ক্ষতিপূরণ চায় সিটি ইউনিভার্সিটি, দুঃখ প্রকাশ ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষের
'তুচ্ছ' ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাভারের খাগান এলাকায় অবস্থিত সিটি ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় রাতভর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক শাখা, রেজিস্ট্রার শাখা আইটি শাখাসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে লুটপাট চালিয়ে নগদ টাকা, কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি লুট করেছে।
সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা উজ্জল সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। তারা ককটেল, শটগান, গানপাউডার নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। গেটে আগুন দেয়। তারা আমাদের অ্যাকাউন্টস সম্পূর্ণ লুট করে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, তারা অ্যাডমিন অফিস, রেজিস্ট্রার অফিস, ভিসি, প্রোভিসি, ডেপুটি ডিরেক্টেরের রুমসহ বিভিন্ন রুমের মামলাল লুট করে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া কম্পিউটার ল্যাবে যেসব কম্পিউটার ছিল, তারা সবই লুটে করে নিয়ে গেছে। তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার আগে করতে হবে। তারা কোনোভাবেই শিক্ষার্থী নয়, সন্ত্রাসী। তারা রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর রাত সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালিয়েছে।
সিটি ইউনিভার্সিটির চিকিৎসক হেলাল উদ্দিন বলেন, সিটি ইউনিভার্সিটি একটি ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান। আমরা সব চেয়ে কম খরচে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিই। গতকাল রাতে আমাদের ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী অসাবধানতাবসত ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর গায়ে থুতু ফেলে। সঙ্গে সঙ্গেই সে সেখানে ক্ষমা চায়। সমস্যা সমাধান হয়। পরে ড্যাফোডিলের হাজার হাজার শিক্ষার্থী আমাদের ক্যাম্পাসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালায়।
তিনি বলেন, তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের মারধর করে গেটে অগ্নিসংযোগ করে নয়টার মত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো ডিপার্টমেন্ট ও শাখায় ভাঙচুর লুটপাট চালায়। পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব কাউকেই পাইনি। কেউ সহযোগিতা করেনি। আমাদের অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এ ঘটনার বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই। ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষকে এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহানুর বলেন, ক্যাম্পাসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের সময় প্রসাশনিক ভবনের ভেতর থেকে রাত তিনটার দিকে দেশীও অস্ত্রসহ আমরা ১০ থেকে ১১ জনকে আটক করি। এ সময় ছয়জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠাই। এখনো তাদের পাঁচজন আমাদের হেফাজতে রয়েছে। ড্যাফোডিলের ভিসি এবং চেয়ারম্যানকে এখানে আসতে হবে। তবেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। নয়তো আমরা তাদের ছাড়ব না।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজিস ডিপার্টমেন্টের ডিন অধ্যাপক বিমল চন্দ্র দাস সিটি ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেন এবং ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চিত্র দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, গতরাতে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির মধ্যে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনা ফিজিক্যালি দেখার জন্য এসেছি। আমার সঙ্গে আমাদের ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা রয়েছেন এবং সিটি ইউনিভার্সিটির ভিসি স্যার রয়েছেন।
'এখানে যে ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, সেজন্য আমি সত্যি সত্যি লজ্জিত এবং এর জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ধ্বংসযজ্ঞ হতে পারে, এটা আমাদের ধারণার বাইরে। এটা যারাই ঘটিয়েছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।'
তিনি বলেন, আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী এখানে আটক আছে। ভিসি স্যারের নির্দেশে তাদের ছাড়িয়ে নিতে এখানে এসেছি। এখানকার শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।
বেলা পৌনে ২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থী সিটি ইউনিভার্সিটির ভেতরে আটকে ছিলেন।


Comments