‘শুধু ফাইনালের হার নয়, ইতিবাচক দিকগুলোও দেখা উচিত’

David Hemp

বহুদলীয় ট্রফির দৌড়ে আবারও নিজেদের হতাশ করল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপ রাইজিং স্টার্সের ফাইনালে গত রোববার কাতারের দোহায় পাকিস্তান শাহিনসের কাছে সুপার ওভারে হেরে যায় আকবর আলির দল। তবুও দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স ও পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে যাত্রা নিয়ে ইতিবাচক ছিলেন বাংলাদেশের 'এ' দলের প্রধান কোচ ডেভিড হেম্প। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপচারিতায় টুর্নামেন্টের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

রোববারের শেষটা নিশ্চয়ই হতাশাজনক ছিল আপনার জন্য। পুরো অভিযাত্রাকে কীভাবে বর্ণনা করবেন?

ডেভিড হেম্প: ফাইনালে ওঠাটা ছেলেদের দারুণ অর্জন ছিল। অবশ্যই, ম্যাচ জিতে শেষ করতে না পারা হতাশার। সুপার ওভারে হার সবসময়ই কষ্টের। বল হাতে আমরা নিজেদের ভালো অবস্থানে রেখেছিলাম, কিন্তু ব্যাটিংয়ে কয়েকটি সফট ডিসমিসাল আমাদের বিপদে ফেলেছে। তারপরও, পুরো টুর্নামেন্টে আমরা দারুণ ক্রিকেট খেলেছি—ইতিবাচক ক্রিকেট। বেশ কিছু ভালো দলকে হারিয়ে আমরা ফাইনালে উঠেছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রোববার আমরা পুরোপুরি নিখুঁত পারফরম্যান্স দিতে পারিনি।

কঠিন গ্রুপে থেকেও নকআউটে উঠেছেন। কয়েকজনের পারফরম্যান্সও ভালো—হাবিবুর রহমান সোহান রান তালিকায় তৃতীয় এবং রিপন মন্ডল ১১ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। এ পারফরম্যান্সগুলোকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

হেম্প: সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো—বাংলাদেশ ক্রিকেট কাঠামো থেকে বেশ দক্ষ কিছু খেলোয়াড় উঠে আসছে। তাদের শুধু আরও বেশি এক্সপোজারের দরকার, আর এমন টুর্নামেন্টগুলো এর জন্য আদর্শ। রিপন ও সোহান দারুণ খেলেছে, কিন্তু আরও অনেকেই মূল্যবান অবদান রেখেছে। আকবর আলী দারুণভাবে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ইতিবাচক দিক অনেক। সেমিফাইনালে আমরা ভারতকে হারিয়েছি—যারা খুব শক্তিশালী দল এবং অভিজ্ঞ, আইপিএলের খেলোয়াড়ও আছে। আমরা আফগানিস্তানকেও হারিয়েছি, যারা গতবারের চ্যাম্পিয়ন। তাই বাংলাদেশকে শুধু ফাইনালের হার দেখে নয়, এই সব ইতিবাচক দিকগুলোও গুরুত্ব দিতে হবে।

আব্দুল গাফ্ফার সাকলাইনকে কীভাবে দেখছেন? টুর্নামেন্টজুড়ে ভালো খেলেছে।

হেম্প: এটি ছিল প্রথমবার তার দেশের বাইরে খেলা, এবং আমরা অনেক সময়ই খুব তাড়াতাড়ি খেলোয়াড়দের সমালোচনা করি। সে সত্যিকারের দক্ষতা দেখিয়েছে এবং এই পর্যায়ে খেলার সামর্থ্য প্রমাণ করেছে। সে স্মার্ট ক্রিকেটার, বল হাতে তার বৈচিত্র্য ভালো, আর গতকাল [রোববার] ব্যাট হাতেও প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছে। তার আরও সময়, বিনিয়োগ ও সুযোগ প্রয়োজন—বিশেষ করে 'এ' দল পর্যায়ে—যাতে সে এগিয়ে যেতে পারে। আরও কয়েকজনেই এ প্রয়োজন আছে।

ফাইনালে সুপার ওভারে কেন তাকে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানদের আগে পাঠানো হলো?

হেম্প: ঠিক তার আগেই সে টানা দুটি ছক্কা মেরেছিল এবং চাপের মুহূর্তে দারুণ স্বাচ্ছন্দ্য দেখিয়েছে, যখন আমাদের ২৫ বা ২৬ রান প্রয়োজন ছিল। তার শট নির্বাচন চমৎকার ছিল, সে শান্ত থেকেছে। সে বল দুর্দান্তভাবে মারছিল—এ কারণেই তাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।

রিপন মন্ডলের পারফরম্যান্সকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

হেম্প: তার প্রায় ৯৫ শতাংশ স্পেলই ছিল অসাধারণ। সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সে স্মার্ট ছিল এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—সে তার সিদ্ধান্তগুলো দারুণভাবে প্রয়োগ করেছে। এখানেই তার ধারাবাহিকতা বেড়েছে—ভালো পরিকল্পনা করা এবং সেটা বাস্তবায়ন করা। শুধু উইকেট নেওয়াই নয়, সে এমনভাবে বল করেছে যা চাপ তৈরি করেছে ও সুযোগ এনে দিয়েছে। তার পারফরম্যান্সে সে গর্ব করতে পারে।

গত মাসের আগে বাংলাদেশ কখনো পুরুষ ক্রিকেটে সুপার ওভারে খেলেনি, আর এখন তিনটি খেলেছে—ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরে একটি, আর রাইজিং স্টার্সে টানা দুটি। এই পরিস্থিতিতে কি এখনও মানসিক দৃঢ়তার অভাব আছে?

হেম্প: বিশ্বজুড়ে সুপার ওভার এখন অনেক সাধারণ হয়ে গেছে। সেরা খেলোয়াড় ও দলগুলো শান্ত থাকে এবং পরিষ্কারভাবে জানে তারা কী করতে চায়—এমনকি সুপার ওভারেও। কেউ কেউ আলোড়িত হয়ে নিজেদের প্রক্রিয়া থেকে সরে যায়। আরেকটি সমাধান হলো—অবশ্যই অনুশীলন। এইচপি–তে আমরা সুপার ওভার পরিস্থিতি অনুশীলন করি, কিন্তু সার্বিকভাবে এটা যথেষ্ট অনুশীলন করা হয় না। টি২০ ক্রিকেট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দলগুলোকে জানতে হবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা কারা এসব পরিস্থিতিতে। শেষ ওভারে ১২ রান তাড়া করাও আসলে সুপার ওভারে ১২ রানের মতোই—এটা মানসিকতার বিষয়। অতিরিক্ত চাপের অনুভূতি ক্ষতি করে, কিন্তু এসব পরিস্থিতির অনুশীলন করলে খেলোয়াড়রা আরও শান্ত থাকতে শিখবে।

এই টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশ কী নিতে পারে?

হেম্প: এ বছর নির্বাচিত খেলোয়াড়রা দেখিয়েছে—তারা খুবই শক্তিশালী আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। এখন প্রয়োজন যত বেশি সম্ভব এ পর্যায়ের এক্সপোজার—যদিও বাজেট সীমাবদ্ধতা আছে। নির্বাচকদের উচিত উঠে আসা খেলোয়াড়দের দিকে তাকানো এবং বোঝা যে অনেকেই ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের নাম সামনে তুলে ধরেছে। যত বেশি প্রতিযোগিতা তৈরি হবে—এ ধরনের উচ্চমানের ক্রিকেটে খেলিয়ে—নির্বাচকদের কাজ তত সহজ হবে। আপনি চান খেলোয়াড়রা জাতীয় দলে ঢোকার আগেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হোক, জাতীয় দলে ঢুকে শিখতে শিখতে নয়। আদর্শভাবে, 'এ' দল পর্যায়ে পরীক্ষিত হয়েই তারা জাতীয় দলে আসবে।

Comments

The Daily Star  | English
Sharif Osman Hadi dies in Singapore

Sharif Osman Hadi no more

Inqilab Moncho spokesperson dies in Singapore hospital

14h ago