সাক্ষাৎকার

৯ বছর পর ফিরে ‘আগের সংকটই’ দেখছেন একসময়ের বিস্ময়বালক আইমান

Ayman Ibn Zaman

তিনবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন আইমান ইবনে জামান ৩৯তম জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে নয় বছরের বিরতি দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টন অঙ্গনে ফিরেছেন। একসময়ের বিস্ময়বালক আইমান মাত্র ১৫ বছর বয়সে ২০১৩ সালের বাংলাদেশ গেমসে পুরুষ একক শিরোপা জিতেছিলেন। তিনি ২০১৪ এবং ২০১৬ সালেও টানা জাতীয় শিরোপা লাভ করেন। যুব ও সিনিয়র উভয় স্তরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার পর তিনি উচ্চশিক্ষা এবং পেশাগত কাজের জন্য ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। বর্তমানে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ২৮ বছর বয়সী আইমান দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে তার প্রত্যাবর্তন, বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টনের বিবর্তন এবং এই খেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন।

নয় বছর পর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ফিরে আসার অনুপ্রেরণা কী ছিল?

আইমান ইবনে জামান: আমার মূল লক্ষ্য ছিল জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা। যদিও আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকি এবং কাজ করি। আমি সেখানে নিয়মিত অনুশীলন করছি এবং রাজ্য পর্যায়ের টুর্নামেন্টে খেলছি। আমি তিনটি মার্কিন রাজ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার আশায় ফিট রয়েছি। আমার মনে হয়েছিল এটাই এই খেলার প্রতি পুনরায় নিজেকে নিবেদিত করার সঠিক সময়।

আপনি এত দিন বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টন অঙ্গন থেকে দূরে ছিলেন কেন?

আইমান: আমি ২০২০ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানে আমার মাস্টার্স করার জন্য গিয়েছিলাম, যা আমি দুই বছরে শেষ করেছি। আমি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করি এবং আমার স্থায়ী বাসস্থান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সবকিছু গুছিয়ে আসার পর আমি কঠোর অনুশীলনে ফিরে আসি। এর ফলে আমি মিনেসোটা, আইওয়া এবং নেব্রাস্কায় শিরোপা জিততে পেরেছি এবং শিকাগোতে শীর্ষ চারের মধ্যে স্থান পেয়েছি।

আপনার শুরুর ক্যারিয়ারে আপনি মালয়েশিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি একই ধরনের প্রশিক্ষণে জড়িত আছেন?

আইমান: অবশ্যই। নেব্রাস্কায় আমি মালয়েশিয়া এবং চীনের শাটলার সহ একটি আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের দলের সঙ্গে অনুশীলন করি। বড় টুর্নামেন্টের আগে আমি সাধারণত এক বা দুই সপ্তাহের নিবিড় অনুশীলনের জন্য শিকাগোতে যাই।

আপনার চলে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টনে কী কী পরিবর্তন দেখছেন?

আইমান: সুযোগ-সুবিধা খুব বেশি উন্নত হয়নি, তবে আমি ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সী শাটলারদের একটি সম্ভাবনাময় নতুন প্রজন্ম দেখছি। তারা বেশি ফিট এবং কিছুটা ভিন্ন, আরও আধুনিক শৈলীতে খেলে। আমি বিশ্বাস করি বর্তমান ব্যাচের বিশ্ব পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, স্পনসরশিপ এবং সম্পদের ঘাটতি আগের মতনই রয়ে গেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে যদি জাতীয় দলে নির্বাচিত হন, তাহলে কিভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

আইমান: এই চ্যাম্পিয়নশিপের ফলাফলের ভিত্তিতে ফেডারেশন জাতীয় দল গঠন করছে। যদি আমি নির্বাচিত হই তাহলে আমি এখানে ক্যাম্পে যোগদানের জন্য আমার ছুটি বাড়ানোর কথা বিবেচনা করব, বিশেষ করে যখন একজন ইন্দোনেশিয়ান কোচ এর নেতৃত্ব দেবেন। আমি ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত অনুশীলন করছি, তাই আমি যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রস্তুত থাকব। এসএ গেমস আসন্ন, এবং আমি অবদান রাখতে চাই।

আপনার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, আমাদের শাটলারদের কীসের অভাব রয়েছে?

আইমান: সমস্যাটি কাঠামোর মধ্যে নিহিত। বিদেশে খেলোয়াড়দের একদম তৃণমূল স্তর থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেখানে কৌশল, পুনরুদ্ধার এবং মানসিক স্থিতিশীলতার শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করা হয়। ১৭ বা ১৮ বছর বয়সের মধ্যে তাদের সম্ভাবনা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশে আমরা পরিশ্রমী, কিন্তু ম্যাচের সময় চাপ সামলানোর জন্য আমাদের প্রায়শই কৌশলগত জ্ঞানের অভাব থাকে।

আমরা এই ফারাক কীভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি?

আইমান: ধারাবাহিক অনুশীলন এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোতে অংশগ্রহণই মূল বিষয়। নিয়মিত বিদেশে প্রতিযোগিতা করলে ম্যাচের মেজাজ এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তবে এটি ব্যয়বহুল, এবং খেলোয়াড়দের এটি সম্ভব করার জন্য স্পনসরশিপ বা ফেডারেশনের সমর্থন প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নতুন কমিটির কাছে খেলোয়াড়রা কী আশা করে?

আইমান: আমরা আশা করি নতুন নেতৃত্ব আমাদের আরও বেশি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে প্রবেশাধিকার, মানসম্পন্ন কোচিং, সঠিক পুষ্টি এবং উচ্চ-স্তরের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহায়তা করবে। এগুলো সরবরাহ করা কঠিন, তবে ফেডারেশন যদি এটি সম্ভব করতে পারে, আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ভালো ফলাফল বয়ে আনবে।

Comments