স্কুলের মাঠ ভাড়া দিয়ে ফার্নিচার মেলা

স্কুলের মাঠে তাঁবু খাটিয়ে তৈরি করা হয়েছে শতাধিক ফার্নিচারের দোকান। ছবি: মোস্তফা সবুজ

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল বিরাট দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়। স্কুলটিকে এখন বাইরে থেকে দেখে যে কারো মনে হতে পারে একটি হাট বা বাজার। স্কুলের মাঠে তাঁবু খাটিয়ে তৈরি করা হয়েছে শতাধিক ফার্নিচারের দোকান। ফলে, শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলতে পারছেন না।

অবৈধভাবে আয়োজন করা মেলাটিকে কর্তৃপক্ষ পুরনো ঐতিহ্যে বলে দাবি করছেন। আর তা শুনেই নীরব হয়ে আছেন স্থানীয় প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে এই ঐতিহ্যের অজুহাতে এই মেলার আয়োজন করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অবৈধভাবে আয়োজন করা মেলাটিকে কর্তৃপক্ষ পুরনো ঐতিহ্যে বলে দাবি করছেন। ছবি: মোস্তফা সবুজ

অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মাস হল মাত্র ৫০ হাজার টাকায় স্কুলটির পুরো মাঠ ভাড়া দিয়ে ফার্নিচারের মেলা বসানো হয়েছে। সেখানে মেলা চলায় শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলতে পারছেন না। মেলার মাঠে অনেক বহিরাগতদের সমাগম হয়। এতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশকে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

২০০৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জানিয়েছিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে কোনো ধরনের মেলা, সার্কাস বা বাণিজ্যিক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া যাবে না।

এ ছাড়াও, প্রাকৃতিক জলাধার আইন-২০০০ এর ধারা ৫ অনুযায়ী, খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড কিংবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাঠে মেলা বসানোয় শিক্ষার্থীরা মাঠে নামার সুযোগ পায় না। টিফিন বিরতিতে আমরা মাঠে খেলাধুলা করতে পারছি না। আমরা শুধু বই নিয়ে আসি এবং ক্লাস শেষে চলে যাই। দীর্ঘদিন আমাদের এভাবে চলতে হবে।'

এক মাস হল মাত্র ৫০ হাজার টাকায় স্কুলটির পুরো মাঠ ভাড়া দিয়ে ফার্নিচারের মেলা বসানো হয়েছে। ছবি: মোস্তফা সবুজ

এই স্কুলের সাবেক এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০-২৫ বছর ধরে এই স্কুলের মাঠে কাঠের ফার্নিচারের মেলা বসানো হয়। এতে ৩-৪ মাস বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়। মেলা থেকে যে টাকা আয় হয় তাও ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়। এই আয় দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করা হয় না। একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবকও একই কথা বলেছেন।

স্কুলের মাঠ ভাড়া দিয়ে মেলার আয়োজন করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিরাট দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রোকনুজ্জামান সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই মাঠে মেলা হয়।'

স্কুলের মাঠ ভাড়া দিয়ে মেলার আয়োজন করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, 'এটা অনেকদিন ধরেই হচ্ছে। সেভাবেই রেজুলেশন করা আছে।'

মেলার অনুমোদন কে দিয়েছেন জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, 'ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন দিয়ে মাঠ ভাড়া দেওয়া হয়েছে।'

বিরাট দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আলতামাসুল ইসলাম শিল্পী বলেন, 'এ বছর স্কুলের মাঠে মেলা করার অনুমতি আমি দিইনি। মেলা কর্তৃপক্ষ এবং স্কুল কীভাবে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এটা করেছে আমার জানা নেই। আমাকে তারা বলেছেন, বিদ্যালয়ের মাঠে কাঠের ফার্নিচারের মেলা নাকি ঐতিহ্য, তাই এটা করছেন।'

মেলা চলায় শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলতে পারছেন না। ছবি: মোস্তফা সবুজ

তিনি আরও বলেন, 'গত বছর আমি মেলা করার অনুমতি দিয়েছিলাম, সেখান থেকে মেলার আয়োজকরা ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন স্কুল ফান্ডে। এবার ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো দেয়নি বলে আমি শুনেছি।'

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম পারভেজ বলেন, 'স্কুলের মাঠে ফার্নিচারের মেলা হচ্ছে জানার পরে প্রধান শিক্ষকের কাছে কারণ জানতে চেয়েছিলাম। জবাবে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানান, স্কুলের মাঠে কাঠের মেলা রাজাবিরাট মেলার ঐতিহ্য। দীর্ঘদিন ধরে এ মেলা হয়।'

স্কুলের মাঠে বাণিজ্যিক মেলা বসানোর সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, 'সুযোগ নেই, কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে এটা তাদের ঐতিহ্য। তবুও আমরা মেলা বন্ধ করতে বলেছি।'

বিরাট দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে দীর্ঘদিন ধরে ফার্নিচারের মেলা হচ্ছে জেনেও গোবিন্দগঞ্জ স্থানীয় প্রশাসনের কোনো উদ্বেগ নেই। তারা ঐতিহ্যের কথা শুনে নীরব ভূমিকা পালন করছেন।

জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই মেলা আইনগতভাবে সঠিক নয়। বিরাট দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়। বেসরকারি স্কুলের ওপর আমার তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। এখানে ম্যানেজিং কমিটি আছে। তারাই মেলার অনুমতি দিয়েছে। আমরা দেইনি। তবুও আমি উপজেলা মাধ্যমিক অফিসারকে মেলা বন্ধ করতে বলেছি।'

বেআইনিভাবে স্কুলের মাঠে বাণিজ্যিক মেলাকে ঐতিহ্য বলে বৈধতা দেওয়ার কোনো বিধান আছে কিনা জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, 'ঐতিহ্যের অজুহাতে কোনোভাবে এই মেলাকে বৈধতা দেওয়া যায় না। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলছি, বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে কাঠের ফার্নিচারের মেলা সরিয়ে নেওয়া হয়।'

Comments

The Daily Star  | English
honor smartphone inside

How to build a smartphone

Smartphones feel inevitable in the hand, yet each one begins as a set of drawings, components and hypotheses. The journey from concept to finished device is a carefully sequenced collaboration between design labs, supplier networks and high-throughput assembly lines. In leading electronics hubs across Asia, that journey can take as little as days once a design is frozen and parts are on site.

2h ago