১ মণ ধান উৎপাদন খরচ ৮০০ বিক্রি ৭৬০ টাকা

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি হাটে ২ মণ ধান বিক্রি করতে এসেছিলেন কৃষক আব্দুল হামিদ (৬০)। হাটে প্রায় দেড় ঘণ্টা বসে থাকার পর তিনি প্রতিমণ ধান ৭৬০ টাকা বিক্রি করেন। আশা ছিল গত বছরের মতো ৯৪০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করবেন। কমদামে ধান বিক্রি করে হতাশ হয়ে পড়েন তিনি।

এ দৃশ্য গত মঙ্গলবার বিকালের। আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের শালমরা গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাইকাররা ধানের দাম যখন কম বলছিলেন তখন ভেবেছিলেন ধানগুলো বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাব। কিন্তু, পরিবারে নগদ টাকার প্রয়োজন হওয়ায় বাধ্য হয়েই কমদামে ধান বিক্রি করলাম।'

তিনি আরও বলেন, 'এ বছর ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করে ৮৯ মণ ধান পেয়েছি। তেল, সার ও কীটনাশকের দাম বেশি। শ্রমিক খরচও বেড়ে যাওয়ায় প্রতিমণ ধান উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮০০ টাকা। ধান চাষ করে এ বছর লোকসানের মুখে পড়েছি। ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষ করা লাভ ছিল।'

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

একই হাটে ভারত চন্দ্র বর্মণ (৬৭) এসেছিলেন ৩ মণ ধান বিক্রি করতে। আদিতমারী উপজেলার পূর্ব দৈলজোর গ্রামের এই কৃষক ৪ বিঘা জমি থেকে ধান পেয়েছেন প্রায় ৬৮ মণ। তিনি প্রতিমণ ধান ৭৮০ টাকা দরে বিক্রি করায় হতাশ হয়ে পড়েন। গত বছর এই সময়ে তিনি প্রতিমণ ধান এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন।

ভারত চন্দ্র বর্মণ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ধান উৎপাদনে গত বছরের তুলনায় অনেক খরচ বেশি। অথচ এ বছর ধান বিক্রি করতে হচ্ছে গত বছরের চেয়ে কম দামে।'

'ধানের বাজারদর কেন এত কম তা বুঝতে পারছি না। ধানের বাজারদর এ রকম থাকলে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন,' যোগ করেন তিনি।

দুড়াকুটি হাটে ধানের পাইকার মশিউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সব পাইকার এখনো ধান কেনা শুরু করেননি। অধিকাংশ পাইকারের গুদামে গত বছরের ধান মজুদ আছে। সরকারিভাবে ধান ও চাল কেনা শুরু হলে বাজারে ধানের দাম বাড়বে। বর্তমানে সব হাট-বাজারে ধানের বাজারদর একই।'

লালমনিরহাট শহরে ধানের পাইকার নুরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টির কারণে ধান কিনছি না। এ ছাড়া, এখনো কৃষকরা পুরোদমে ধান বিক্রি শুরু করেননি। আবহাওয়া ভালো হলে ধান কেনা শুরু করবো। আপাতত আমাদের মজুদে যে ধান আছে তা থেকে চাল করা হচ্ছে।'

কৃষি মার্কেটিং অফিস সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা থেকে ৭৪০ টাকায়, মাঝারি ধরনের ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৬০ টাকা থেকে ৭৮০ টাকায় এবং চিকন বা উন্নত ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকায়।

গত বছর একই সময়ে প্রতিমণ ধান বিক্রি হয়েছিল ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০ টাকায়। বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা থেকে ৪২ টাকায়, মাঝারি চাল ৪৪ টাকা থেকে ৪৬ টাকায় এবং চিকন বা উন্নত চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি মার্কেটিং কর্মকর্তা আব্দুর রহিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হলে বাজারে ধানের দর বাড়বে। তবে বর্তমান ধানের বাজারদরে কৃষকরা হতাশ। বৈরি আবহাওয়ার বাজারে চালের দাম বেশি হলেও ধানের দাম কম। আবহাওয়া অনুকূলে আসলে কয়েকদিনের মধ্যে চালের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে আসবে।'

কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর লালমনিরহাটে ৪৭ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমি থেকে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৯ মেট্রিক টন এবং কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১৬ হাজার ১২০ হেক্টর জমি থেকে বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন।

খাদ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ২৭ টাকা কেজি দরে লালমনিরহাটে ৬ হাজার ৫৭৮ মেট্রিক টন ধান ও ৪০ টাকা কেজি দরে ১০ হাজার ৭৭৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কুড়িগ্রামে ১৬ হাজার ৫১৬ মেট্রিক টন ধান ও ২১ হাজার ৭২১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুল রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ধানের ফলন আশানুরূপ হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ধান উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। এখনো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে। প্রতিমণ ধান এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে না পারলে কৃষকের লোকসান হবে। তবে ধানের বাজারদর বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা খাদ্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে সংগ্রহ শুরু হয়নি। লটারির মাধ্যমে কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে খুব শিগগির ধান সংগ্রহ শুরু হবে। চাল সংগ্রহ করা হবে তালিকাভুক্ত মিল-চাতাল মালিকদের কাছ থেকে।'

তিনি মনে করেন, 'সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হলে বাজারে ধানের দর বেড়ে যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Sugar, edible oil imports surge as dollar supply improves

Bangladesh’s imports of key essential commodities rose in the first quarter of fiscal year 2025-26 (FY26), supported by improved availability of foreign exchange and lower prices in the international market.

5h ago