রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে পাকিস্তানকে আবারও হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত

শেষ ৬ ওভারে হাতে ৬ উইকেট নিয়ে ৬৪ রান দরকার পড়ল ভারতের। ফাইনালের চাপের মঞ্চে এমন সমীকরণ মেলানো সহজ নয়। তবে কিছুক্ষণ পরপর খেলার রঙ বদলালেও পাল্লা ভারী থাকল তাদের দিকেই। শেষমেশ ২ বল বাকি থাকতেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেল দলটি। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে পাকিস্তানকে আবারও হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখল ভারত।
রোববার এশিয়া কাপের ফাইনালে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ৫ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। টস হেরে আগে ব্যাট করে ভালো শুরু পাওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান ১৯.১ ওভারে অলআউট হয় ১৪৬ রানে। জবাবে ১৯.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫০ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে ভারত। হারিস রউফকে মিড অন দিয়ে চার মেরে খেলা শেষ করে দেন টুর্নামেন্টে প্রথমবার খেলতে নামা রিঙ্কু সিং।
মহাদেশীয় এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ট্রফি জয়ের রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করল ভারত। এটি টি-টোয়েন্টি সংস্করণের আসরে তাদের দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে নবম শিরোপা। টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্ব ও সুপার ফোরে আগের দুই সাক্ষাতে অনায়াসে জিতেছিল ভারত। আর জমজমাট ফাইনালেও তারাই মাঠ ছাড়ল শেষ হাসি নিয়ে। ফলে এবারের আসরে তাদের কাছে তৃতীয়বারের মতো হারল পাকিস্তান।

শুরুতে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ার পর রান তাড়ায় ভারতের নায়ক তিলক বর্মা। চারে নেমে ৬৯ রানের অপরাজিত গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন তিনি। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৪১ বলে ফিফটি ছুঁয়ে ৫৩ বল মোকাবিলায় তিনি হাঁকান তিনটি চার ও চারটি ছক্কা। এছাড়া, সঞ্জু স্যামসন ২১ বলে ২৪ ও শিবাম দুবে ২২ বলে ৩৩ রান করেন।
তিলকের আগে বল হাতে দারুণ অবদান রাখেন কুলদীপ যাদব। ৪ ওভারে ৩০ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়ে তিনি ভারতের সবচেয়ে সফল বোলার। অথচ খরুচে বোলিংয়ে প্রথম ২ ওভারে ২৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন তিনি। এই বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার ইনিংসের ১৭তম ও নিজের শেষ ওভারেই শিকার করেন ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট পান অক্ষর প্যাটেল, বরুণ চক্রবর্তী ও জসপ্রিত বুমরাহ।

চতুর্থ উইকেটে সঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে ৫০ বলে ৫৭ রানের জুটিতে বিপর্যয় সামলে নেন তিলক। এরপর জরুরি সময়ে দুবের সঙ্গে তার পঞ্চম উইকেট জুটি জমে যায়। রানের চাকা সচল করে জুটিতে আসে ৪০ বলে ৬০ রান। দুবে শেষ পর্যন্ত টিকতে না পারলেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মুহূর্তে ক্রিজে ছিলেন তিলক। তিনি বুনো উল্লাসে মাতেন রিঙ্কুকে নিয়ে।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় সাদামাটা পুঁজির পর পাকিস্তানকে লড়াইয়ে রাখেন বোলাররা। স্কোরবোর্ডে মাত্র ২০ রান জমা করতে ৩ উইকেট পড়ে যায় ভারতের। প্রতিটি উইকেটই পড়ে স্লোয়ার ডেলিভারিতে। দ্বিতীয় ওভারে ফাহিম আশরাফকে ছক্কা মারতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন অভিষেক শর্মা। ফাইনালে আর প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। মিড অনে তিনি ধরা পড়েন হারিস রউফের হাতে। ৬ বলে তার রান ৫।
পরের ওভারে শাহিনের অফ স্টাম্পের বাইরে ডেলিভারিতে ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি। তালগোল পাকিয়ে ফেললেও শেষমেশ বলে হাতে জমান পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আগা। ৫ বলে সূর্যকুমার করেন ১ রান। ব্যাট হাতে ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দেন গিলও। ফাহিমের করা চতুর্থ ওভারে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল মারতে গিয়ে তিনি তোলেন ক্যাচ। আউট হন ১০ বলে ১২ রানে।

ক্যাচ মিস না হলে ভারতের চাপ আরও বাড়তে পারত। নবম ওভারে আক্রমণে যান লেগ স্পিনার আবরার আহমেদ। গিয়েই পেতে পারতেন সাফল্য। তার ডেলিভারি সীমানার বাইরে পাঠাতে গিয়ে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক সংযোগ ঘটাতে পারেননি স্যামসন। সহজ ক্যাচ যায় ডিপ মিড উইকেটে। কিন্তু ছুটে এসে দুই হাত ছোঁয়ালেও বল হাতে জমাতে পারেননি হুসাইন তালাত।
ব্যক্তিগত ১২ রানে বেঁচে যাওয়া স্যামসন বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও তার সঙ্গে তিলকের জুটি মূলত পাকিস্তানকে উল্টো চাপে ফেলে দেয়। তবে হারের পর দলটির মনে বড় কাঁটা হয়ে বিঁধতে পারে রউফের এলোমেলো ও খরুচে বোলিং। আবরার, শাহিন, ফাহিমের পাশাপাশি মোহাম্মদ নওয়াজ ও সাইম আইয়ুব আঁটসাঁট থাকলেও এই ডানহাতি গতিময় পেসার ৩.৪ ওভারে দেন ৫০ রান।
স্যামসন পরবর্তীতে আবরারেরই শিকার হন। আর ১৯তম ওভারের শেষ ডেলিভারিতে দুবে ছক্কা মারার চেষ্টায় আউট হলে ভীষণ রোমাঞ্চ ছড়ায় লড়াইয়ে। শেষ ওভারে ভারতের প্রয়োজন পড়ে ১০ রানের। তখন আবার হারিসের ওপর চড়াও হয় ভারত। প্রথম বলে ডাবল নিয়ে দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকান তিলক। তৃতীয় বলে তিনি সিঙ্গেল নিলে স্ট্রাইক পেয়ে রিঙ্কু জিতিয়ে দেন দলকে।

এর আগে এক পর্যায়ে ১২.৪ ওভারে পাকিস্তানের রান ছিল ১ উইকেটে ১১৩। এরপর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে দলটির ব্যাটিং লাইনআপ। টপ অর্ডার বাদে তাদের বাকি আটজনই বিদায় নেন এক অঙ্কের ঘরে। ভারতের স্পিনারদের দাপটের কোনো প্রত্যুত্তর জানা ছিল না তাদের। ৩৯ বলের মধ্যে ৩৩ রান যোগ করতেই তারা হারায় বাকি ৯ উইকেট।
পাকিস্তানের পক্ষে ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান ফিফটি ছুঁয়ে সর্বোচ্চ ৫৭ রান করেন ৩৮ বল খেলে। তিনি মারেন পাঁচটি চার ও তিনটি ছক্কা। আরেক ওপেনার ফখর জামান ১৫তম ওভার পর্যন্ত ক্রিজে থেকে খেলেন ৩৫ বলে ৪৬ রানের ইনিংস। তিনে নামা সাইম করেন ১১ বলে ১৪ রান। বাকিদের স্কোর ছিল যথাক্রমে ০, ৮, ১, ৬, ০, ০, ৬ ও অপরাজিত ১।
Comments