ক্রেতা কম, লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামে পশুর হাটে আশানুরূপ বিক্রি নেই

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর হাট। ৪ জুলাই ২০২২। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে ২৪ পশুর হাটে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাটগুলোয় বেড়েছে গরু-ছাগলের সরবরাহ।

ক্রেতা সংকট থাকায় পশু বিক্রি করে প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন না খামারিরা। এ জন্য তাদের মধ্যে হতাশা দেখা যায়। অনেকে কম দামে কোরবানির পশু বিক্রিতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

গতকাল সোমবার লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন হাট ঘুরে এমনটি দেখা গেছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর হাটের ইজারাদার সদস্য রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদুল আজহা উপলক্ষে যাত্রাপুরে সাপ্তাহিক হাটে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার গরু-ছাগল বিক্রির জন্য আনা হচ্ছে। কিন্তু, বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০টি। ক্রেতার অভাবে বাকি গরু-ছাগল ফেরত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।'

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

তিনি জানান, বন্যার কারণে হাটে কোরবানি পশুর সরবরাহ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া, জেলার বাইরে থেকে কোনো পাইকার আসছেন না। পশুর সরবরাহ বেশি থাকায় দাম একটু কম। তিনি বলেন, 'হাটে এখন বিক্রেতাদের অনেক ভিড়। ক্রেতার সংখ্যা বিক্রেতার চেয়ে অর্ধেকেরও কম।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি পশুর হাটের ইজারাদার সদস্য সুর ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ঈদুল আজহায় গরু কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পাইকার এসেছিলেন। এ বছর সে তুলনায় পাইকারের সংখ্যা কম। জেলার বাইরে থেকে পাইকার না আসায় গরুর দামও কম।'

'বন্যার কারণে পশুর সরবরাহ অনেক বেড়েছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'হাটে যে সংখ্যক পশু বিক্রির জন্য আনা হচ্ছে তার মাত্র অর্ধেক পশু বিক্রি হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর হাটে গরু কিনতে আসা ক্রেতা তরিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাটে কোরবানির গরুর সংখ্যা অনেক। পছন্দমতো সাধ্যের মধ্যে গরু কিনতে পেরে খুশি।'

এই হাটে গরু বিক্রি করতে আসা চর সাহেবের আলগার কৃষক মনসুর আলী (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, '৩টি গরু বিক্রির জন্য এনেছিলাম। একটি বিক্রি করতে পেরেছি। দাম কম হওয়ায় বাকি ২টি গরু বাড়িতে ফিরে নিয়ে যাচ্ছি।'

'সংসারে টাকার প্রয়োজন হওয়ায় একটি গরু ৪৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এক মাস আগে এই গরুটির দাম ছিল ৬০ হাজার টাকা। এ বছর গরু পালন করে লাভবান হতে পারিনি।'

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার শালমারা গ্রামের কৃষক সুরজ্জামান মিয়া (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গো-খাদ্যের দাম এত বেশি বেড়েছে যে গরু পালন করে লাভবান হতে পারছি না। ২টি গরু পালন করেছি। আশা ছিল ঈদুল আজহায় গরু ২টি বিক্রি করে দেড় লাখ টাকার মতো পাওয় যাবে। দাম কম হওয়ায় ৬০ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি করেছি।

'বিক্রির জন্য গরু হাটে নিয়ে যাই। দাম কম হওয়ায় আবার ফিরিয়ে আনি। গত এক সপ্তাহ ধরে এভাবে হাট-বাড়ি আনা-নেওয়া করছি,' যোগ করেন তিনি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে এ বছর প্রায় এক লাখ গরু কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। হাটগুলোয় চাহিদার চেয়ে বেশি গরু সরবরাহ করা হচ্ছে।'

কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যার কারণে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকার কৃষকরা গরু বিক্রি করতে হাটে ভিড় করছেন। অনেকে কম দামে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

The war after the war: Pakistan’s POWs and postal propaganda

Postal evidence supports the view that a propaganda campaign was underway as soon as the army surrendered.

23h ago