‘আমরা জানি কীভাবে প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়’

নিস্তব্ধ ভোররাতে যখন পুরো শহর ঢাকায় ঘুমন্ত, ঠিক তখনই আলোয় জেগে উঠল হাতিরঝিলের অ্যাম্ফিথিয়েটার। সোমবার রাত আড়াইটার দিকে হাতিরঝিলের লেকে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল উল্লাসধ্বনি। কারণ, বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল যে তখন মঞ্চে। যারা কীনা ইতিহাসে প্রথমবারের মতন নিশ্চিত করেছে এএফসি নারী এশিয়ান কাপ ২০২৬-এর মূল পর্ব।
মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ড হয়ে রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকায় নামে নারী ফুটবল দল। নেমেই তারা চলে যায় হাতিরঝিলে। যেখানে ছিলো উৎসব মঞ্চ।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আয়োজিত এই মধ্যরাতের সংবর্ধনা কেবল এক উদযাপন ছিল না—এটি ছিল একটি বার্তা, একটি অঙ্গীকার।
বিজয়ী নারী ফুটবলাররা দক্ষিণ এশিয়াকে জয় করে এখন এশিয়ান মঞ্চে, এক সময় বিশ্বের বুকেও অন্যতম শক্তি হওয়ার অঙ্গীকার তাদের।
অধিনায়ক আফিদা খন্দকার আবেগভরা কণ্ঠে বলেন, 'এই মুহূর্তটি আমরা কখনও ভুলবো না। দয়া করে আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন আরও বড় কিছু অর্জন করতে পারি। আমাদের স্বপ্ন কেবল দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়—আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে চাই।'
বাছাইপর্বে বাংলাদেশের সাফল্যের সেরা কারিগর ছিলেন ঋতুপর্ণা চাকমা। এই ফরোয়ার্ড এই আত্মবিশ্বাসে যোগ করে স্মরণ করিয়ে দেন দলগত চেতনার কথা, 'আজ আমরা এখানে এসেছি দলগত প্রচেষ্টার কারণে। ফুটবল কখনও একক প্রতিভার খেলা নয়। আমরা, বাংলাদেশের মেয়েরা জানে কীভাবে প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়। দয়া করে আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখুন। আমরা আপনাদের নিরাশ করব না। আমাদের লক্ষ্য এশিয়াকে ছাড়িয়ে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছানো।'
প্রধান কোচ পিটার বাটলার সমর্থকদের ভালোবাসা আর উচ্ছ্বাসের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, 'এই সাফল্য শুধুই আমাদের নয়—এটি দেশের সব মানুষ ও সমর্থকদের জন্য। আপনারা যেভাবে আমাদের পাশে ছিলেন, সেটাই আমাদের চালিকাশক্তি।'
বাছাইপর্বে বাংলাদেশ নারী দল তাদের বাছাইপর্বে বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেয়, মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারায়, আর তুর্কমেনিস্তানকেও ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করে। এই অনবদ্য অভিযানের মাধ্যমেই বাংলাদেশ নারীরা প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেয়। তবে এটি কেবল শুরু।
২০২৬ সালের এশিয়ান কাপে খেলবে মোট ১২টি দল—এর মধ্যে রয়েছে আয়োজক অস্ট্রেলিয়া। আছে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ফুটবল পরাশক্তি। এই টুর্নামেন্টটি একইসঙ্গে ২০২৭ ফিফা নারী বিশ্বকাপ কাপ এবং ২০২৮ অলিম্পিক গেমসের বাছাইপর্ব হিসেবেও ব্যবহৃত হবে। শীর্ষ ৬টি দল সরাসরি বিশ্বকাপে যাবে, শীর্ষ ৮টি দল অলিম্পিকে জায়গা পাবে, সপ্তম ও অষ্টম দল আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফের মাধ্যমে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সুযোগ পাবে।
হাতিরঝিলের আলোঝলমলে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক, ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ ইজাজ, বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালসহ আরও অনেকে।
Comments