যমজ সন্তানের বাবা কি ভিন্ন হতে পারে? বিজ্ঞান যা বলছে
যমজ সন্তান বলতে সাধারণত আমরা বুঝি, একই মায়ের গর্ভে কয়েক মুহূর্ত বা সময়ের ব্যবধানে জন্ম নেওয়া দুটি শিশু। এদের চেহারা, আচরণ এবং জিনগত বৈশিষ্ট্যে অনেক মিল থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এদের বাবা হন একজনই। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটাও অসম্ভব নয়। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, একই মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া যমজ সন্তানের বাবা দুজন আলাদা ব্যক্তি হতে পারেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই অতি বিরল ঘটনাকে বলা হয় 'হেটেরোপ্যাটার্নাল সুপারফেকান্ডেশন'। সম্প্রতি ব্রাজিলে ১৯ বছর বয়সী এক নারীর যমজ সন্তানের বাবা ভিন্ন—এমন দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে ভিয়েতনামেও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এমন একটি ঘটনা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল। ঘটনাটি নিয়ে ওই বছরের ৯ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল বিবিসি।
হেটেরোপ্যাটার্নাল সুপারফেকান্ডেশন কী? সহজ কথায়, 'হেটেরো' অর্থ ভিন্ন, 'প্যাটার্নাল' অর্থ বাবা এবং 'সুপারফেকান্ডেশন' অর্থ একই মাসিক ঋতুচক্রে একাধিক ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণ। অর্থাৎ, একই মাসিক চক্রে মায়ের গর্ভ থেকে একাধিক ডিম্বাণু নির্গত হয়ে যদি দুজন ভিন্ন পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়, তখন এই বিরল যমজদের জন্ম হয়।
কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির গবেষণা নিবন্ধ অনুযায়ী, এটি মূলত 'ফ্র্যাটার্নাল' বা ভিন্ন যমজ হওয়ারই একটি বিশেষ প্রক্রিয়া, যেখানে বাবার পরিচয় থাকে ভিন্ন। অর্থাৎ, এ ধরনের যমজ শিশুদের মধ্যে সাধারণত চেহারায় মিল থাকে না।
কেন এবং কীভাবে ঘটে?
এর মূল কারণ হলো 'হাইপার ওভুলেশন'। স্বাভাবিক মাসিক চক্রে একজন নারীর ডিম্বাশয় বা ওভারি থেকে মাসে একটিমাত্র পরিপক্ক ডিম্বাণু নির্গত হয়। কিন্তু হাইপার ওভুলেশনের ক্ষেত্রে হরমোনের প্রভাবে—বিশেষ করে ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন বা এফএসএইচ বেশি থাকলে—একই মাসে দুটি বা তার বেশি ডিম্বাণু নির্গত হতে পারে। এটি একই ডিম্বাশয় বা ভিন্ন ডিম্বাশয় থেকেও হতে পারে।
নারীর প্রজননতন্ত্রে শুক্রাণু প্রায় ৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু ডিম্বাণু বেঁচে থাকে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা। এখন হাইপার ওভুলেশনের ফলে যদি কোনো নারীর শরীরে দুটি ডিম্বাণু থাকে এবং তিনি ওই অল্প সময়ের ব্যবধানে (ওভুলেশন পিরিয়ডে) দুজন ভিন্ন পুরুষের সঙ্গে মিলিত হন, তবে দুটি আলাদা ডিম্বাণু দুজন ভিন্ন পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হতে পারে।
ফলাফল হিসেবে, মায়ের গর্ভে দুটি ভ্রূণ পাশাপাশি বড় হতে থাকে। জন্ম নেওয়া শিশু দুটি যমজ হলেও তারা মূলত সৎ ভাই বা বোনের মতো হয়।
যমজের রহস্য
আইডেন্টিক্যাল টুইনস (অভিন্ন যমজ): একটি ডিম্বাণু ও একটি শুক্রাণুর মিলনে একটি ভ্রূণ তৈরি হয়। পরে সেই ভ্রূণটি ভেঙে দুটি আলাদা অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। এদের ডিএনএ বা জিনগত বৈশিষ্ট্য ১০০ শতাংশ এক হয়। এরা সাধারণত দেখতে ও আচরণে একই রকম হয়।
ফ্র্যাটার্নাল টুইনস (ভিন্ন যমজ): দুটি আলাদা ডিম্বাণু দুটি আলাদা শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত হয়। এদের জিনগত মিল থাকে সাধারণ ভাই-বোনের মতোই (৫০ শতাংশ)। তবে যখন বাবা ভিন্ন হয় (হেটেরোপ্যাটার্নাল), তখন এই যমজদের জিনগত মিল থাকে আরও কম, প্রায় ২৫ শতাংশের মতো। এদের চেহারা বা শারীরিক গঠনে মিল না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
সুপারফিটেশন কী
যমজদের জন্মে সুপারফিটেশন নামে আরেকটি প্রক্রিয়া আছে। তবে এটা মানুষের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিরল। ধরুন, কেউ একজন অন্তঃসত্ত্বা। ওই অবস্থায় আরেকটি আলাদা মাসিক চক্রে তিনি আবারও অন্তঃসত্ত্বা হলেন। একেই সুপারফিটেশন বলে।
কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এটার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ একজন নারী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর সাধারণত নতুন করে ডিম্বাণু নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। তবে অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণিদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে ইঁদুর কিংবা বাদুড়ের ক্ষেত্রে।


Comments