ফিরে দেখা ২০২৪

টেস্টে অঘটন আর অ্যাওয়ে জয়ের রেকর্ডে স্মরণীয় বছর

New Zealand cricket

বিদেশের মাটিতে জয় সবসময়ই কঠিন। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চাদরে যখন প্রত্যেক ম্যাচকে নিয়ে আসা হলো, তখন তা আরও কঠিন হবে বলেই ধারণা করা হয়েছিল। এমনিতেই স্বাগতিকরা মনের মতো পিচ তৈরি করতে পারে। পয়েন্টের জন্য আরও বেশি করে নিজেদের মানানসই বাইশ গজ যে প্রস্তুত করা হবে, সেটা অনুমান করা স্বাভাবিক।

তবে টেস্টের বৈশ্বিক আসর শুরু হওয়ার পর দেখা গেল, বিদেশে গিয়ে দলগুলোর জয়ের পরিমাণ বাড়ছে। এমনকি ২০২৪ সালে রীতিমতো অ্যাওয়ে জয়ের রেকর্ড হয়েছে। এই বছর প্রতিপক্ষের ডেরায় গিয়ে ২১ বার জিতেছে সফরকারী দল। টেস্টের দীর্ঘ ইতিহাস আর কোন বছরে বিদেশে এত জয় দেখেনি।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে একটি জয়ে অর্জিত পয়েন্ট যখন তিনটি ড্র করার সমান, দলগুলো পূর্ণ ১২ পয়েন্টে চোখ রেখেছে। বাজবল ঘরানায় ইংল্যান্ডের সমীকরণে তো বলতে গেলে ড্র বলে কিছুই নেই। তাদের একেবারে শেষ চাওয়া এই ফল। তবে ২০২৪ সালে বাকি সব দলগুলোকেও ড্রয়ে সন্তুষ্ট হতে হয়নি সেভাবে।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দলগুলোর খেলা ৫০ ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটি ড্র হয়েছে। সে দুটি ম্যাচেও বৃষ্টির বাগড়া না থাকলে বিজয়ী বের হয়ে আসত। যেসব বছরে অন্তত দশটি টেস্ট খেলা হয়েছে, তাতে সবচেয়ে কম ড্র হয়েছে ২০২৪ সালেই।

অতি বোলিং সহায়ক কন্ডিশন কোয়ালিটির পরীক্ষা সেভাবে নেয় কিনা এই প্রশ্ন আছে। যেকোন দলেরই জয়ের সম্ভাবনা তাই বেড়ে যায়। আবার জয় হাসিল করতে অনেক সময় স্বাগতিকরা বোলিংবান্ধব পিচ তৈরি করে উল্টো বিপদ ডেকে এনেছেন। মোটাদাগে বলা যায়, সাদা পোশাকে ২০২৪ সালে ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন বোলাররা।

বছরটিতে বোলিং গড় ছিল ২৮.৫৪। যা একুশ শতাব্দীতে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। ব্যাটাররা প্রতি উইকেট খুইয়েছেন গড়ে ৪৯ বলে। এত কম স্ট্রাইক রেট গত বিশ বছরের কোনটিতে দেখা যায়নি। সবচেয়ে কম বলে ফল আসতেও দেখা গেছে ২০২৪ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের জেতা ম্যাচে সর্বসাকুল্যে খেলা হয়েছে মাত্র ১০৭ ওভার।

বিদেশ সফরে যথেষ্ট স্পোর্টিং উইকেটও দেখা গেছে। বাইশ গজে দারুণ সব পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন সফরকারী ক্রিকেটাররা। জানুয়ারিতে শামার জোসেফের অজিবধের স্পেল মনে আছে তো? এরপর যা ঐতিহাসিক জয় ও অঘটন হয়েছে, সেসবের ভার এতটাই যে স্মৃতির কুটিরে জোসেফ বীরত্ব কিছুটা চাপা পড়েও যেতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে জয়ের দৃশ্য দেখার বিশ বছর হয়ে গিয়েছিল ক্যারিবিয়ানদের। জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া সফরে জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে পা রাখছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সে কথা বলার সাহস কেউ করতেন না। ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের দল অবিশ্বাস্যভাবে অজিদের হারিয়ে দেয় ৮ রানে। সেটিও কোথায়? স্বাগতিকদের দুর্গ গ্যাবায়! অবশ্য এর আগেই ২০২১ সালে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে ব্রিসবেনের মাঠটিতে অস্ট্রেলিয়ার অপরাজেয় থাকার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল ভারত।

টেস্টে ঘরের মাঠে ভারতকে হারানো বর্তমান ক্রিকেটবিশ্বের সবার উপরে থাকা চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি। যে নিউজিল্যান্ড ১৯৮৮ সালের পর থেকে দেশটিতে একটি জয়ের অপেক্ষায়, সেই কিউইরা একে একে তিনটি ম্যাচ হারিয়ে দিবে রোহিত শর্মার দলকে, তা কে ভেবেছিল! ঘরের মাঠে কমপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ভারত, প্রথমবার এমন দৃশ্য দেখতে হয়েছিল ভারতীয়দের।

বাংলাদেশের পাকিস্তানে গিয়ে জিতে যাওয়াই তো বড় ঘটনা। আর ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে যাওয়াকে শুধু চমক বলে অ্যাখা দেওয়া যায়! এদিকে বাংলাদেশে এসে দশ বছর পর এশিয়ার মাটিতে জয়ের তৃষ্ণা যেমন মেটায় দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১৪ সালের পর এই অঞ্চলে প্রথম টেস্ট সিরিজও জিতে যায় প্রোটিয়ারা।

বাজবল ব্র্যান্ডে অন্য ধাঁচের ক্রিকেট খেলা ইংল্যান্ডকে তাদের ঘরে শ্রীলঙ্কার হারিয়ে দেওয়াও কম চমকপ্রদ নয়। দ্য ওভালের জয়টি ছিল ইংলিশদের মাটিতে গত দশ বছরে লঙ্কানদের প্রথম। ভারতকে হারানোর আত্মবিশ্বাস নিয়ে ডিসেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে যখন খেলতে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড, তখন কিউইদের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা ঘিরেও কথাবার্তা চলেছে। কিন্তু ২-১ ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডের সিরিজ হারের মাধ্যমে আরেকটি অপেক্ষার অবসান হতে দেখা যায়। তাসমান পাড়ের দেশটিতে ২০০৮ সালের পর প্রথমবার লাল বলের সিরিজ জিতে ইংলিশরা।

একদা প্রায় অকল্পনীয়ই ছিল, এমন এক ঘটনার মাধ্যমে মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখেছে ২০২৪। এসএ টোয়েন্টির দলে জায়গা হয়নি যাদের, ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে তাদের পাঠিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের প্রথম পছন্দের দল থেকে কেউ যাননি। ক্রিকেটারদের প্রাধান্যের বেড়াজালে আটকে নয়, বোর্ডের অগ্রাধিকার তালিকায় টেস্টের আগে ছিল নিজেদের টি-টোয়েন্টি লিগ। ক্রিকেটের বর্তমান বাস্তবতা বোঝাতে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ আর হয় না!

ফ্র‍্যাঞ্চাইজি দুনিয়ার ডামাডোলে টেস্টের ভবিষ্যত নিয়ে যখন নানান জল্পনা-কল্পনা, ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণটি পার করেছে স্মরণীয় এক বছর।

Comments

The Daily Star  | English

Victory day today: A nation born out of blood and grit

The tide of war had turned by mid-December in 1971. The promise of freedom was no longer a dream. It had hardened into tangible certainty.

7h ago