আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

নেদারল্যান্ডসকে রান পাহাড়ে চাপা দিয়ে ভারতের নয়ে নয়

স্বাগতিকরা সেমিফাইনালের আগে অপরাজিতই থাকল। অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপের কোনো আসরে টানা নয়টি জয় পেল তারা।

নেদারল্যান্ডসকে রান পাহাড়ে চাপা দিয়ে ভারতের নয়ে নয়

নেদারল্যান্ডসকে রান পাহাড়ে চাপা দিয়ে ভারতের নয়ে নয়
ছবি: রয়টার্স

২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে পুরো এক ওভার বল করলেন বিরাট কোহলি। নয় বছর পর পেয়ে গেলেন উইকেটও। রোহিত শর্মাও উইকেট শিকারের খাতায় নাম লেখালেন। মোহাম্মদ শামি বাদে মূল বোলারদের প্রত্যেকেই পেলেন দুটি করে উইকেট। তাই শেষমেশ নেদারল্যান্ডসকে ভারতের ৪১০ রানের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়তেই হল। প্রতিপক্ষকে ২৫০ রানে গুটিয়ে ১৬০ রানে জিতে স্বাগতিকরা সেমিফাইনালের আগে অপরাজিতই থাকল। অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপের কোনো আসরে টানা নয়টি জয় পেল তারা।

রোববার বেঙ্গালুরুতে বিশাল পুঁজি নিয়ে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট তুলে নেয় ভারত। ওয়েসলি বারেসি ৪ রানে আউট হয়ে যান মোহাম্মদ সিরাজের বলে। তাদেরকে গুঁড়িয়ে দিবে ভারত, টানা দুই ওভার মেডেনের পর সেই আশঙ্কা সত্যি করতে আপত্তি জানায় ডাচরা। দুর্দান্ত স্ট্রোকে বাউন্ডারি বের করতে থাকেন ম্যাক্স ও'ডাউড ও কলিন অ্যাকারম্যান। পাওয়ার প্লেতে তারা আর কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলে ফেলে ৬২ রান।

কিন্তু ভারতের উচ্চমানের স্পিন পরীক্ষা ডাচদের জন্য তখনও বাকি। কুলদীপ যাদব নিজের দ্বিতীয় ওভারেই হাজির হন উইকেট নিয়ে। অ্যাকারম্যানকে এলবিডব্লিউ বানিয়ে ফেরান ৩৫ রানে। রবীন্দ্র জাদেজা এসে প্রথম বলেই শিকার ধরেন। ও'ডাউডকে ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দেন ৩০ রানে। জাদেজা-কুলদীপের নিয়ন্ত্রিত স্পিনে আটকা পড়ে যান সিব্র‍্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট। অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসও তাল না পেলে বেশ মন্থরগতিতে এগিয়ে চলে ইনিংস। 

২৫তম ওভারে দুজনের জুটি যখন ভেঙে যায়, রান ১১১ পাড়ি দেয়নি। ১৪ রানে এডওয়ার্ডস ফিরে গেলে ৩৯ রানের বড় হয়নি চতুর্থ উইকেট জুটি। স্কটিশ অধিনায়কের হন্তারক বিরাট কোহলি! হ্যাঁ, কোহলি এসে নিজের দ্বিতীয় ওভারে পেয়ে যান উইকেট। তার ডাউন দ্য লেগের বলেই উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেলেন এডওয়ার্ডস।

মূল বোলারদের বাইরে ভারতের একাদশের কে কে বোলিং পারেন, সে পরীক্ষাই যেন চলছিল! একপাশে ৩ ওভারে ১৩ রানের স্পেল শেষ করেন কোহলি। এরপর প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে হাত ঘোরান শুবমান গিল ও সূর্যকুমার যাদব। শুবমান ২ ওভারে ১১ রান দেন, সূর্যকুমার সমান ওভারে খরচ করেন ১৭ রান। অন্যপ্রান্তে, বুমরাহ এসে যদিও বোল্ড করে দেন বাস ডি লিডিকে। নিখুঁত ইয়র্কারে বাস যখন আউট হন, ৩২তম ওভারে তখন ১৪৪ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। 

ম্যাচের মাঝপথেই এরপর ভারত ডেথ বোলিংয়ের মহড়া শুরু করে দেয়। পেসাররা অফসাইড হেভি ফিল্ডে ইয়র্কার-ওয়াইড ইয়র্কার করে যান। সিরাজ তেমনি এক ইয়র্কারে ফিরিয়ে দেন এঙ্গেলব্রেখটকে। ৮০ বলে ৪টি চারে ৪৫ রান করে ফিরে যান তিনি। 

দুইশ রান ছুঁতে ৪১ ওভার লেগে যায় ডাচদের। ২০৮ রানেই সপ্তম উইকেট চলে যায়। কুলদীপের বলে লোগান ফন বিক ১৬ রানে বোল্ড হওয়ার পর আসেন রোলফ ফন ডার মারওয়ে। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে ১ চার ও ২ ছয়ে ৮ বলে ১৬ রান করে ফিরে যান মারওয়ে। একদিকে মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকা তেজা নিদামানুরু ডাচ সমর্থকদের মুখে অবশ্য হাসি ফোটান। ৬ ছক্কা মেরে ৩৮ বলে ফিফটি পেয়ে ৫৪ রানে তিনি থামলে অলআউট হয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। ১৩ বল বাকি থাকতে অলআউট হয়ে যায় নেদারল্যান্ডস।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া ভারতের ইনিংসে প্রথম বল থেকেই যেভাবে তাণ্ডব শুরু হয়, থামানো মুশকিল হয়ে পড়ে নেদারল্যান্ডসের জন্য। দত্তের অফ স্পিনে নিয়মিত বড় শট খেলে যান রোহিত। উড়ন্ত রোহিতের পিছু পিছু শুবমান পরে শুরু করেন ঝড়। ছয় ওভারেই পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় ভারত। রোহিত-শুবমানের ব্যাটে মনে হচ্ছিল, খেলাটা বুঝি টি-টোয়েন্টি! নয় ওভারের মধ্যেই পাঁচজন বোলারকে ব্যবহার করে ফেলেন ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। প্রথম পাওয়ার প্লেতে কেউই ঝড় থামাতে পারেননি। ১০ চার ও ৫ ছক্কায় ভারত আনে ৯১ রান।

কেবল ৩০ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে ফেলেন শুবমান। কিন্তু এর পরপরই আউট হয়ে যান বাউন্ডারিতে দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে। পল ফন মিকেরেনের বাউন্সারে ফাইন লেগে তেজা নিদামানুরুর তালুবন্দি হন শুবমান। ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৩২ বলে ৫১ রানে থামেন তিনি। ভাঙে ঠিক ১০০ রানের উদ্বোধনী জুটি। রোহিত ৪৪ বলে ফিফটি পূর্ণ করে আউট হয়ে যান ইনিংস বড় করতে না পেরে। ৬১ রানে বাস ডি লিডির বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন বাউন্ডারিতে। ৫৪ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কা মেরে আউট হন রোহিত।

এবারের বিশ্বকাপে রান মেশিন বনে যাওয়া কোহলি শুরতে চলেন ধীরগতিতে। ২৫ বলে ১৪ রানে থাকা কোহলি পরে গিয়ার পাল্টান। মাঝখানে একটু বিরতি নিয়ে আবার শুরু হয় ভারতের ঝড়। তবে ৫৩ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে ৫১ রানে ফিরে যান কোহলিও। ৫ চার ও ১ ছয়ে সাজানো ইনিংস খেলে বোল্ড হয়ে যান রোলফ ফন ডার মারওয়ের বলে। 

১২তম ওভারেই একশ পেরিয়ে যাওয়া ভারত ২৯তম ওভারে দুইশ ছাড়িয়ে যায়। শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলে আসা শ্রেয়াস রানের গতি ধরে রাখেন। আগ্রাসনের সাথে সতর্কতা মিশিয়ে ফিফটি পেয়ে যান ৪৮ বলে। রাহুলও ক্রিজে এসেও সমানতালে খেলে যান কব্জির ঝলকের সাথে চতুরতায়। তিনি ফিফটির দেখা পান ৪০ বলে। ৪২তম ওভারে ভারত তিনশ পেরিয়ে যাওয়ার সাথে শ্রেয়াস-রাহুলের জুটিও শতরানের হয়ে যায়।

৮৪ বলে শ্রেয়াস সেঞ্চুরি পাওয়ার পর উত্তাল হয়ে ওঠে রাহুলের ব্যাট। শেষ ওভার শুরুর আগে সেঞ্চুরি থেকে ছিলেন ১১ রান দূরে। টানা দুই ছক্কায় দুর্দান্তভাবে শতক হাঁকিয়ে ফেলেন। আউট হওয়ার আগে মারেন ১১ চার ও ৪ ছক্কা। আলোড়ন তোলা ইনিংসে ১০টি চারের সঙ্গে ৫টি ছয় আসে অপরাজিত থাকা শ্রেয়াসের ব্যাট থেকে। ডাচ বোলারদের চরম দুর্দশার দিনে লোগান ফন বিক ১০ ওভারেই দিয়ে ফেলেন ১০৭ রান। পাননি কোনো উইকেটও।

Comments

The Daily Star  | English
honor smartphone inside

How to build a smartphone

Smartphones feel inevitable in the hand, yet each one begins as a set of drawings, components and hypotheses. The journey from concept to finished device is a carefully sequenced collaboration between design labs, supplier networks and high-throughput assembly lines. In leading electronics hubs across Asia, that journey can take as little as days once a design is frozen and parts are on site.

3h ago