সৌর ব্যতিচার কী, কেন এসময় টিভি ‘ঝিরঝির’ করে

'সান আউটেজ' বা 'সৌর ব্যতিচার' হলো স্যাটেলাইট সিগন্যালে এক ধরনের বাধা। পৃথিবী থেকে যখন কোনো অ্যান্টেনা একটি নির্দিষ্ট জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইটের দিকে মুখ করে থাকে, তখন বছরে দুবার সূর্য ঠিক ওই স্যাটেলাইটের পেছনে চলে আসে। এ সময় সূর্য থেকে আসা বিকিরণের মধ্যে সিগন্যালের কাছে স্যাটেলাইট থেকে আসা তুলনামূলক দুর্বল সিগন্যালটি চাপা পড়ে যায়।
এই ঘটনাকেই সান আউটেজ বা সৌর ব্যতিচার বলা হয়। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ এর সঙ্গে এই ঘটনাটিই ঘটবে। অর্থাৎ, সূর্য, স্যাটেলাইট, এবং ভূপৃষ্ঠে স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগকারী ডিশ অ্যান্টেনা একই সরলরেখায় আসবে। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি জানিয়েছে, এই ঘটনার কারণে ৯ দিনে মোট ৮১ মিনিট সম্প্রচারে সমস্যা হতে পারে।
জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট হলো এমন একটি কৃত্রিম উপগ্রহ, যা পৃথিবীর নিরক্ষরেখার উপরে প্রায় ৩৫,৭৮৬ কিলোমিটার উচ্চতায় কক্ষপথে থাকে। এই উচ্চতায় স্যাটেলাইটের গতি পৃথিবীর আহ্নিক গতির সমান রাখা যায়। এ কারণে পৃথিবী থেকে এই স্যাটেলাইটকে আকাশে আপাত স্থির দেখা যায়।
সহজ কথায় সৌর ব্যতিচার
বছরে নির্দিষ্ট কিছু দিনে পৃথিবী, স্যাটেলাইট এবং সূর্য ঠিক একই সরলরেখায় চলে আসে। অর্থাৎ, আমরা পৃথিবী থেকে যে স্যাটেলাইটের দিকে অ্যান্টেনা তাক করে রাখি, সূর্যও ঠিক তার পেছনে অবস্থান করে। এ সময় স্যাটেলাইট থেকে যে সংকেত পাওয়া যায় তার চেয়ে সূর্য থেকে আসা 'নয়েজ' বেশি থাকে।
সান আউটেজের স্থায়িত্ব ও তীব্রতা নির্ভর করে রিসিভিং অ্যান্টেনার আকার, স্যাটেলাইটের অবস্থান এবং বছরের কোন সময়ে ঘটছে তার ওপর। এর প্রভাবে দর্শকরা টিভিতে ছবি ঝিরঝির করা, ছবি আটকে যায় বা পিক্সেল আকৃতিতে ভেঙে যায় এবং শব্দে সমস্যা হয়। কখনো কখনো কিছুক্ষণের জন্য চ্যানেল পুরোপুরি বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
সান আউটেজের কারণে স্যাটেলাইটনির্ভর ইন্টারনেট, ডেটা ট্রান্সমিশন এবং টেলিযোগাযোগ পরিষেবা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ দিয়ে ৪১টি স্থানীয় ও ১৪টি বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করা হয়। ফলে সান আউটেজের সময় এই চ্যানেলগুলো দেখতে সমস্যা হবে।
সান আউটেজ সাধারণত বছরে দুবার—ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে মার্চের শুরু পর্যন্ত এবং সেপ্টেম্বর মাসের শেষ থেকে অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত দেখা যায়।
Comments