আর থাকছে না মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দেশে মেয়াদি (ক্লোজড-এন্ড) মিউচুয়াল ফান্ড পর্যায়ক্রমে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার নতুন খসড়ায় বিএসইসি এই প্রস্তাব করেছে। এই বিধিমালা কার্যকর হওয়ার পর আর কোনো নতুন মেয়াদি স্কিম অনুমোদন দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে শুধু বেমেয়াদি (ওপেন-এন্ড) ফান্ডের অনুমতি মিলবে।
মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড তুলে নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এ ধরনের ফান্ড সেকেলে, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য অসুবিধাজনক। একই সঙ্গে, মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনায় দীর্ঘদিনের অনিয়মের বিষয়টিও এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
বিএসইসি এ ব্যাপারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতামত চেয়ে গত অক্টোবরে খসড়াটি প্রকাশ করে। মতামত পর্যালোচনার পর, এটি চূড়ান্ত করে সরকারি গেজেটের মাধ্যমে জারি করা হবে।
কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বছরের পর বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আটকে থাকে কিন্তু সেই তুলনায় মুনাফা আসার সম্ভাবনা থাকে সামান্যই।
তিনি বলেন, 'অনেক ক্ষেত্রে, মেয়াদি ফান্ডগুলো পারফরম্যান্সের ব্যাপারে জবাবদিহি ছাড়াই এক দশক ধরে বিনিয়োগকারীদের টাকা আটকে রেখেছে।'
মিউচুয়াল ফান্ড বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে শেয়ার, বন্ড এবং অন্যান্য সম্পদে বিনিয়োগ করে। এর বিনিময়ে, বিনিয়োগকারীরা অর্জিত মুনাফা থেকে লভ্যাংশ পান।
মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (সাধারণত দশ বছর) নির্দিষ্ট পরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করা হয় এবং এটি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। বিনিয়োগকারীরা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ইউনিট খালাস (রিডিম) করতে পারেন না, যা তাদের তারল্য সীমিত করে।
বিপরীতে, বেমেয়াদি ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা যেকোনো সময় ফান্ডের নিট সম্পদ মূল্যের ভিত্তিতে সরাসরি ফান্ড ম্যানেজারের কাছ থেকে ইউনিট কিনতে বা বিক্রি করতে পারেন। এগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় না।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড তুলে দিলে এই খাতটি আরও স্বচ্ছ ও বিনিয়োগকারী-বান্ধব হবে। বেশ কয়েকজন ফান্ড ম্যানেজার এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বেশিরভাগ তছরুপের ঘটনাই ঘটেছে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, বিশ্বের আর কোথাও আর এই ধরনের ফান্ড এখন নেই।
উল্লেখ্য, শেয়ার কারসাজির ঘটনায় সম্প্রতি বিএসইসি এর সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম এবং এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের সিইও রিয়াজ ইসলামকে পুঁজিবাজারের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করে। বিএসইসির তদন্তে দেখা যায়, এলআর গ্লোবাল তার ছয়টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে একটি তালিকাচ্যুত কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য ২৩ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছিল।
সাইফুল ইসলাম বলেন, 'মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। কেউ কেউ তাদের মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ আরও ১০ বছর বাড়িয়েছে। এটা কারসাজিরই অংশ।'
তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯৯ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডই বেমেয়াদি। অ্যাসোসিয়েশন অব মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়ার মতে, ভারতে এই হার ৯৭ থেকে ৯৮ শতাংশ।
বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৩৭টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে, যেগুলোর মেয়াদ ২০৩২ সালের মধ্যে শেষ হবে।
ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও শেখ মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান বলেন, বেমেয়াদি ফান্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশি সুবিধাজনক, কারণ তারা যখন খুশি টাকা তুলে নিতে পারেন।
ভিন্নমতও রয়েছে
তবে, মেয়াদি ফান্ড পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সবাই একমত নন। সন্ধানী অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সিইও মীর আরিফুল ইসলাম মনে করেন, বাংলাদেশের অনুন্নত পুঁজিবাজারের এখনো বিভিন্ন ধরনের ইনভেস্টমেন্ট প্রোডাক্টের প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, 'বাজারে খুব বেশি ইনস্ট্রুমেন্ট (উপাদান) নেই। সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হলে মেয়াদি ফান্ড এখনো ভূমিকা রাখতে পারে।'
(সংক্ষেপিত অনুবাদ, মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে)


Comments