রিশাদের বলে বোল্ড হয়ে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন শামসুর
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ার শেষে অবসর নিয়েছেন শামসুর রহমান শুভ। ২৭তম জাতীয় ক্রিকেট লিগ শেষে পেশাদার ক্যারিয়ারে চলার পথ থামিয়েছেন তিনি। অথচ এই মৌসুমে অবসরের পরিকল্পনা ছিলো না তার। প্রথম শ্রেণীতে দশ হাজার রানের খুব কাছে (৯,৬০২ রান) ছিলেন শামসুর। কিন্তু রিশাদ হোসেনের বলে এক ম্যাচে বোল্ড হওয়ার পর বুঝে ফেলেন এখানেই থামতে হবে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ার ও বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের এই অভিজ্ঞ মুখ।
১০ হাজার রানের এত কাছাকাছি থাকতে—কোন কারণে লক্ষ্য পূরণের আগেই অবসর নিলেন?
শামসুর: কোনো ব্যাটসম্যান কোনো কারণ ছাড়া কোনো মাইলফলকের এত কাছে থেকে অবসর নেয় না। এ বছর আমার ব্যাটিং ভালো যাচ্ছিল না, এবং আমি প্রয়োজনীয় সহায়তাও পাচ্ছিলাম না—মানে মানসিক সতেজতা। তাই মনে হলো সরে যাওয়ার এটাই সেরা সময়, যাতে জুনিয়ররা সুযোগ পেতে পারে। জুনিয়ররা খেললে আমি ভালোই অনুভব করব।
এতদিন ঢাকা বিভাগের হয়ে খেলে এবার বরিশালের হয়ে অবসর নেওয়াটা কি মনে কষ্ট দিয়েছে?
শামসুর: আমি ১৭ বছর ঢাকার হয়ে খেলেছি—ঢাকা মেট্রো এবং ঢাকা বিভাগ মিলিয়ে। যখন এমন প্রতিষ্ঠিত দলে সুযোগ থাকে না, আর একজন ক্রিকেটার হিসেবে অন্য দলে সুযোগ পাই, তখন অবশ্যই খারাপ লাগে যে নিজের বিভাগ থেকেই অবসর নিতে পারলাম না।
আগে থেকেই ঠিক করেছিলেন যে এই মৌসুমেই অবসর নেবেন?
শামসুর: না, আগে থেকে নিতেই পারিনি। মাঠেই এ বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ কী ছিল?
শামসুর: প্রথমত মনে হয়েছে আমার ভালো সময়টা পেরিয়ে গেছে। দ্বিতীয় ঘটনা হলো বগুড়ায় রিশাদের বল আমি যেভাবে বোল্ড হলাম। ব্যাকফুটে ডিফেন্স করেছিলাম, বল সরাসরি মাটিতে পড়ার পর বোল্ড হয়ে গেলাম—আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম এবং মনে হচ্ছিল এটা হয়তো আমার কাছে সংকেত যে—এবারই সরে দাঁড়ানোর সময়।
গত ২০ বছরে ঘরোয়া ক্রিকেটে কী পরিবর্তন দেখেছেন?
শামসুর: আমি বলব না যে খুব বেশি পরিবর্তন হয়েছে। আমরা প্রতি মৌসুমের আগে অনেক হাইপ তৈরি করি, কিন্তু নতুন কিছু হয় না। ম্যাচ ফি বাড়া, ডিএ বাড়া, ভালো হোটেলে থাকা, ফ্লাইটে যাতায়াত—এগুলো উন্নতি হয়েছে, কিন্তু মাঠের মান বা খেলার অন্যান্য দিক—যেখানে আরও উন্নতি হওয়ার কথা, সেগুলো হয়নি। টেস্ট খেলছে এমন দেশের জন্য ২৫ বছরে এসব জায়গায় উন্নতি হওয়া উচিত ছিল।
এই স্থবিরতার কারণ কী?
শামসুর: আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। আমরা দেশের ক্রিকেটকে কোথায় দেখতে চাই, কোথায় নিতে চাই—এই চিন্তা না থাকলে কিছুই বদলাবে না।
২০১৩-১৪ সালের পর আর জাতীয় দলে ডাক না পাওয়া কি হতাশ করেছে?
শামসুর: জানি না কেন হয়েছে, তবে একজন ক্রিকেটারের জন্য জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে কোনো প্রোগ্রামেও না থাকা খুব কষ্টের। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি ভালোই খেলেছি, ওয়ানডে বা চার দিনের ফরম্যাট—সব জায়গায়। তারপরও আর ডাক পাইনি। কষ্ট হয়, কিন্তু এখন আর ভাবি না। লিস্ট 'এ' ক্রিকেট খেলব, এবং আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তাতেই আমি সন্তুষ্ট।
ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সন্তোষজনক দিক কোনটি? কোনো আফসোস আছে?
শামসুর: সবচেয়ে বড় অর্জন হলো টেস্ট খেলা, এবং বাংলাদেশের হয়ে তিন ফরম্যাটেই খেলা। জীবনের কঠোর পরিশ্রমের যদি কোনো ফল থাকে, তবে সেটাই—বাংলাদেশের হয়ে তিন ফরম্যাটে মাঠে নামতে পেরেছি। লাল বলের ক্রিকেট সবসময় আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল—সুতরাং এই ফরম্যাটে খেলা আমার ক্যারিয়ারের দুই বড় অর্জনের একটি। আর কোনো আফসোস নেই।
সামনে পরিকল্পনা কী?
শামসুর: খুব বেশি দিন খেলব না। সর্বোচ্চ এই বছর খেলব এবং তারপর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট থেকে অবসর। ছোটবেলা থেকে খেলছি, তাই ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকতেই চাই। যদি বিসিবি আমাকে কোনোভাবে দেশসেবার সুযোগ দেয়, তাহলে সত্যিই গর্ব অনুভব করব।


Comments