৮০০ টাকার নৌকা ভাড়া এখন ৫০ হাজার

ছবি: শেখ নাসির/স্টার

সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দি হাজারো মানুষ এখনো উদ্ধারের অপেক্ষায়। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ভাড়ার কারণে তাদের উদ্ধারের জন্য স্বজনরাও নৌকা নিয়ে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।

আবার কোথাও কোথাও অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও নৌকা মিলছে না।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষের স্বজনেরা ভিড় করছেন সিলেট শহরের পার্শ্ববর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর ঘাটে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এই ঘাটে শতাধিক যাত্রীবাহী নৌকা ছাড়াও বালুবাহী নৌকাও বন্যাদুর্গতদের সরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। কিন্তু নৌকার মালিক ও মাঝিরা সব নৌকার ভাড়া অন্তত শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

সালুটিকর থেকে কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল গ্রামের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। স্বাভাবিক সময়ে এই পথটুকু নৌকায় যেতে ৮'শ থেকে ১ হাজার টাকা খরচ হয়। এখন এই ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে মাঝিরা ভাড়া হাঁকছেন ৫০ হাজার টাকা।

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে গ্রামের বাড়ি থেকে সিলেট শহরে নিয়ে আসতে গিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন মারুফ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হলেও নৌকার মাঝি রাজি হননি।

এদিন বিকেলে সালুটিকর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, জনপ্রতি হিসেবে আগে যে ভাড়া ২০ থেকে ৫০ টাকার ভেতর ছিল, এখন তা ১ থেকে দেড় হাজার টাকায় ঠেকেছে। ভাড়া নিয়ে দরকষাকষির সুযোগও রাখছেন না মাঝিরা।

একই অবস্থা সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত প্রতিটি এলাকায়। সিলেটের ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ জানান, 'আমার ড্রাইভারের পরিবার সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় গ্রামে পানবন্দি হয়ে আছে। তাদের উদ্ধারে অনেক টাকা খরচ করেও একটা নৌকা ভাড়া করতে পারিনি। পরে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা তাদেরকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী একটি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন।'

এদিকে বন্যায় আটকে পড়াদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে সিলেট শহর থেকে অসংখ্য মানুষ সালুটিকর ঘাটে গেলেও অতিরিক্ত নৌকা ভাড়ার কারণে তারা পিছিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।

গতকাল সিলেট শহর থেকে কিছু মাদরাসা শিক্ষার্থী লেগুনায় করে ত্রাণ নিয়ে সালুটিকর ঘাটে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের কাছে ৪০ হাজার টাকা ভাড়া চাওয়া হয়।'

এ ব্যাপারে আহসান হাবিব নামের একজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে নৌকা নিতে পারছি না।'

এদিকে ত্রাণ কার্যক্রম ও উদ্ধার তৎপরতার জন্য অতিরিক্ত ভাড়া দিতে রাজি হলেও কেউ কেউ নৌকা পাচ্ছেন না বলেও জানান।

এমন একজন হচ্ছেন আব্দুল জব্বার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার। তার ভাষ্য, তিনি অতিরিক্ত ভাড়া দিতে রাজি ছিলেন। তারপরেও দুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি কোনো নৌকা পাননি।

এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিছুটা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও উদ্ধার কাজের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক নৌকা আমরা পাচ্ছি না। কিন্তু এত বেশি ভাড়া হাঁকা হচ্ছে বলে জানা ছিলো না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

One-third of local private banks keep NPLs below 10%

Seventeen lenders keep healthier balance sheets amid rising industry bad loans through disciplined lending, close monitoring and strong governance

10h ago