ঈদের আগে বঙ্গবাজারে নেই সেই ‘রমরমা’ ভাব

বঙ্গবাজার
আগুনে পোড়ার পর থেকে বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সে অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে চলছে বেচাকেনা। ছবি: পলাশ খান/স্টার

বঙ্গবাজারের কথা মনে হলেই প্রথমে মনে আসে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততার কথা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই খুচরা-পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্র বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সে সেই চিরচেনা ভিড় দেখা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রেতার সংখ্যা কম।

এ ঘটনা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে যেন 'মরার উপর খাঁড়ার ঘা'। গত এপ্রিলে এই মার্কেটে আগুন লাগার পর ঈদের বেচাকেনার মধ্যে যেটুকু পুষিয়ে নেওয়ার আশা করা হয়েছিল তা যেন নিরাশায় পরিণত হচ্ছে।

বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এখন তারা সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের অনেকের দাবি, ক্রেতার অভাবে তারা কেনা দামেই পণ্য ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

গতকাল শনিবার বঙ্গবাজারে নূর ফ্যাশন দোকানের মালিক মাসুদ রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেখুন, সকাল ৯টায় দোকান খুলেছি। ২ ঘণ্টা হয়ে গেল দোকানে কোনো ক্রেতা আসে নাই।'

তিনি আরও বলেন, 'সাধারণত ঈদের এমন সময়ে বেচা-বিক্রিতে ব্যস্ত থাকতাম।'

আগুন লাগার পর দোকানে বিক্রি কমে যাওয়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'আগে ঈদের সময় প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হতো। এখন তা কমে ১০ হাজারে দাঁড়িয়েছে।'

আগে যেখানে উৎসবের সময় রানা সপ্তাহে প্রায় ১০ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি করতেন, এ বছর তিনি ১ লাখ টাকা বিক্রির কথা ভাবছেন।

এ ছাড়াও, আগুনে তার দোকানে ৩০ লাখ টাকার কাপড় পুড়ে গেছে বলেও জানান রানা।

ব্যবসায়ীদের মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। ক্রেতারা এখন নিত্যপণ্য কেনার ওপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।

গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে প্রায় ৩ হাজার দোকান পুড়ে যায়। কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়। এসব দোকানে বেশিরভাগ পণ্য ছিল তৈরি পোশাক।

রাফি গার্মেন্টসের কর্মচারী ওমর ফারুক মনে করেন, আগুন লাগার কারণে অনেক ক্রেতা অন্য মার্কেটে চলে গেছেন। তিনি বলেন, 'এ মাসে বেতন পাবো কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি।' অনেক দোকানের কর্মচারীর অবস্থা এমনই বলে জানান তিনি।

এডিএস পাঞ্জাবি শপের ম্যানেজার হারুন অর রশিদ তার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, 'দোকান খোলার ২ ঘণ্টার মধ্যে ২টা পাঞ্জাবি ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি। কোরবানি ঈদের সময় সাধারণত প্রতিদিন গড় ৮০ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি হতো। এখন প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা ঠিকমতো বিক্রি করতে পারি না।'

ছোট্ট দোকানটিতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এই ঈদে রশিদ ৩ লাখ টাকার কাপড় কিনেছেন। তিনি বলেন, 'আগুন লাগার পর থেকে মার্কেটে মানুষ আসতেছে না। তাদের অনেকেই হয়তো জানেনই না এখানে দোকান খুলেছে।'

এ ছাড়া, অর্থনৈতিক মন্দা ক্রেতারা কম কেনাকাটা করছেন বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে জানা যায়, গত মে মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এটি গত ১ দশকে সর্বোচ্চ।

গত বছর আগস্টে ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তদন্ত কমিটির মতে, আগুনে বঙ্গবাজার ও এর আশপাশে ৩ হাজার ৮৪৫ দোকান পুড়ে গেছে। এতে অন্তত ৩০৩ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

আগুনে প্রায় ৪ হাজার দোকানদার ও ১৫ হাজার কর্মচারীর ক্ষতি হয়েছে। তারা আর্থিক সহায়তার জন্য এখনো অপেক্ষা করছেন।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত ফান্ডে যে পরিমাণ টাকা জমা হয়েছে তা যদি বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয় তাহলে তারা প্রত্যেকে ১২-১৪ হাজার টাকা করে পাবেন। এটা তাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়।'

'গুলশান ক্লাব থেকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা আছে। তা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে কিছু টাকা দিয়ে সহায়তা করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি।'

'তাই সব মিলিয়ে আমরা ভেবেছি মেয়র যদি প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে কথা বলে আরও কিছু টাকা আমাদের ফান্ডে দিতেন তাহলে ব্যবসায়ীদের কিছুটা হলেও উপকার হবে। বিষয়টা নিয়ে ঈদুল আজহার পর মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

7h ago