ব্যাংক একীভূত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে শেয়ারহোল্ডাররা কী পাবেন

বাংলাদেশে ব্যাংক একীভূতকরণ ২০২৫
প্রতীকী ছবি

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক নয়টি দুর্বল ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি নানান সমস্যায় জর্জরিত পাঁচটি ইসলামি ব্যাংক একীভূত করে নতুন একটি ব্যাংক চালুর অনুমোদন দিয়েছে। সরকারের এসব সিদ্ধান্ত আর্থিক খাতের জন্য বড় একটি সংস্কারমূলক উদ্যোগ।

দেশের আর্থিক খাত দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির বেড়াজালে আটকে আছে। তাই সরকারের উদ্যোগ এই খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

তবে প্রশ্ন উঠেছে ছোট ছোট বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডারদের ভাগ্য নিয়ে। তারা বছরের পর বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনেছেন, বিনিয়োগ করেছেন। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্দেশ্য ইতিবাচক হলেও শেয়ারহোল্ডারদের অর্থের ভবিষ্যৎ কী? তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য, এই ১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৫০ কোটি শেয়ার আছে, যার মূল্য প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তে শেয়ারহোল্ডাররা এখন আশঙ্কার মধ্যে আছেন। কারণ তাদের শেয়ারগুলো কার্যত মূল্যহীন হয়ে পড়েছে।

এদিকে বন্ধ হতে যাওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মক আর্থিক সংকটে আছে। এর পেছনে আছে বেশ কয়েকটি কারণ। যেমন বিতরণ করা ঋণের বেশিরভাগ আদায় করতে পারেনি, মূলধন ঘাটতিতে পড়া, ধারাবাহিকভাবে দায় বৃদ্ধি। এছাড়া নানান আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি ছিল এগুলো নিয়মিত চিত্র।

এই পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে বন্ধ করা হলেও শেয়ারহোল্ডারদের পুঁজির টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ এতটাই কমে গেছে যে, বিক্রি করার পর আমানতকারীরাও তাদের টাকার বড় একটি অংশ হারানোর আশঙ্কায় আছেন। আইন অনুযায়ী, শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় সর্বশেষ পর্যায়ে, তাই তাদের কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেও ভুল হবে না।

অন্যদিকে একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো ভালো খবর নেই। অনেক বিনিয়োগকারী আশা করছেন, নতুন সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংকে তাদের অনুপাতে শেয়ার দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই পাঁচ ব্যাংকের প্রত্যেকটির নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক, প্রতি শেয়ার -৭৫ টাকা থেকে -৪৩৮ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ, তাদের সম্পদের চেয়ে দায়-দেনার পরিমাণ অনেক বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলছেন, 'একীভূত প্রক্রিয়ায় শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আইনি কাঠামো অনুযায়ী, খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই।'

তার ভাষ্য, 'ব্যাংকের সম্পদ ও দায় উভয়ের ওপর শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার থাকে। কিন্তু এসব ব্যাংকের নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক। তাই যদি তারা আগে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করেন, কেবল তখন নতুন ব্যাংকের শেয়ারের যোগ্য হবেন। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদের চেয়ে দায় অনেক বেশি।'

'সংক্ষেপে বললে, ব্যাংকগুলোর সম্পদ ও দায়ের অবস্থা শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে নেই,' যোগ করেন তিনি।

তবে অমানতকারীদের আস্থা ধরে রাখতে সরকার নতুন পুঁজি ঢালছে। অর্থাৎ জনগণের করের টাকায় নতুন ব্যাংক পুর্নপুজিকরণ করা হচ্ছে। তবে এই অর্থ সরকারের নামে নতুন শেয়ার ইস্যু করার জন্য ব্যবহৃত হবে, বেসরকারি শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ দিতে নয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আপাতদৃষ্টিতে শেয়ারহোল্ডারদের কিছু পাওয়ার সুযোগ নেই। সব ব্যাংকের শেয়ারে নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক। খুব শিগগিরই শেয়ারহোল্ডাররা হয়তো দেখতে পাবেন, তাদের বিনিয়োগের বিপরীতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।'

তিনি আরও বলেন, আমানতকারীদের জন্য বিমা স্কিম থাকলেও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য তা নেই।

'এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি কঠিন শিক্ষা হবে। তাই বিনিয়োগের আগে আরও সতর্ক হতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ থাকলে বিনিয়োগ করা ঠিক নয়। কারণ সেখানে বিনিয়োগ মানে সবকিছু হারানোর ঝুঁকি নেওয়া,' মন্তব্য করেন তিনি।

তবে সাইফুল ইসলাম লক্ষ্য করেছেন, এসব ঝুঁকি তৈরি হলেও অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী আগ্রহ হারাননি। লিকুইডেশন ও একীভূতকরণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তারা দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনেছেন।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, 'বৃহস্পতিবার ফ্যামিলিটেক্স বিডির শেয়ারদর ৬ শতাংশ বেড়ে ডিএসইর তৃতীয় সর্বোচ্চ গেইনার হয়েছে। অথচ এটি গত সাত বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানির তালিকায় আছে।'

তিনি বলেন, 'এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দুর্বল কোম্পানির পেছনে বিনিয়োগকারীদের দৌড়ানো খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

'শেয়ারবাজার এমন একটি জায়গা, যেখানে কোম্পানির পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। কারণ কোম্পানি ভালো করলে শেয়ারহোল্ডার লাভবান হন, আর কোম্পানি খারাপ করলে ক্ষতি বহন করতে হয়,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'তাই স্বাভাবিকভাবে নিজের অর্থ বিনিয়োগের আগে শেয়ারহোল্ডারদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। না হলে একসময় পস্তাতে হতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Victory day today: A nation born out of blood and grit

The tide of war had turned by mid-December in 1971. The promise of freedom was no longer a dream. It had hardened into tangible certainty.

8h ago