তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ে অবিশ্বাস্য হারে বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের বিদায়

ছবি: আইসিসি

জয়ের জন্য তখন দরকার শেষ ৯ বলে ১০ রান, হাতে জমা ৬ উইকেট। এমন সহজ সমীকরণও মেলাতে পারল না হুট করে পথ হারানো বাংলাদেশ। তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে তারা স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারল স্রেফ ২ রান। শ্রীলঙ্কার কাছে অবিশ্বাস্য হারে আইসিসি নারী বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ও নিল নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।

সোমবার নভি মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ৭ রানের নাটকীয় জয় পেয়েছে লঙ্কানরা। টস জিতে আগে ব্যাট করে ৪৮.৪ ওভারে তারা অলআউট হয় ২০২ রানে। জবাবে পুরো ওভার খেলা বাংলাদেশ করতে পারে ৯ উইকেটে ১৯৫ রান।

শারমিন আক্তার সুপ্তা ও অধিনায়ক জ্যোতির দায়িত্বশীল ফিফটিতে জয়ের কক্ষপথে ছিল বাংলাদেশ। সুপ্তা পায়ে চোট নিয়ে আহত অবসরে যাওয়ার পর দলকে টানেন জ্যোতি। কিন্তু জয় যখন প্রায় হাতের মুঠোয়, তখনই ব্যাটিংয়ে গড়বড় করে ফেলে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

শুরুটা ঋতু মণিকে দিয়ে। সুগন্ধা কুমারির করা ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। থামে তার ১৩ বলে ৭ রানের ইনিংস। তার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ ছিল অদ্ভুত। দুবার ডাবল নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নেননি তিনি। উল্টো বাউন্ডারি মারার চেষ্টায় আউট হয়ে দলকে ফেলেন চাপে, যা আর সামলানো যায়নি।

ক্রিজে গিয়ে ডট খেলা রাবেয়া খান ওই ওভারের শেষ বলে নেন সিঙ্গেল। ফলে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থেকে যান জ্যোতি। শেষ ৬ বলে বাংলাদেশের চাহিদা দাঁড়ায় ৯ রানের। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ওভারটি করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে সফল হন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চামারি আতাপাত্তু।

বিস্ময় জাগিয়ে প্রথম ৪ বলে বাংলাদেশের চার ব্যাটার সাজঘরে ফেরেন। রাবেয়া (৩ বলে ১ রান) সুইপ করার চেষ্টায় হন এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিলেও কোনো লাভ হয়নি। এরপর জ্যোতিকে স্ট্রাইক দিতে গিয়ে রানআউটে কাটা পড়েন নাহিদা আক্তার (১ বলে ০ রান)। নিলাক্ষি ডি সিলভার সরাসরি থ্রোতে ভেঙে যায় স্টাম্প। পরিস্থিতির দাবি মেটাতে তৃতীয় বলে ছক্কা মারতে যান জ্যোতি। কিন্তু লং-অফে ওঠা সহজ ক্যাচ নিতে ভুল করেননি নিলাক্ষি। বাংলাদেশের ভাগ্য তখনই একরকম নিশ্চিত হয়ে যায়।

পরের বলে মারুফা আক্তারকে (১ বলে ০ রান) এলবিডব্লিউ করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান চামারি। পঞ্চম বলে নিশিতা আক্তার নিশি সিঙ্গেল নিয়ে তা হতে না দিলেও শেষ বলটি ব্যাটেই ছোয়াঁতে পারেননি আবার মাঠে ফেরা সুপ্তা। শ্রীলঙ্কার বিজয়োল্লাসের বিপরীতে স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে গোটা বাংলাদেশ শিবির।

রান তাড়ায় ১৬তম ওভারে ৪৪ রানের মধ্যে রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক, ফারজানা হক ও সোবহানা মোস্তারি বিদায় নিলে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর হাল ধরেন সুপ্তা ও জ্যোতি। চতুর্থ উইকেটে তারা যোগ করেন ১২০ বলে ৮২ রান। সুপ্তা মাঠ ছাড়ার পর স্বর্ণা আক্তারের (২৭ বলে ১৯ রান) সঙ্গে জ্যোতির ৫৮ বলে ৫০ রানের জুটিতে লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। তবে শেষে যা ঘটে, তার ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন।

জ্যোতি দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন। ৯৮ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ছয়টি চার। চারটি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত ৬৪ রান করতে সুপ্তার লাগে ১০৩ বল।

এর আগে চামারি, ম্যাচসেরা হওয়া হাসিনি পেরেরা ও নিলাক্ষিকার ব্যাটে চড়ে বড় পুঁজি স্বপ্ন দেখছিল শ্রীলঙ্কা। তবে ৩১.৩ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭৪ রান তুলে ফেলা দলটিকে পুরো ওভারই খেলতে দেয়নি বাংলাদেশ। তাদের শেষ ৬ উইকেটের পতন হয় মাত্র ২৮ রানে।

বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার স্বর্ণা। তার নৈপুণ্যেই মূলত বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। ১০ ওভারের কোটা পূরণ করে চারটি মেডেনসহ তিনি ২৭ রানে নেন ৩ উইকেট। আরেক স্পিনিং অলরাউন্ডার রাবেয়া ২ উইকেট শিকার করেন ৩৯ রান দিয়ে।

৪৩ বলে ছয়টি চার ও দুটি ছক্কায় ৪৬ রান করেন চামারি। ৩৮ বলে একটি চার ও দুটি ছক্কায় ৩৭ রান করেন নিলাক্ষিকা। ব্যক্তিগত ৫৫ ও ৬৩ রানে দুবার ক্যাচ দিয়ে জীবন পাওয়া হাসিনি খেলেন ৮৫ রানের ইনিংস। তার ব্যাট থেকে আসে ১৩টি চার ও একটি ছক্কা।

প্রথম দল হিসেবে এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল বাংলাদেশ। ছয় ম্যাচে পঞ্চম হারে ২ পয়েন্ট তিনি তারা আছে পয়েন্ট তালিকার সাতে। অন্যদিকে, বাঁচা-মরার লড়াইয়ে জিতে সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখল শ্রীলঙ্কা। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের ঠিক উপরেই তাদের অবস্থান।

Comments