সময় ঘনিয়ে এলেও সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই বিসিবি নির্বাচনের

গত ১৪ জুলাই, পল্টনে অনুষ্ঠিত ৩৯তম জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আসন্ন নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।

সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার ফারুক আহমেদের স্থলাভিষিক্ত আমিনুল গত ৩০ মে বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো নির্বাচনের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন।

এর আগে ২৭ জুন, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও অনুরূপ আশাবাদ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, বিসিবি সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে এবং এখন পর্যন্ত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন অক্টোবরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

প্রশাসনিক দিক থেকে গত এক বছর ধরে বিসিবিতে অস্থিরতা চলছে—এই সময়ে তিনজন ভিন্ন ব্যক্তি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, যা বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই অস্থিরতা নিরসনের সেরা উপায় হতে পারে একটি নতুন নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে স্থিতিশীল নেতৃত্ব নিশ্চিত করা।

তবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হতে তিন মাসেরও কম সময় বাকি থাকলেও নির্বাচন নিয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

বর্তমান বিসিবি পরিচালক, কর্মকর্তাসহ সম্ভাব্য কাউন্সিলর ও নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিরা এখনো অন্ধকারে, নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ বা তা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী হবে নাকি সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী হবে, সে বিষয়েও পরিষ্কার কোনো তথ্য নেই।

বিসিবির সংবিধান কী বলছে

বিসিবির সংবিধানের ১৫.১ ধারা অনুযায়ী, নির্বাহী কমিটির মেয়াদ হবে প্রথম সভার দিন থেকে চার বছর। ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর সর্বশেষ বিসিবি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং পরদিন প্রথম সভা হয়। সুতরাং, সংবিধান অনুযায়ী, আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যেই পরবর্তী নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

একই সঙ্গে, নির্বাচন শুরুর কমপক্ষে ৩০ দিন আগে বিসিবি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতির নির্দেশে কাউন্সিলর মনোনয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের অবহিত করবেন, সংবিধানের ৯.১, ৯.২ ও ৯.৩ ধারা অনুযায়ী।

সংবিধানের ১৯ ধারা ও পঞ্চম অধ্যায় অনুসারে, নির্বাহী কমিটির গঠিত নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত বিধিমালা প্রণয়ন, সময়সূচি ঘোষণা, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত ও নির্বাচন পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবে।

যদিও অনেকে মনে করছেন, বিসিবি নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি অ্যাড-হক কমিটি গঠন করতে পারে, তবে বর্তমান সংবিধানে এর কোনো সুযোগ নেই।

আইসিসি কী বলছে

আইসিসির স্মারকনামা (Memorandum of Association)-এর ২.৪ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি সদস্য দেশকে অবশ্যই তাদের সংবিধানে একটি অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সদস্যদের মধ্য থেকে বা বাইরে থেকে মনোনীত হয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা।

নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অবশ্যই সংবিধান নির্ধারিত অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে, এবং পুরো প্রক্রিয়াটি হতে হবে সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া।

বাস্তবে কী হচ্ছে

দ্য ডেইলি স্টার সম্প্রতি কয়েকজন বর্তমান কাউন্সিলর ও সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান জানতে। বেশিরভাগই বিসিবির নির্বাচন সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন এবং কেউ কেউ নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলর দেবব্রত পাল বলেন, 'আমি আশা করছি আগস্টের শেষ নাগাদ বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে বর্তমানে তাদের কার্যক্রম দেখে আমার মনে হচ্ছে, নির্বাচনটি একতরফা হতে পারে—পুরোটাই লোক দেখানো একটি প্রক্রিয়া হবে।'

সম্প্রতি তিনি বিসিবি সভাপতির কাছে সংবিধান সংস্কার, দুর্নীতিমুক্ত বিসিবি এবং সুশাসনের দাবিতে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন।

স্থানীয় ক্লাব সংগঠক রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, 'শুধু অনিবার্য কোনো পরিস্থিতি দেখা দিলে বিসিবি নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারে। যদি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক কারণে নির্বাচন পেছাতে হয়, আইসিসি হয়তো সেটা গ্রহণও নাও করতে পারে।'

তবে তিনি বলেন, ক্লাব সংগঠকরা ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলর সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, 'আমি মনে করি, সংবিধান সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তার কোনো মূল্য থাকবে না। কিছু মুখ বদলাবে, রাজনৈতিক ঝোঁক পরিবর্তিত হবে, কিন্তু ক্রিকেটে কোনো পরিবর্তন আসবে না।'

সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের সময় সংবিধান সংস্কার কমিটি গঠিত হয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। কিন্তু মিডিয়ায় কিছু সংশোধনী ফাঁস হওয়ার পর ঢাকার কিছু ক্লাবের প্রতিবাদের মুখে সেই কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।

গত ২৫ জানুয়ারি ১৭তম বোর্ড সভার পর বিসিবি এই স্থগিতাদেশ ঘোষণা করে। কিন্তু বাফুফের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছিলেন, সংবিধান সংশোধনের কাজ চলছে, তা বাস্তবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

একজন বিসিবি পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আমার জানা অনুযায়ী, ফাহিম ভাই এখন পুরোপুরি ক্রিকেট অপারেশনে মনোনিবেশ করছেন। সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে তিনি আর কাজ করছেন না।'

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, বর্তমানে দায়িত্বে থাকা অধিকাংশ পরিচালক, যাদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে, তারাও এখনো জানেন না নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে। তবে তারা সবাই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

একজন বর্তমান পরিচালক বলেন, 'আমরা শুধু জানি নির্বাচন অক্টোবরের মধ্যেই হবে। কিন্তু এই নিয়ে কোনো কার্যক্রম এখনো দেখছি না। এই বিষয়ে বেশি কথা বলাও আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ—অনাকাঙ্ক্ষিত ফল হতে পারে।'

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) সচিব আমিনুল ইসলামকে বিসিবি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'নির্বাচন বিসিবির সংবিধান অনুযায়ীই হবে।'

তবে এটাও একটি অস্পষ্ট মন্তব্য, যা থেকে এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না—নির্বাচন আদৌ সময়মতো হবে কি না।

Comments

The Daily Star  | English
Milestone Jet crash

Milestone crash: Brother dies a day after sister

Death toll now 32; Aryan Nasraf Nafi, 9, died at 12:15am; Eldest sister, Nazia Tabassum Lizu, 13, died Monday

3h ago