ঢাকার ফুটপাতে ‘খানদানি’ চা-খানা

কেবল সোফার কারণেই ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠা এই চায়ের দোকানটির অবস্থান আগারগাঁওয়ের তালতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। ছবি: মামুনুর রশীদ

চওড়া ফুটপাতের একধারে ছায়া মেলে ধরেছে একটি নবীন বটগাছ। পাশেই গড়ে উঠেছে একটি আটপৌরে চায়ের দোকান। শহরের এমন অজস্র 'ছাপড়া' চা-খানাগুলোর সঙ্গে এটির পার্থক্য হলো, এখানে ক্রেতাদের বসার জন্য কয়েকটি বেঞ্চের সঙ্গে ২টি সোফাও রাখা হয়েছে।

চা কেবল একটি জনপ্রিয় পানীয়ই নয়, এটি আমাদের প্রতিদিনের যাপন-সংস্কৃতির সঙ্গে প্রিয় এক অভ্যাস হিসেবে হয়ে উঠেছে জীবনধারার অঙ্গ।

কবীর সুমনের 'এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই'— লাইনটি তোলপাড় করেছিল মধ্যবিত্ত বাঙালির নব্বইয়ের দশক। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এক কাপ চা এখনো ভিড় রাস্তায় একা করে দেয় দু'জনকে।

এই চা-খানার মূল ক্রেতা সিএনজি চালক, রিকশা চালক ও পথচলতি মানুষরা। ছবি: স্টার

তারও অনেক আগে কবি শামসুর রাহমান তার কবিতায় স্বাধীনতাকে তুলনা করেছিলেন 'চা-খানায় আর মাঠে ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ'র সঙ্গে।

ঢাকা নামের এই ঠাসবুনটের নগরে প্রেম, বন্ধুত্ব, আড্ডা, বিপ্লব, কথা কাটাকাটি— সবখানেই উপস্থিত অতি আহ্লাদের ধোঁয়া ওঠা পেয়ালা। এক কালের প্রায় নিষিদ্ধ এই পানীয় এখন সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পরম আরাধ্য।

কিন্তু শহরের নামী-দামি চা-দোকানের বাইরে ফুটপাতের দোকানে চা-পিপাসুদের জন্য সোফার এমন ব্যবহার বিরলই বটে।

কেউ কেউ কেবল সোফা দেখেই এখানে বসে যান এক কাপ চায়ের জন্য। ছবি: স্টার

কেবল সোফার কারণেই ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠা এই চায়ের দোকানটির অবস্থান আগারগাঁওয়ের তালতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে শেওড়াপাড়ার দিকে যেতে খানিকটা এগিয়ে, সড়কের ডানপাশের ফুটপাতে। তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের দেয়ালঘেঁষে গড়ে তোলা এই দোকানের মালিক মো. দুলাল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি।

দুলালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তার এই চা-খানার বয়স অন্তত ২০ বছর। সামনের বটগাছটিও তার নিজের হাতে লাগানো। দোকানের বেশিরভাগ গ্রাহক রিকশাচালক, সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ও পথচলতি মানুষেরা।

দুলাল জানান, ২ বছর আগে দোকানের এক 'বান্ধা কাস্টমার' তার বাড়ির পুরনো সোফা ২টি তাকে ব্যবহার করতে দেন। এরপর থেকে সোফা ২টি দোকানেই আছে। পথচলতি নতুন কেউ এটি দেখে অবাক হন। বসে যান এক কাপ চায়ের জন্য।

সামনে লাগানো বটগাছটিও এই চা-খানার আরেক আকর্ষণ। ছবি: স্টার

আবার ভরদুপুরে কিংবা ক্রেতার চাপ কম থাকলে দুলাল নিজেও কখনো কখনো বিশ্রামের জন্য এই সোফাতে একটু গড়িয়ে নেন। তখন এটি তার কাছে এটি হয়ে ওঠে 'সোফা কাম বেড'।

এই 'সোফা কাম বেড' শব্দত্রয়ী কাউকে মনে করিয়ে দিতে পারে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় রচিত একই নামের একটি বিখ্যাত রম্য গল্পের কথা। ১৯৭৯ সালে গল্পটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার পর এটি এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, আকাশবাণী থেকে এই গল্পটির একটি শ্রুতিনাটক তৈরি করে তা কয়েক খণ্ডে প্রচার করা হয়েছিল। তরুণ বন্দোপাধ্যায়, মমতাশংকর, রমাপ্রসাদ বণিকসহ তখনকার বেশ কিছু জনপ্রিয় ও বিখ্যাত অভিনেতা অংশ নিয়েছিলেন ওই নাটকে।

Comments

The Daily Star  | English

NEIR launch deferred to January 1

NEIR was scheduled to be implemented on December 16 this year

15m ago