ছবিতে খালেদা জিয়ার জীবন
বাংলাদেশের রাজনীতির এক দীর্ঘ ও প্রভাবশালী অধ্যায়ের নাম খালেদা জিয়া। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তগুলো এই ফটো স্টোরিতে তুলে ধরা হয়েছে।
একজন সামরিক কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে পরিচিত জীবন থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উত্তাল সময় পেরিয়ে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আরোহণ—খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক পথচলা ছিল উত্থান, সংকট ও অবিচল নেতৃত্বের দীর্ঘ এক যাত্রা।
'আপসহীন নেত্রী' হিসেবে পরিচিত এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জীবনের নানা পর্ব উঠে এসেছে এই ফটো স্টোরিতে। কয়েক দশকজুড়ে তোলা নির্বাচিত আলোকচিত্রে দেখানো হয়েছে তার উত্থান, শাসনকাল এবং বিরোধীদলীয় রাজনীতি জীবনের নীরব মুহূর্তগুলো।
প্রতিটি ছবি ধারণ করে সময়ের একটি নির্দিষ্ট দলিল—কখনো জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে ভাষণ, কখনো রাজনৈতিক সংকটের মুখে দৃপ্ত অবস্থান, কখনো পারিবারিক পরিসরের নিভৃত দৃশ্য। এসব মুহূর্ত মিলিয়ে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর ছাপ রেখে যাওয়া এক নেত্রীর বহুমাত্রিক প্রতিচ্ছবি।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত। সারাদিনের ভোট শেষে রাস্তার চারপাশে উত্তেজনার ঢেউ। একটি ঘোষণার অপেক্ষায় সারা দেশের মানুষ। তাদের চোখ টেলিভিশনের পর্দায়, মনোযোগ রেডিওর স্পিকারে। অপেক্ষা শেষে এলো সেই ঘোষণা—বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী।
দেশবাসীর কাছে এ ফলাফল কিছুটা হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল। কারণ, প্রতিযোগিতা মূলত ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। দুটি দলই দীর্ঘ এক দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল। সেই আন্দোলনের ফলেই মাত্র কয়েক মাস আগে সামরিক শাসক থেকে রাষ্ট্রপতিতে রূপান্তরিত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
অনেকেই মনে করেছিলেন, এত বড় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর মাত্র কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বিএনপি—যার জন্ম হয়েছিল সেনানায়ক থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়া জিয়াউর রহমানের হাতে—সেই দলকে জনগণ কি সত্যিই ক্ষমতায় বসাবে? তার ওপর দলের নেতৃত্বে ছিলেন খালেদা জিয়া, যিনি মাত্র সাত বছর আগে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারই বিজয় হলো। বিশ্লেষকদের মতে, এর মূল কারণ ছিল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্ব। প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার মতো তিনি ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেননি। আর সেই সিদ্ধান্তই তাকে প্রতিষ্ঠিত করে আপসহীন নেত্রী হিসেবে এবং বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে।
রাজনীতি অনেকেই করেন, কিন্তু কেবল অল্প কয়েকজনই জীবিত অবস্থায় ব্যক্তি থেকে প্রতীকে পরিণত হন। তার থেকেও কমসংখ্যক নেতা আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা হারানোর পরও দেশের রাজনৈতিক গতিপথে প্রভাব বজায় রাখতে পারেন। খালেদা জিয়া দুটোই করেছেন। সাধারণ জীবন থেকে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ, তারপর সংকট, কারাবাস, অসুস্থতা এবং বারবার প্রত্যাবর্তন—এই চক্র পেরিয়ে তিনি দল-মত নির্বিশেষে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান অর্জন করেছেন।


Comments