বিশ্বকাপ দেখার ছুটি আদায় করে চাকরিতে যোগ দেন তরুণ ভক্ত!

সমর্থকরা তীব্র কষ্ট করছেন বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যাবে এমন আশা প্রায় সবার। সাকিবরা শুনছেন তো?

ধর্মশালা থেকে প্রতিনিধি

বিশ্বকাপ দেখার ছুটি আদায় করে চাকরিতে যোগ দেন তরুণ ভক্ত!

বিশ্বকাপ দেখার ছুটি

সাধারণত দেখা যায়, যারা চাকরিতে নিয়োগ দেবে, তাদেরই কেবল অধিকার থাকে শর্ত জুড়ে দেওয়ার। চাকরিপ্রার্থীর শর্ত দেওয়ার বাস্তবতা অন্তত বাংলাদেশে নেই। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুরাগী ফাহিম রহমানকে সেদিক থেকে একদম ব্যতিক্রম বলতে হয়। বিশ্বকাপ দেখতে তাকে টানা ৪০ দিনের ছুটি দিতে হবে, ঝুঁকি নিয়ে এমন শর্ত দিয়ে দুই বছর আগে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

ফাহিমের সঙ্গে শনিবার আলাপ ধর্মশালায়। ঢাকা থেকে আড়াই হাজার কিলোমিটার পেরিয়ে মোহনীয় পাহাড়ি অঞ্চলে এসেছেন ক্রিকেটের মায়ায়। থাকবেন প্রায় পুরো বিশ্বকাপ। লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে দেখবেন সাকিব আল হাসানদের খেলা।

দুনিয়ার দুর্গম কোনো অঞ্চলে বাংলাদেশের খেলা হলেও দু'চারজন বাংলাদেশি সমর্থক আবিষ্কার করা যায়। সেই তুলনায় হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালা এতটা দুর্গম কোনো অঞ্চল নয়। তবে ভারতের ভিসা জটিলতা, দীর্ঘ ভ্রমণ, ব্যক্তিজীবনের নানাবিধ বিষয় ছাড় দিয়ে লম্বা সফর মোটেও সহজ নয়।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে পাওয়া গেল এমন কিছু সমর্থক, যাদের প্রত্যেকের  গল্প বেশ আলাদা। তবে ফাহিম যেন সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন।

প্রকৌশলী ফাহিম ঢাকার একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করেন। বাংলাদেশের মাঠে বসে নিয়মিত খেলা দেখলেও বিদেশে দেখছেন প্রথমবার। সেই পরিকল্পনাও করেছিলেন বেশ আগে। দ্য ডেইলি স্টারকে শোনালেন সেই গল্প, 'আমি ২০১২ সাল থেকে মাঠে গিয়ে খেলা দেখি, ৩০-৪০টা ম্যাচ দেখেছি। সব সময় দেশেই দেখা হয়েছে, দেশের বাইরে দেখা হয়নি। যখন ঘোষণা করা হয় ২০২৩ বিশ্বকাপ ভারতে হবে, বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের দেশ, তখনই ভাবি যে ভারতে গিয়ে বিশ্বকাপটা দেখব।'

BD fan

যখন পরিকল্পনা করেন তখনো তিনি ছাত্র। পরে চাকরিতে যোগ দিয়ে জলাঞ্জলি দেননি নিজের ইচ্ছা, 'দুই বছর আগে আমি ভিভা সফট লিমিটেডে চাকরিতে যোগ দেই সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। যোগ দেওয়ার আগে কোম্পনির ম্যানেজমেন্ট আমাকে সমস্ত নিয়ম-কানুন বুঝিয়ে দেওয়ার সময় জানতে চাওয়া হয়েছিল আমার কিছু বলার আছে কিনা। তখনই তাদের জানাই, ২০২৩ সালে বিশ্বকাপের সময় আমার ৩০ থেকে ৪০ দিনের ছুটি দরকার। আমার ক্রিকেটের প্রতি পাগলামো দেখে তারাও পরে আপত্তি করেননি।'

'তবু বিশ্বকাপ কাছে আসতে শঙ্কায় পড়ে যাই। আমি ভিসার জন্য আবেদন করেছি তিনমাস আগে। কিন্তু এত বিলম্ব হচ্ছিল সবকিছু, একমাস আগেও মনে হচ্ছিল, আসতে পারব না।'

ক্রিকেটের আরেক ভক্ত মানব গবেষক মাহফুজ সিদ্দিকি হিমালয় ভারতের ১৮টি শহর ভ্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের খেলা দেখবেন পাঁচটি। বাকি সময় ভারতীয় সংস্কৃতি, খাবার, ঐতিহ্য, ইতিহাস, স্থাপনায় মন দেবেন। সেসব গল্প লিখবেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। লিখবেন বইও। তার ৪৬ দিনের ভারত ভ্রমণের খরচ যুগিয়েছেন তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ফেসবুকেই পোস্ট দিয়ে ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়েছিলেন। তাতে মিলেছে বিপুল সাড়া।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে গ্যালারিতে ছিলেন তিনিও, থাকবেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। বাংলাদেশের জয়-পরাজয়ের চেয়েও তিনি ক্রিকেটের রস উপভোগ করতে বেশি আগ্রহী। ক্রিকেট মাঠেও তিনি খুঁজে বেড়ান চরিত্র।

BD fan

ধর্মশালায় বেশিরভাগ বাংলাদেশের সমর্থক শিক্ষার্থী। তারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পড়াশোনা করেন। আগামী এক মাস তাদের সবারই কাটবে উৎসবের আনন্দে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা তরুণ রায়হান বলছিলেন, বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি মানুষ আসতেন, যদি ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হতো, 'আসলে আমার পরিচিত অনেকেরই আসার কথা ছিল। ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ার বিলম্বে তারা কেউ আসতে পারেনি। আশা করছি, পরের ম্যাচগুলোতে আরও অনেকে এসে পড়বে।'

Bd fan

সমর্থকরা তীব্র কষ্ট করছেন বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যাবে এমন আশা প্রায় সবার। সাকিবরা শুনছেন তো?

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

21h ago