এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২ বিভাগ একীভূত করছে সরকার

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগকে একীভূত করার কাজ শুরু হয়েছে। যথাযথ সমন্বয় ও জনসাধারণের জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের অভিপ্রায় থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই এর অনুমোদন দিয়েছে এবং প্রস্তাবটি শিগগির প্রি-এনআইসিএআর (জাতীয় প্রশাসনিক সংস্কার বাস্তবায়ন কমিটি) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আর এর জন্যই স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সাবেক সচিব গত ২৮ আগস্ট অবসর নিলেও সেখানে নতুন কোনো সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলেও তারা জানান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান গত ১১ অক্টোবর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার নীতিগতভাবে এই একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।'
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে পরিচালিত প্রি-এনআইসিএআর কমিটির কাজ হলো নতুন মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা গঠনের প্রস্তাব এবং জনবল অনুমোদনের প্রস্তাব পর্যালোচনা করা। এরপর এসব বিষয়ে সুপারিশ পাঠানো হয় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন এনআইসিএআর সভায়।
সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগকে একীভূত করে।
২০১৭ সালের মার্চে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে বিভক্ত করে।
বিভিন্ন অধিদপ্তর পুনর্গঠন করে এই দুটি বিভাগের অধীনে আনা হয় এবং প্রতিটি বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন সচিবকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, 'বিভাগ আলাদা করা হলেও কোনো উপকার হয়নি। উল্টো সমন্বয়হীনতা বেড়েছে এবং একই কাজ একাধিকবার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ জন্যই আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ বিভাগ দুটোকে একীভূত করার দাবি জানিয়ে আসছি।'
তিনি জানান, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দুটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম চলে যায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের আওতায় এবং কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো যায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে।
একইভাবে মেডিকেল কলেজগুলো স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অধীনে এবং এসব কলেজের হাসপাতাল বিভাগগুলো স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে রাখা হয়।
অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, 'এর ফলে সমন্বয়হীনতা ও কাজের পুনরাবৃত্তির সৃষ্টি হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে স্থায়ী স্বাস্থ্য কমিশন গঠন ও আলাদা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। তবে বাস্তবায়ন শুরু না হওয়া পর্যন্ত সমন্বয় ও সেবা নিশ্চিত করতে এই দুটি বিভাগ একীভূত করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।'
বিভাগের একজন যুগ্মসচিব সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ২৮ আগস্ট সাবেক সচিব সরোয়ার বারী অবসর নেন। একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগে নতুন কোনো সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়নি।'
কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মন্ত্রণালয় ভাগ করে ফেলার কারণে ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত না হয়ে উল্টো নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, 'এই একীভূতকরণের মূল লক্ষ্য হলো উন্নত সমন্বয় নিশ্চিত করা এবং কাজের পুনরাবৃত্তি এড়ানো।'
Comments