চমেক হাসপাতালে এমআরআই সেবা বন্ধের আজ অষ্টম দিন

একমাত্র মেশিনটি বিকল হওয়ায় গত ১৬ মে থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) সেবা বন্ধ আছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা সুজিত দে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজে (পায়ের ধমনী সংকুচিত হয়ে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বিঘ্ন) ভুগছিলেন। চিকিৎসক তার পায়ের এমআরআই করানোর পরামর্শ দিলে তিনি গত বৃহস্পতিবার চমেক হাসপাতাল এসেছিলেন পায়ের এমআরআই করতে।

কিন্তু হাসপাতালে এমআরআই সেবা বন্ধ থাকায় তাকে ফিরে যেতে হয়।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েকদিন ধরে পায়ে ব্যথা হচ্ছিল। ডাক্তার দেখালে তিনি পায়ের এমআরআই করার পরামর্শ দেন। চমেক হাসপাতালে ৩ হাজার টাকায় এমআরআই করা যায়। কিন্তু এই সেবা বন্ধ থাকায় আমাকে এখন বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে এই পরীক্ষার জন্য আমাকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।'

এমআরআই সেবা না পেয়ে তার মতো অনেক রোগীকে চমেক হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখানে দৈনিক ৩০ জনের বেশি রোগী এমআরআই পরীক্ষা করাতে আসেন। নিউরো সার্জারি, নিউরো মেডিসিন, জেনারেল সার্জারি, অর্থোপেডিকস, কার্ডিওলজি এবং মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীদের সবচেয়ে বেশি এমআরআই পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

যোগাযোগ করা হলে চমেক হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুবাস মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে এমআরআই পরীক্ষা করার সুযোগ আছে।'

তিনি জানান, রেফার করা রোগীদের এ হাসপাতালে এই পরীক্ষার জন্য ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়।

বেসরকারি হাসপাতালে এমআরআই করতে ৯ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয় বলে জানান তিনি।

হঠাৎ কেন মেশিনটি বিকল হয়ে গেল জানতে চাইলে ডা. সুবাস বলেন, 'আমি এ বিষয়ে জানি না। একটি মেশিন যে কোনো সময় বিকল হয়ে যেতে পারে।'

'টেকনিক্যাল লোকেরা এসে এটি দেখে গেছেন,' যোগ করেন তিনি।

কবে নাগাদ হাসপাতালে এমআরআই পরীক্ষা চালু হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'টেকনিক্যাল লোকেরা বলেছেন যে মেশিনের কুলিং সিস্টেমে সমস্যা আছে। মেরামতে কিছুটা সময় লাগবে।'

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, 'মেশিনটির সরবরাহকারী কোম্পানির সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কম্প্রিহেন্সিভ মেইনটেন্যান্স চুক্তি ছিল না। তাই ওয়ারেন্টি সময়ের পরে সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।'

'কোম্পানি কিছু যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের জন্য ৮৪ লাখ টাকা দাবি করেছে। বিষয়টি জানিয়ে আমরা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি,' বলেন তিনি।

সূত্র জানায়, হিটাচি ১.৫ টেসলা মেশিনটি ২০১৭ সালের অক্টোবরে চমেক হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে স্থাপন করা হয়েছিল। মেশিনটি ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হয়েছিল।

চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান ডা. কামাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চমেক হাসপাতালের এমআরআই সেবা দরিদ্র রোগীদের জন্য আশীর্বাদ। আমার ওয়ার্ডের দৈনিক গড়ে প্রায় ১০ জন রোগীর জন্য এমআরআই পরীক্ষা প্রয়োজন।'

'মেশিনটি ইনস্টল করার আগে আমরা রোগীদের এমআরআই পরীক্ষার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে রেফার করতাম। কিন্তু অনেক দরিদ্র রোগী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের খরচ বহন করতে পারেন না। তাই তারা অর্থ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করতেন। এ কারণে রোগীদের সঠিক চিকিৎসা শুরু করতে বিলম্ব হতো,' বলেন তিনি।

হাসপাতালে এমআরআই সেবা পাওয়া আরেকটি কারণেও গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'অনেক সময় অনেক গুরুতর রোগীকে হাসপাতালের বাইরে স্থানান্তর করা যায় না। অনেক সময় বৃষ্টি হলে গুরুতর অসুস্থ রোগীরা বাইরে যেতে পারেন না। সেই রোগীরা চমেক হাসপাতালের এমআরআই সেবা থেকে উপকৃত হয়।'

শিগগির চমেক হাসপাতালে এমআরআই সেবা আবার শুরু হবে বলে আশা করেন ডা. কামাল।

Comments

The Daily Star  | English

Sugar, edible oil imports surge as dollar supply improves

Bangladesh’s imports of key essential commodities rose in the first quarter of fiscal year 2025-26 (FY26), supported by improved availability of foreign exchange and lower prices in the international market.

4h ago