সেই পাকিস্তানকে সহজেই হারাল বাংলাদেশ

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

যে শ্রীলঙ্কার মাঠ থেকে সিরিজ জেতার ইতিহাসই ছিল না বাংলাদেশের, সেই দেশটি থেকে সদ্যই টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে ফিরেছে বাংলাদেশ। যে সংস্করণে সবচেয়ে দুর্বল মনে করা হয় টাইগারদের। তরুণ এই দলটি যে নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে বদ্ধপরিকর, তা আরও একবার বুঝিয়ে দিল। এবার পাকিস্তানকেও ধরাশায়ী করেছে লিটন দাসের দল।

রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯.৩ ওভারে সফরকারীরা অলআউট হয়ে গেছে মাত্র ১১০ রানে। জবাবে ২৭ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করে টাইগাররা। ৯ বছর পর পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ পায় তারা। 

নিয়মিত অধিনায়ক হওয়ার পর লিটন দাসের প্রথম মিশন ছিল পাকিস্তান সফর। যদিও এর আগে হুট করেই সেই সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে পরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি সিরিজ খেলে টাইগাররা। তবে পাকিস্তানে রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচই হেরে হোয়াইটওয়াশ। মাস দেড়েক যেতেই এবার উল্টো চিত্র দেখল পাকিস্তান।

মূলত পাকিস্তান চিত্র দেখেছে মিরপুরের। চিরাচরিত মন্থর গতির উইকেট। আর এমন উইকেটে যার সবচেয়ে বেশি জ্বলে ওঠার কথা, তিনিই জ্বলে উঠলেন। ভীষণ কৃপণ বোলিংয়ের সঙ্গে মিডল অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার সঙ্গে তাসকিন আহমেদের গতিতে দিশেহারা পাক দল। লড়াইয়ের পর্যাপ্ত পুঁজিও মেলেনি তাদের।

অবশ্য দিনের শুরুতেই এমন কিছুর ইঙ্গিত পেয়েছিল বাংলাদেশ। স্থায়ী অধিনায়ক হওয়ার পর যে লিটন টস জিততে ভুলে গিয়েছিলেন, সেই লিটন জিতে নিলেন ভাগ্য পরীক্ষা। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দ্বিধায় ভুগলেও প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে জানিয়ে দিলেন নিজের দূরদর্শিতা। বোলাররা তাকে সেই বিলাসিতা করার সুযোগটা করে দিয়েছেন।

বাংলাদেশের হয়ে ২২ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন তাসকিন। ভীষণ আঁটসাঁট বোলিংয়ে মোস্তাফিজ ২ উইকেট পান স্রেফ ৬ রানে। টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের কোনো বোলারের ৪ ওভারের কোটা পূর্ণ করে সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড। একটি করে শিকার ধরেন শেখ মেহেদী হাসান ও তানজিম হাসান সাকিব। বাকি তিনটি রানআউট।

পাকিস্তানের মাত্র তিন ব্যাটার পৌঁছান দুই অঙ্কের ঘরে। দুবার জীবন পাওয়া ফখর করেন সর্বোচ্চ ৪৪ রান। ৩৪ বল মোকাবিলায় তার ব্যাট থেকে আসে ছয়টি চার ও একটি ছক্কা। সাতে নামা খুশদিল একটি করে চার ও ছয়ে ২৩ বলে করেন ১৭ রান। আটে নামা আব্বাস তিনটি ছক্কায় খেলেন ২৪ বলে ২২ রানের ইনিংস।

বাংলাদেশের হয়ে ২২ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন তাসকিন। ভীষণ আঁটসাঁট বোলিংয়ে মোস্তাফিজ ২ উইকেট পান স্রেফ ৬ রানে। টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের কোনো বোলারের ৪ ওভারের কোটা পূর্ণ করে সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড। একটি করে শিকার ধরেন শেখ মেহেদী হাসান ও তানজিম হাসান সাকিব। বাকি তিনটি রানআউট।

অফ স্পিনার শেখ মেহেদীর হাতে বাংলাদেশের বোলিং শুরু। শুরুতেই ফখর জামান ক্যাচ উঠিয়েও জীবন পান তাসকিনের হাতছাড়া ক্যাচে। তবে পরের ওভারে তাসকিন ফিরিয়ে দেন সাইম আইয়ুবকে (৪)। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ তুলে নেয় ৪ উইকেট, পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৪১/৪।

মেহেদী শিকার করেন হারিসের উইকেট, তানজিম বিদায় করেন সালমান আলি আগাকে, আর মোস্তাফিজ ফেরান হাসান নাওয়াজকে। এরপর মেহেদীর থ্রোয়ে রানআউট হন মোহাম্মদ নাওয়াজ। ফখর দ্বিতীয়বার জীবন পেলেও পরে রানআউট হন তাসকিন-লিটনের যৌথ প্রচেষ্টায়।

খুশদিল ও আব্বাস মিলে অষ্টম উইকেটে ৩৩ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন। তবে মোস্তাফিজ সেই জুটি ভেঙে পাকিস্তানের রান আটকে দেন। শেষদিকে তাসকিনের প্রথম তিন বলে তিন উইকেট—ফাহিম ক্যাচ, সালমান রানআউট, আব্বাস ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে। ফখর জামানের ৪৪ রানই দলের সর্বোচ্চ। ২০ ওভার শেষ হওয়ার আগেই অলআউট হয় পাকিস্তান।

লক্ষ্য ছোট হওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিজে নেমে শুরুতেই ধাক্কা। সালমান মির্জার করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফিরে যান শ্রীলঙ্কায় শেষ ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা তানজিদ হাসান তামিম। পরের ওভারে ফিরে ছাঁটাই হন অধিনায়ক লিটন। দলীয় ৭ রানে দুই উইকেট হারিয়ে শঙ্কা, নিজেদের ফাঁদেই না পড়েন।

সেখান থেকে তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে দলের হাল ধরেন আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। ৬২ বলে গড়েন ৭৩ রানের জুটি। তাতেই জয়ের ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এই জুটি ভেঙে পাকিস্তানের পালে কিছুটা বাতাস লাগিয়েছিলেন আব্বাস আফ্রিদি। বোল্ড করে দেন তাওহিদকে। ৩৬ রান করেন এই ব্যাটার।

তবে তাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশকে। বাকি কাজ জাকের আলি অনিককে নিয়ে শেষ করেন ইমন। তুলে নেন নিজের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

BB keeps policy rate unchanged 

BB said the 10 percent policy rate would remain in place for the July-December period

24m ago