স্বাস্থ্যখাত সংস্কার: বাস্তবায়নের জন্য ৩৩ প্রস্তাব চূড়ান্ত

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সংস্কার কার্যক্রম শুরু করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের ৩৩টি সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য বেছে নিয়েছে।

এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ২৩টি বাস্তবায়ন করবে, আর বাকি সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ।

কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিতে হবে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ইতোমধ্যেই ২৩টি সুপারিশকে স্বল্পমেয়াদী (৬ মাস), মধ্যমেয়াদী (১-২ বছর) ও দীর্ঘমেয়াদি (২ বছরের বেশি) কর্মপরিকল্পনায় ভাগ করেছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সব সংস্থায় গত ১৩ আগস্ট সুপারিশগুলো পাঠিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের সাপ্তাহিক অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে। কর্মকর্তারা জানান, এসব বাস্তবায়ন প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দিতে হবে।

জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যবিশিষ্ট কমিশন গত ৫ মে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনাকে আরও জনবান্ধব করতে ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, অধিকাংশ সুপারিশের ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন বা সংশোধন এবং মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করতে হবে।

তিনি বলেন, 'কিছু ক্ষেত্রে সুপারিশ বাস্তবায়নে আন্তঃমন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত লাগবে। তবে কয়েকটি সুপারিশ মন্ত্রণালয়ের ছোটখাটো নির্দেশনা দিয়েই তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।'

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান বলেন, 'কিছু সুপারিশ তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন শুরু করা সম্ভব হলেও অনেকগুলোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন।'

গতকাল রোববার রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'কিছু সংবেদনশীল বিষয়ও রয়েছে, যেগুলো সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব না।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলোর প্রভাব আগামী তিন মাসের মধ্যেই কিছুটা দৃশ্যমান হবে।

যেসব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য বেছে নেওয়া হলো

বাস্তবায়নের জন্য বেছে নেওয়া সুপারিশগুলোর মধ্যে স্বল্পমেয়াদী সুপারিশগুলো হলো—বিদ্যমান স্বাস্থ্য আইন সংস্কার; প্রস্তাবিত স্বাস্থ্যসেবার শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগে সুপারিশ দেওয়ার জন্য সার্চ কমিটি গঠন; সেবা প্রার্থীদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা; বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্নের জন্য সার্ভিস সেন্টার স্থাপন; স্বাস্থ্যখাতের সব কেনাকাটায় ই-জিপি চালু করা; হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ; জাতীয় আবশ্যক ডায়াগনস্টিক তালিকা তৈরি ও তাদের খরচ নির্ধারণ; জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা; ই-প্রেসক্রিপশন ব্যবস্থা চালু করা; প্রেসক্রিপশন অডিট কার্যকর করা; অধিদপ্তরে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ইউনিট শক্তিশালী করা; এবং অপ্রয়োজনীয় টেস্ট ও ওষুধ প্রেসক্রাইব করা এবং ওষুধ কোম্পানির প্যাডে প্রেসক্রিপশন লেখা নিষিদ্ধ করা।

মধ্যমেয়াদী সুপারিশগুলো হলো—স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন ও সরকারকে কৌশলগত পরামর্শ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ হেলথ কমিশন গঠন; আবশ্যক ওষুধ বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা; ইন্টার্ন, ডাক্তার, পোস্ট-গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য হালনাগাদ বেতন কাঠামো তৈরি; স্বাস্থ্য তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন; এবং স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি।

দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলো হলো—বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসেসের জন্য একটি সচিবালয় স্থাপন; সরকারি হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মেসি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা; সবার জন্য একটি স্বতন্ত্র হেলথ আইডি চালু করা এবং সেখানে সব স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ; রেফারেল সিস্টেম চালু করা ও তা বাধ্যতামূলক করা; এবং খাদ্য, ওষুধ ও আইভিডি চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য মহাপরিচালকের অধীনে একটি প্রশাসন প্রতিষ্ঠা।

Comments

The Daily Star  | English

Ocean of mourners gather to pay tribute to Khaleda Zia

People from all walks of life arrive by bus, train and other modes of transport

2h ago