আবারও গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোট চলছে। ছবি: এএফপি
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোট চলছে। ছবি: এএফপি

অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও কোনো বিধিনিষেধ ছাড়া মানবিক ত্রাণ প্রবেশের সরবরাহের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। তবে এই প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র।

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে বেশ কয়েকবার নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ করল।

সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে এ ধরনের ভোটের আয়োজন করা হয়। তখনো তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন একই প্রস্তাব নাকচ করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি—নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা 'চলমান কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে' বাধাগ্রস্ত করে।

এ বছরের ১৮ মার্চ হামাস-ইসরায়েলের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর কাতারের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষ আলোচনা অব্যাহত রাখলেও এখনো কোনো ফল আসেনি।

নজিরবিহীন ভোটের ফল

নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪ সদস্য রাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটির স্থায়ী সদস্য হওয়াতে তাদের একটি বিপক্ষ ভোটেই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। নিরাপত্তা পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে যেকোনো দেশ ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পরবর্তীতে এক বিবৃতিতে বলেন, 'আজ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চালুর একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল। এই প্রস্তাবটি (চলমান প্রক্রিয়ার) সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও ইসরায়েলের স্বার্থ পরিপন্থি। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র এতে ভেটো দিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে।'

তিনি জানান, 'ওয়াশিংটন এমন কোনো প্রস্তাবকে সমর্থন জানাবে না—যেখানে ভুল করে ইসরায়েল ও হামাসকে সমকক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, অথবা ইসরায়েলের নিজেদের নিরাপত্তা দেওয়ার অধিকারকে উপেক্ষা করা হয়েছে।'

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: এএফপি
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: এএফপি

'জাতিসংঘে ইসরায়েলের পাশেই থাকবে যুক্তরাষ্ট্র', যোগ করেন তিনি।

খসড়া প্রস্তাবে 'গাজায় অবিলম্বে, বিনা শর্তে ও স্থায়ী ভাবে যুদ্ধবিরতির' দাবি জানানো হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল—প্রস্তাব পাস হলে এর প্রতি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ শ্রদ্ধাশীল থাকবে।

এই প্রস্তাবে একই সঙ্গে 'অবিলম্বে ও বিনা শর্তে হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীর কাছে আটক জিম্মিদের সম্মানজনক মুক্তির' বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় এবং গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশের ক্ষেত্রে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

বিভিন্ন মহলের নিন্দা

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনী হামাস যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোকে 'লজ্জাজনক' বলে অভিহিত করেছে এবং আবারও দাবি করেছে, ইসরায়েল গাজায় 'গণহত্যা' চালাচ্ছে। যদিও ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

হামাস এক বিবৃতিতে অভিযোগ করে, ওয়াশিংটন 'গণহত্যাকে বৈধতা দিচ্ছে, আগ্রাসনে সমর্থন যোগাচ্ছে এবং অনাহার, ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে।'

নিরাপত্তা পরিষদের কয়েকটি সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর প্রতি তীব্র নিন্দা, রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

জাতিসংঘের পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত অসিম আহমাদ যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কড়া সমালোচনা করেন। তিনি এই ঘটনাকে 'কাউন্সিলের বিবেকে নৈতিক অবক্ষয়' হিসেবে অভিহিত করেন এবং জানান, বিশ্ব রাজনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে।

জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন, 'আজকের ভোটের ফল আবারও একটি বিষয় সবার সামনে নিয়ে এসেছে। তা হলো, গাজার সংঘাত নিরসনে নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতার মূলে রয়েছে ধারাবাহিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাধা দেওয়ার প্রবণতা।'

জাতিসংঘে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জেরোম বোনাফোঁ বলেন, 'আবারও কাউন্সিল নিজেদের ঘাড় থেকে দায়িত্বের বোঝা ঝেড়ে ফেলেছে। যদিও, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বেশিরভাগ সদস্য দেশের দৃষ্টিভঙ্গি এক।'

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেন, নিরাপত্তা কাউন্সিলের ভোটের পর তিনি এবার সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে ভোটের উদ্যোগ নেবেন।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর । ছবি: এএফপি
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর । ছবি: এএফপি

সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবে কোনো সদস্য রাষ্ট্র ভেটো দিতে পারে না।

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ফিলিস্তিনিরা সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব রাখলেও তা হবে অর্থহীন। তিনি সদস্য দেশগুলোকে বলেন, 'আপনাদের ক্ষমতার অপচয় করবেন না।'

তিনি বলেন, 'এই প্রস্তাবে মানবিক ত্রাণ বিতরণে অগ্রগতির কোনো উল্লেখ নেই, বরং অবমাননার কথা বলা হয়েছে। এতে একটি কার্যকর প্রক্রিয়ার বদলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।'

জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসা প্রথম ভেটো।

ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের চাপে রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ শূন্যের কোঠায় পৌঁছে যাওয়ায় দেশটি বিশেষ নিন্দার মুখে পড়েছে। প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো ধরনের ত্রাণ প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরায়েল। এরপর মে মাসের মধ্যবর্তী সময়ে অল্প সংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় যাওয়ার অনুমতি পায়।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেন, 'জাতিসংঘকে তার মূল কাজে ফিরে যেতে হবে—শান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষে জনমত গঠন—এবং এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক কাজ বন্ধ করা।'

Comments

The Daily Star  | English
Largest Islamic bank in the making

Largest Islamic bank in the making

The five banks slated for consolidation are First Security Islami Bank, Union Bank, Global Islami Bank, Social Islami Bank and Exim Bank.

12h ago