কী করছেন মেটা, অ্যামাজন, গুগলের ছাঁটাই হওয়া কর্মীরা

কী করছেন মেটা, অ্যামাজন, গুগলের ছাঁটাই হওয়া কর্মীরা
ছবি: গুগল

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিলিকন ভ্যালিতে যে পরিবর্তন ঘটেছে তা বোঝার জন্য, ফেব্রুয়ারিতে মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের এক ঘোষণার দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। জাকারবার্গ বলেছিলেন, ২০২৩ সালটি হবে 'দক্ষতা প্রমাণের বছর'। 

তবে অন্য কেউ এই মন্তব্যের মাজেজা বুঝতে পারবে না। শুধু তারাই বুঝবে, যারা এর ফলাফলটা ইতোমধ্যে হাতেনাতে টের পেয়েছেন। গত ১৪ মার্চ মেটা প্রায় ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। তার আগে গত নভেম্বর মাসেই প্রতিষ্ঠানটি আরও ১১ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল। 

কর্মী ছাঁটাই অবশ্য মেটা একা করেনি। মার্চের ২০ তারিখ অ্যামাজন তার করপোরেট বিভাগ থেকে ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়। এর কিছুদিন আগেই প্রতিষ্ঠানটি আরও ১৮ হাজার কর্মীকে চাকুরিচ্যুত করেছিল। মেটা ও অ্যামাজনের বাইরেও চলতি বছর আরও অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে। 

তথ্য ও জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ক্রাঞ্চবেজের তথ্য অনুসারে, এ বছর এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। গত বছর চাকরি গেছে আরও প্রায় দেড় লাখ কর্মীর। 

প্রযুক্তি খাতে ব্যয় সংকোচনের যে নতুন ধারা তৈরি হয়েছে, তাতে বিনিয়োগকারীরা উৎফুল্ল। কোম্পানিগুলো বাজারের চাহিদা ও প্রত্যাশা স্পষ্ট বুঝতে পারছে। মার্কিন বিজনেস সফটওয়্যার ফার্ম সেলসফোর্স-এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তাও মার্চের শেষ দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তার প্রতিষ্ঠান জানুয়ারি মাসে যে ৮ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছে, ওই তালিকায় আরও কর্মী যোগ করা হবে। 

২০২২ সাল থেকে প্রযুক্তি খাতে উচ্চ হারে কর্মী ছাঁটাইয়ের যে প্রচলন শুরু হয়েছে, তাতে অবশ্য মার্কিন প্রযুক্তি খাতে বড় প্রভাব পড়েনি। গত বছর এবং এ বছর মিলিয়ে যত কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের মোট কর্মীর মাত্র ৬ শতাংশ। কর্মী ছাঁটাই অব্যাহত রাখলেও প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন কর্মীদের নিয়োগও অব্যাহত রেখেছে। ২০০০-এর দশকে ডটকম যুগের উত্থান যখন চূড়ান্তে পৌঁছেছিল, তখনকার সময়ের সঙ্গে যদি ২০০৩ সালে এর পতন কালের তুলনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের কর্মীসংখ্যা কমেছে ২৩ শতাংশ, বা ৬ লাখ ৮৫ হাজার জন। 

তারপরও সাম্প্রতিক মাসগুলোকে যেভাবে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে, তা অস্বাভাবিক এবং অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে- কারা চাকরিচ্যুত হচ্ছে? আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে- চাকুরচ্যুত কর্মীরা পরবর্তীতে কোথায় যাচ্ছেন বা কী করছেন?

কম্পিউটিং টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা টিম হার্বার্ট বলেন, এখন পর্যন্ত যারা সরাসরি প্রযুক্তিবিদ (কম্পিউটিং, সফটওয়্যার, আইটি ইত্যাদি) তাদের সংখ্যা বাড়ছেই। বেশির ভাগ চাকরি গেছে মূলত মার্কেটিং, বিজনেস ফাংশন এবং নিয়োগ বিভাগের কর্মীদের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই বিভাগগুলো অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল। 

২০২০ সালের বসন্তকাল থেকে ২০২৩ সালের শুরুর সময়টা পর্যন্ত যুক্তারষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতে ১০ লাখ নতুন কর্মী নিয়োগ হয়েছিল। এত বিশাল কর্মী নিয়োগ করার জন্য প্রচুর সংখ্যক নিয়োগকারী কর্মীকেও নিয়োগ দিতে হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শ চিত্র অনুসারে একজন নিয়োগকারী কর্মী বছরে সর্বোচ্চ ২৫ জনকে নিয়োগ করতে পারেন (যাতে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে মানসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ দেওয়া যায়)। কিন্তু এখন এসব নিয়োগকারী কর্মীরাই কর্মী ছাঁটাইয়ের তালিকাভুক্ত হচ্ছেন। 

তবে এখনো যারা ছাঁটাইয়ের তালিকাভুক্ত হননি, তাদেরকে নিজেদের দক্ষতা আরও বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। যেমন- মেটা এপ্রিলে কর্মীদের কাজের জায়গা ও ধরনে পরিবর্তন এনেছে। অনেক মেধাবী ও প্রতিশ্রুতিশীল কর্মীদেরকে ডিজিটাল পুনঃউদ্ভাবনের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। 

বহু বছর ধরে মার্কিন শিল্প পণ্য উৎপাদনকারী খাতগুলো মেধাবী কর্মী সংকটে ভুগছিল। কারণ মেধাবীরা সবাই চলে যেত গুগল, অ্যামাজন, অ্যাপল ও মেটার মতো কোম্পানিতে। কিন্তু এখন তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে। 

যেমন, মার্কিন ট্রাক্টর নির্মাতা কোম্পানি জন ডিয়ার আরও আধুনিক ও স্মার্ট কৃষি মেশিন তৈরির উদ্দেশ্যে বড় বড় টেক কোম্পানির ছাঁটাইকৃত কর্মীদেরকে নিয়োগ দিচ্ছে। গত মাসে জন ডিয়ার টেক্সাসের অস্টিনে নতুন অফিস চালু করেছে। এই জায়গাটি হচ্ছে বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের অফিস। ফলে এখানে দক্ষ ও মেধাবী টেক কর্মী পাওয়া সহজ। গাড়ি নির্মাতারাও এখন আরও আধুনিক ও স্মার্ট গাড়ি তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। স্মার্ট গাড়ি মানেই সফটওয়্যার চালিত গাড়ি। ফলে বড় বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ভালো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াদের জন্য মুখিয়ে আছে। 

এ ছাড়া ব্যাংক, স্বাস্থ্য বিমা, রিটেইলার খাতে প্রচুর দক্ষ প্রযুক্তি কর্মী প্রয়োজন। এসব খাতগুলোও দিন দিন আরও সফটওয়্যার বান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে। ছাঁটাইকৃত অনেক কর্মীদের ওপর এসব খাতের নজর আছে। অনেকে আবার এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগও দিচ্ছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প খাতগুলোও ভবিষ্যতে আরও স্মার্ট বা সফটওয়্যার-বান্ধব হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 

ছাঁটাই হওয়া কিছু কর্মী আবার নতুন বিভিন্ন  স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান তৈরি করছেন। চ্যাটজিপিটির মতো জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স স্টার্টআপ তৈরির দিকে ঝুঁকছেন কেউ কেউ। 

স্মার্টফোনের আবিষ্কারের ফলে অনেক পুরোনো প্রযুক্তি ও কাজ যেমন বাতিল হয়ে গেছে, অনেকে আশা করছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানও তেমন 'সৃজনশীল ধংসের নতুন তরঙ্গ' সৃষ্টি করবে। এই প্রযুক্তি ফলে অনেক চাকরি যেমন বাতিল হয়ে যাবে, একই সঙ্গে নতুন ও উদ্ভাবনী অনেক চাকরি যোগও হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রযুক্তি খাতের ছাঁটাই হওয়া কর্মীরা কৃত্রির বুদ্ধিমত্তার অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করবে বলেও মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। 

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

3h ago