ওষুধশিল্পে নতুন নতুন কাজের সুযোগ

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

দেশের ওষুধশিল্পে বইছে উন্নয়নের হাওয়া। মেধাবী তরুণদের হাত ধরে নতুন নতুন উদ্ভাবনীর মাধ্যমে আরও বিকশিত হচ্ছে এই খাত।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, এই খাত এখন রসায়নভিত্তিক ওষুধ থেকে জৈবভিত্তিক ওষুধের দিকে ঝুঁকছে। বিশ্বব্যাপী এসব ওষুধের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশে সদ্য পাস করা তরুণরা এই খাতে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

গবেষণা ও উদ্ভাবন বাড়াতে ওষুধ প্রতিষ্ঠানগুলো ভিন্ন বিষয়ে পাস করা তরুণদেরকেও কাজে নিচ্ছে।

এই খাতে এখন বায়োটেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমিস্ট্রি ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিষয়ে পড়া তরুণদের চাকরি হচ্ছে। এতদিন শুধু ফার্মেসি বিভাগের স্নাতকরা এই খাতে কাজের সুযোগ পেতেন।

এখন ভিন্ন বিষয়ে পড়া স্নাতকদের নিয়ে ওষুধশিল্প বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে।

গুণমান নিশ্চিত করতে কর্মকর্তা, নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষণ ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মীদের নিয়ে দেশের ওষুধশিল্প বিশ্ববাজারে আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠছে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, অ্যারিস্টোফার্মা, এসিআই হেলথকেয়ার লিমিটেড, গ্লোব বায়োটেক, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি ও জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বেশ কয়েকটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বায়োলজিক্সে প্রচুর বিনিয়োগ করায় এই খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।

জৈব উৎস থেকে তৈরি ওষুধের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান এর ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

এসিআই হেলথকেয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী পরিচালক এম মহিবুজ জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফার্মেসি, বায়োটেকনোলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাশ করা তরুণদের চাকরির বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছে।'

'এই স্নাতকরা ওষুধ উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ, গবেষণা ও বিপণন বিভাগে কাজ করতে পারবেন।'

তবে ওষুধ কারখানার সব ক্ষেত্রে ফার্মেসিতে দক্ষতা অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'দেশে-বিদেশে মেধাবী তরুণ ফার্মাসিস্টদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।'

তিনি মনে করেন, তরুণদের মেধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ওষুধশিল্পে উদ্ভাবন ও স্বনির্ভরতা অর্জনের পাশাপাশি শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারে।

তার মতে, তরুণরা এই খাতে কাজের সুযোগ পেলে বাংলাদেশ তাদের নেতৃত্বে বৈশ্বিক ওষুধশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের মহাব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ২০ বছরে দেশে ওষুধ খাত দশগুণ বেড়েছে। ফার্মেসি, বায়োটেকনোলজি ও সংশ্লিষ্ট শাখায় স্নাতকদের চাকরির সুযোগ অনেক।'

দুই দশক আগে সুযোগ না থাকায় তা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ও দক্ষ পেশাদারদের চাহিদা থাকায় অন্যান্য বিষয়ের স্নাতকধারীদের কাছে এই খাত পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকে আছে।

ওষুধশিল্পের এই উত্থান নতুন স্নাতকদের পেশা গড়ার পথ তৈরি করেছে। সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, মান নিয়ন্ত্রণ, প্রযুক্তিগত পরিষেবা ও বিপণন বিভাগে কাজের সুযোগ বেড়েছে।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, 'ওষুধের বাজার ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। এই শিল্পের আরও বিকাশের জন্য প্রশিক্ষিত পেশাদারদের প্রয়োজন। ক্রমবিকশিত ওষুধশিল্প তরুণদের জন্য চমকপ্রদ কর্মক্ষেত্র হতে পারে।'

ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আবু জাফর সাদেক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের ওষুধ প্রতিষ্ঠানগুলো রসায়নভিত্তিক ওষুধ থেকে জৈবভিত্তিক ওষুধ তৈরির উদ্যোগ নেওয়ায় বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নতুনদের অবদান রাখার সুযোগ তৈরি করছে।'

এখন দেশের শীর্ষ পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স পড়ানো হচ্ছে।

'বছরে প্রায় ৭০০ স্নাতক তৈরি হচ্ছে। ওষুধশিল্পের চাহিদা পূরণে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হচ্ছে।'

ল্যাবরেটরি, গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের পাশাপাশি ওষুধ বিপণন বিভাগে নতুনদের কাজের সুযোগ আছে বলে জানান তিনি।

বিশেষায়িত বিভাগগুলো ভালোভাবে পরিচালনা ও পণ্যের প্রচারের জন্য বায়োমেডিসিনে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বাপি) তথ্য বলছে, দেশে ১৬০টির বেশি ওষুধ প্রতিষ্ঠান আছে।

একসময় আমদানির ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ এখন চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ তৈরি করছে।

সংগঠনটির ভাষ্য, প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের ওষুধের বাজার ও বার্ষিক ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ওষুধশিল্প উদ্ভাবন ও স্থিতিশীলতার উজ্জ্বল উদাহরণ হয়েছে।

এসিআইয়ের এম মহিবুজ জামান আরও বলেন, 'স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশি ওষুধ এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপসহ বাজারে রপ্তানি হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই প্রবৃদ্ধি তরুণদের নতুন কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে। দেশের ওষুধ খাতের জন্য নতুন যুগের সূচনা করেছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Hopes run high as DU goes to vote today

The much-anticipated Ducsu and hall union elections are set to be held today after a six-year pause, bringing renewed hope for campus democracy.

5h ago