বয়োজ্যেষ্ঠরা যেভাবে অনলাইনে নিরাপদ থাকবেন

ছবি: ডেকান হেরাল্ড

প্রযুক্তির বিকাশের ফলে আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা দিনদিন অনলাইনে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। এর সঙ্গে বাড়ছে সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার ঝুঁকি। আর সাইবার জগতের অপরাধীদের কাছে তরুণ বা বয়োজ্যেষ্ঠ সবাই সমান বলে ডিজিটাল দুনিয়ায় নতুন বা অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। 

এ কারণে বয়োজ্যেষ্ঠরা সাইবার অপরাধের শিকার না হয়ে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে কয়েকটি বিষয় মেনে চলতে পারেন।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার 

সহজে মনে রাখা যায় এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা যায় এমন ধরনের পাসওয়ার্ড ব্যবহারের প্রবণতা অনেকের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। তবে, এই প্রবণতা এড়িয়ে চলুন। সাইবার জগতে নিরাপদ থাকতে হলে শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে লগইন-এর তথ্য মনে রাখতে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন।

টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন

ওয়েবসাইট ও অ্যাপগুলো টু-স্টেপ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর পরিচয় ও ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই করে থাকে। যারা ইন্টারনেট ব্যবহারে খুব বেশি দক্ষ না, তারা এটাকে সমস্যার মনে করেন এবং কোনো ভুল হতে পারে ভেবে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন পদ্ধতি এড়িয়ে চলেন। তাই আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় নিজেই ব্যবস্থা নিন।

ই-মেইল ব্যবহারে সতর্ক থাকুন 

ই-মেইলে যদি আপনাকে গোপনীয় বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য দিতে বলা হয়, তাহলে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। এ ব্যাপারে সতর্ক না থাকলে বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হতে পারেন। পাশাপাশি ই-মেইলে যাদের আপনি চেনেন, তাদের দেওয়া লিংকে কখনো ক্লিক করবেন না। 

এ ছাড়া আপনার ই-মেইলে কোনো সতর্ক সংকেতসূচক ফ্ল্যাগ দেখালে তা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। যদি দেখেন নাটকীয় কোনো ট্যাগলাইন দিয়ে টাকা ট্রান্সফারের অনুরোধ অথবা জ্যাকপট জেতার ঘোষণা- তাহলে সেই লিংকে ক্লিক করবেন না। এ ছাড়া কিছু শব্দ, যেমন- 'ফাইনাল নোটিশ', 'আর মাত্র ২ ঘণ্টা বাকি' এ ধরনের শব্দগুলো রেড ফ্ল্যাগ (মহা বিপদজনক) হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কোনো ধরনের ঠিকানা চেক করুন- যদি এটি আপনার অনুমানের চেয়ে ভিন্ন কিছু হয়, যেমন প্রচুর এলোমেলো বর্ণ কিংবা ভুল ডোমেইন নেম, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি ডিলিট করুন।

অনলাইনে অর্ডার বা পেমেন্ট করার সময় 

অপরাধীরা প্রায়ই আসল ওয়েবসাইটের মতো করে ফেক বা ভুয়া ওয়েবসাইট বানায়। তাই কোনো খাবার অর্ডার করা বা অন্য কোনো পণ্য কেনা বা অনলাইনে কোনো পেমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি সঠিক পেজ বা ওয়েবসাইটটিতেই প্রবেশ করেছেন কি না নিশ্চিত হয়ে নেবেন। প্রতিষ্ঠানের লোগো সঠিক কি না তা যাচাই করে নিন ও দেখে নিন নিরাপদ লোগোটি (ইউআরএল-এ 'লক সিম্বল' সেখানে আছে কি না। এমন সাইটগুলো এড়িয়ে চলুন যেগুলো ঘন ঘন লোগো পরিবর্তন করে কিংবা কোম্পানির নামের বানানে ভুলভাবে লিখেছে। খুব সামান্য ভিন্নতা থাকলে এসব পেজকে প্রকৃত পেজগুলো থেকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। যা হোক, এসব বিষয়ে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

নতুন পাসওয়ার্ড সেট করার সময় স্ক্যাম সম্পর্কে সতর্ক থাকুন

কিছু ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীকে প্রভাবিত করতে নতুন পাসওয়ার্ড দিতে বলে বা অবিশ্বাস্য কোনো অফারের কথা বলে। এ বিষয়ে তো একটা প্রবাদই আছে, 'অতিভক্তি চোরের লক্ষ্মণ'। তাদের দেওয়া লিংকে ক্লিক করলে এরপর একটি এন্ট্রি পেজ আসবে যেখানে ব্যবহারকারীর নাম ও পাসওয়ার্ড প্রদর্শিত হবে। একবার এই তথ্যগুলো দিয়ে দিলেই, হ্যাকাররা খুব দ্রুতই আপনার তথ্য পেয়ে যাবে। তারবার্তা, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য কিংবা ডেবিট কার্ডের তথ্যও থাকতে পারে এর ভেতর। এসব ফাঁদে পা দেবেন না। 

কিউআর কোডের ব্যবহার 

সাম্প্রতিক সময়ে কিউআর কোডের ব্যবহার বেড়েছে, সঙ্গে বেড়েছে এ সংক্রান্ত প্রতারণাও। হ্যাকারেরা একটি ফেক কিউআর কোড স্ক্যান করার মাধ্যমে আপনার ফোনের ডাটায় প্রবেশাধিকার পেয়ে যায়। যদিও এটা বলা শক্ত যে, কিউআর কোডটি সঠিক নাকি মিথ্যা, এটি নিশ্চিত করা জরুরি যে, আপনি একটি কিউআর কোড স্ক্যান করছেন নির্ভরযোগ্য কোনো সোর্স থেকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, নেটওয়ার্কিং সাইট ও মেসেজিং অ্যাপেও বিভ্রান্তিকর সব লিংকের উপস্থিতি থাকতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টের নিচে আপনি যেসব লিংক পাবেন সেসব হ্যাকারদের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে দেওয়া হতে পারে। 

যেকোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে 'পাবলিকলি' তথ্য শেয়ারের বিষয়ে সতর্ক থাকুন। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। তবে, তাদের অনেকে প্রাইভেসি সেটিংস বিষয়ে অসচেতন। প্রবীণ হিসেবে তাদের প্রতি পরামর্শ থাকবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয় সেটা বোঝা। 

এ ছাড়া বন্ধু ও পরিবারের যারা ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিজ্ঞ, কোনো সাহায্য লাগলে তাদের জানাতে দ্বিধাবোধ করবেন না। 

পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার 

একেবারে অনিবার্য না হলে, ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। হ্যাকাররা এসব নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার পেয়ে যায় ও এরপর আপনার ল্যাপটপ অথবা মোবাইল ডিভাইসে ঢুকে পড়তে পারে। পাবলিক ওয়াইফাইয়ে সংযুক্ত হবার নিরাপদ পথ আছে। এ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পন্থা হলো ভিপিএনের মাধ্যমে সেটা করা কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত ভ্রমণ করে থাকেন ও পাবলিক ওয়াইফাই ঘনঘন ব্যবহার করেন, তাহলে নিরাপদ কানেকশনের বিষয়ে সতর্ক থাকুন। 

এসব পরামর্শের সাহায্য নিলে সাইবার অপরাধের শিকার হবার সম্ভবনা অনেকটাই কমে যাবে ও ব্যবহারকারীরা একটি শঙ্কাহীন ও নিরাপদ অনলাইন অভিজ্ঞতা পাবেন।

 

অনুবাদ করেছেন মাহমুদ নেওয়াজ জয়

 

Comments

The Daily Star  | English

Atif Aslam, December, and erasure of historical consciousness

Culture reveals what a society chooses to remember, and what it finds acceptable to forget

27m ago