উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর উদ্যোগ

উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর উদ্যোগ
ছবি: ডয়চে ভেলে

আরও বড় আকারে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনের পাশাপাশি সেই জ্বালানি ধারণ করাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। জার্মানির এক স্টার্টআপ কোম্পানি ব্যাটারি স্টোরেজ প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে অবদান রাখছে৷

কারখানাটি এত বড়ো, যে সেটিকে বড়াই করে গিগাফ্যাক্টরি বলা হয়৷ টেসভোল্ট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ডানিয়েল হানেমান সেই বিশালত্ব স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে চান৷ বিশাল আকারের ব্যাটারি স্টোরেজ তার ধ্যানজ্ঞান৷ গোটা বিশ্বেরই সেটা প্রয়োজন৷ কারণ সেটি ছাড়া টেকসই জ্বালানি সরবরাহ সম্ভব হবে না৷ খ্যাতির পথ কিন্তু বিস্ময়কর রকম কণ্টকিত।

সূর্যের আলোর অভাবে বিদ্যুৎ না পেলে কী হবে? উত্তরটা সহজ – আগেই সেই বিদ্যুৎ ধারণ করে রাখতে হবে৷ টেসভোল্ট কোম্পানি তার জন্য ব্যাটারি সরবরাহ করছে৷ জার্মানির পূর্বাংশের ছোট এক জনপদ এভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের উপর নির্ভরতা দূর করছে৷ সেই সোলার পার্কের উদ্যোক্তা লুকাস মগ বলেন, 'দুপুরে আবহাওয়া ভালো থাকলে জার্মানির অনেক সোলার প্লান্ট চালু থাকে৷ তখন আমরা স্টোরেজে বিদ্যুৎ জমা করি৷ কিন্তু এখনকার বা সন্ধ্যার মতো আবহাওয়া থাকলে স্টোরেজে জমা বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারি৷' 

জার্মানিতে এমন কাজ খুব কম করা হয়৷ তবে বর্তমানে ব্যাটারি স্টোরেজের চাহিদা হু হু করে বেড়ে চলেছে৷ একটি মডিউল ১০ কিলোওয়াট আওয়ার শক্তি ধারণ করে, যা ৪ জনের পরিবারের দৈনিক চাহিদার সমান। শিল্পক্ষেত্রের জন্য আরও বড় ইউনিট তৈরি করে এই কোম্পানি৷ টেসভোল্ট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হানেমান বলেন, 'ইউক্রেন সংকটের জের ধরে কোম্পানিগুলি এক টেকসই, নির্ভরযোগ্য ও ন্যায্য মূল্যের জ্বালানি সরবরাহ চাইছে৷ সে কারণে গ্রাহকরা আমাদের ফোন করে বলছেন, আমি বিদ্যুতের মাসুল সমান রাখতে স্টোরেজ চাইছি৷ বেড়ে চলা বিদ্যুতের মাসুল থেকে মুক্তি পাবার এটাই একমাত্র পথ৷'

উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর উদ্যোগ
ছবি: ডয়চে ভেলে

সৌর বিদ্যুৎ ও স্টোরেজ ২০ বছর ব্যবহার করলে লাভ হয় বৈকি৷ সৌর বিদ্যুৎ থেকে পাওয়া কিলোওয়াট আওয়ারের মূল্য ৬ সেন্ট৷ সেইসঙ্গে স্টোরেজের জন্য আরও ১০ সেন্ট৷ অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১৬ সেন্ট, যা বর্তমানে প্রচলিত মাসুলের তুলনায় প্রায় অর্ধেক৷

কিন্তু সমস্যা হলো সাধারণত ব্যাটারি স্টোরেজের আয়ু বেশিদিন হয় না। প্রতি বছর শক্তি কমতে থাকে। প্রচলিত স্টোরেজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুর্বল ব্যাটারি গোটা ব্যাটারি প্যাকের ক্ষমতা নির্ধারণ করে। পদার্থবিদ্যার এই নিয়মই এই ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।

টেসভোল্ট কোম্পানির মডেলে শক্তিশালী ব্যাটারিগুলো দুর্বল ব্যাটারিগুলোকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসে গোটা ব্যাটারি প্যাকের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে৷ এই বৈশিষ্ট্যের বদৌলতে টেসভোল্ট প্রতিযোগীদের তুলনায় বেশি মূল্য চাইতে পারে৷ হানেমান বলেন, 'এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা ব্যাটারির আয়ু প্রায় দ্বিগুণ করে তুলতে পারি৷ সেটা বড় এক সুবিধা৷ কারণ যে সব গ্রাহক সৌর অথবা বায়ুশক্তিতে বিনিয়োগ করছেন, মাত্র ৫ বছরের জন্য নয় বরং ২০ বছরের জন্য সুফল পেতে চান৷ ব্যাটারির আয়ুও ততদিন হওয়া উচিত৷'

তবে এই প্রযুক্তির জন্য অনেক চিপের প্রয়োজন হয়৷ চিপের আকালের এই সময়ে এই স্টার্টআপ কোম্পানিও সমস্যায় পড়ছে৷ উৎপাদন আরও বাড়াতে কোম্পানিটি নতুন স্টোরেজের মডেল সৃষ্টি করেছে৷ ডানিয়েল হানেমান বলেন, 'আমাদের অত্যন্ত দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয়েছিল৷ নতুন এক মডিউলের মাধ্যমে আমরা উৎপাদন প্রক্রিয়া ও পণ্যের মধ্যে চিপের মোট চাহিদা ৮০ শতাংশ কমাতে পেরেছিলাম৷ ফলে আমরা বর্তমান অভাব সত্ত্বেও বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পেরেছি৷ গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বৃদ্ধির হার ১০০ শতাংশ৷'

গোটা বিশ্বে পরিবেশবান্ধব 'গ্রিন ইলেকট্রিসিটি'-র চাহিদা দ্রুত বেড়ে চলেছে৷ কিন্তু স্টোরেজের ক্ষমতা সে তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে৷ মূলত প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাবেই সেটা সম্ভব হচ্ছে না৷ হানেমান মনে করেন, 'কাঁচামালের অভাবই সেই পথে প্রধান অন্তরায়৷ ব্যাটারির মধ্যে প্রায়ই রেয়ার আর্থ প্রয়োজন হয়৷ নতুন প্রজন্মের ব্যাটারি সেলের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও সস্তার এবং আরও সহজলভ্য কাঁচামাল ব্যবহার সম্ভব করে তুলতে হবে৷ তখনই বিশাল আকারে এর প্রসার সম্ভব হবে, যাতে গোটা ইউরোপ, অন্তত ইউরোপের কিছু অংশে সত্যি স্বয়ংসম্পূর্ণ, পরিবেশবান্ধব, ন্যায্য মূল্যে এবং নির্ভরযোগ্যভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়৷'

ন্যাট্রিয়াম ব্যাটারির এমন কাঁচামাল হতে পারে৷ কয়েক বছরের মধ্যেই এই উপাদান ব্যবহার করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷

কোম্পানির কাছে ১০ কোটি ইউরো মূল্যের বেশি অর্ডার রয়েছে৷ সম্প্রতি বিনিয়োগকারীরা আরও মূলধন জোগাড় করেছেন৷ ফলে দ্রুত আরও একটি গিগাফ্যাক্টরি নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে৷

Comments

The Daily Star  | English

From 2019 to 2025: How Ducsu election shows change

With this Ducsu poll being the first since the July uprising, I decided to witness history with my own eyes -- this time as a journalist and alumnus

23m ago