম্মতিতে পৌঁছানো সহজ কাজ নয়। কারণ সেখানে বিভিন্ন দিক ও বিষয় পরিবর্তনের বিষয় থাকে। তাই এই অর্জনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন আন্তরিক প্রশংসার যোগ্য। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় সব সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় জনসাধারণের আস্থা কমেছে। অবশ্য গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আলাদা সচিবালয় গঠনের নীতিগত অনুমোদন একটি ইতিবাচক উদ্যোগ।

এদিকে, আমরা ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলের মধ্যে কিছু উদ্বেগজনক ঘটনার লক্ষণ দেখছি, যা জনসাধারণের কমে আসা আস্থা আরও কমাতে পারে। গত বুধবার পর্যন্ত বিএনপি দাবি করেছে নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী প্রশাসনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে, এনসিপি চায় নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হোক এবং জামায়াত দাবি করেছে, প্রশাসনিক কর্মচারীদের সম্পূর্ণ পরিবর্তন করা হোক, কারণ তাদের মতে প্রশাসনে এখন পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তারা আছেন।

আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, ৮৪টি সুপারিশের মধ্যে ৪০টির ওপর সব রাজনৈতিক দলের পূর্ণ সম্মতি রয়েছে, যেগুলো প্রশাসনিক আদেশ বা অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য। তাই আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, আর সময় নষ্ট না করে, সম্পূর্ণ ও স্পষ্ট সম্মতি পাওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করার। এতে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে, অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে কিছু সংস্কার সত্যিই সম্ভব হয়েছে।

একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের ভবিষ্যতের ভিশনে দারিদ্র্য, নারী, তরুণ-যুবক ও পরিবেশকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের তরুণ ও যুবকদের জন্য একটি স্পষ্ট, চিহ্নিত এবং সহজে বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক, প্রফেসর ইউনূস যেমন বলেন, তারা আমাদের ভবিষ্যৎ। কথার বাইরে গিয়ে আমাদেরকে প্রায়োগিক পদক্ষেপে যেতে হবে।

আমরা চাই বা না চাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আমাদের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে, যা ইতোমধ্যে বিশ্বজয় করছে এবং সীমিতভাবে বাংলাদেশেও ব্যবহার হচ্ছে, যা প্রতিনিয়ত দ্রুত হারে বাড়ছে। পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে আমাদের শিক্ষার মান আরও উন্নত করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা শিক্ষার মানে থাকা ফাঁক পূরণ করতে পারি। স্বশিক্ষিত দক্ষ কর্মীরা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করছে, যা দেশের জন্য বড় আয়ের উৎস হতে পারে। দুঃখজনকভাবে, আমরা যে সংস্কারের জন্য লড়াই করছি তা ভূত ও বর্তমানের দিকে মনোযোগ দেয়, কিন্তু ভবিষ্যতের দ্রুত পরিবর্তনশীল বাস্তবতা, যা আমাদের বিশ্বকে পুরোপুরি বদলে দেবে, তা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই।

আমাদের আকাঙ্ক্ষা নতুন বাংলাদেশ গড়ার, তাই আমাদেরকে বৃহত্তর দিক থেকে চিন্তা করতে হবে এবং শুধু পুরোনো কাঠামো সংস্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। একদিকে ঘৃণা ও অন্যদিকে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে নিজেদের ভাসালে চলবে না। বাগ্মিতা কোনো জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যায় না। কিন্তু নম্রতা জাতিকে এগিয়ে নেয়। প্রথমটি এমন একটি ফাঁদ যা আমাদের বাস্তবতার কাছে অন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে দ্বিতীয়টি আমাদের অযোগ্যতা এবং জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব নিয়ে সচেতন হতে সহায়তা করে এবং কাজের বিশালতা বুঝতে সাহায্য করে। আমাদের এমন অনেক বৈশিষ্ট্য আছে যেখানে নিজেদের আত্মপরীক্ষার প্রয়োজন, যদিও আমরা এটা পছন্দ করি না। আমরা সব ভুলের জন্য অন্যকে দোষারোপ করতে পছন্দ করি এবং নিজেদের কোনো ভুল স্বীকার করি না। তাই এখান থেকেই প্রকৃত সংস্কার শুরু হওয়া উচিত।

মাহফুজ আনাম: সম্পাদক ও প্রকাশক, দ্য ডেইলি স্টার

Comments

The Daily Star  | English

Fire at building in Mirpur’s Kalshi under control

Seven fire engines brought the fire under control at 12:05am today

2h ago