গাজার দখল নিতে চান নেতানিয়াহু, ট্রাম্পের ‘তেমন কিছু বলার নেই’

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স

হামাসকে নির্মূলের উদ্দেশ্যে গাজা উপত্যকা দখল করে নিতে চান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। খুব শিগগির বিষয়টি তিনি মন্ত্রিসভায় আলোচনা করবেন। তার এই পরিকল্পনায় বাধা দেবেন না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সম্প্রতি ইসরায়েলি গণমাধ্যমে নেতানিয়াহুর এই উদ্যোগের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।

আজ বুধবার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা ও বিবিসির প্রতিবেদনে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানা গেছে।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা দখল করে নেওয়ার যে পরিকল্পনা করছেন সে বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য ট্রাম্পকে অনুরোধ জানালে তিনি জবাব দেন, তার নজর 'গাজার ক্ষুধার্ত মানুষকে খাওয়ানোর' দিকে।

'বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই। সেটা মূলত ইসরায়েলের (সিদ্ধান্তের) ব্যাপার', সাংবাদিকদের বলেন ট্রাম্প।

গাজায় ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: এএফপি
গাজায় ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: এএফপি

ওয়াশিংটন প্রতি বছর ইসরায়েলকে লাখো ডলারের সামরিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজার যুদ্ধ শুরুর পর মার্কিন সহযোগিতার মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

ওই যুদ্ধের শুরু থেকে গাজাবাসীকে কোণঠাসা করে রাখার কৌশল হাতে নেয় ইসরায়েল। বারবার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষকে সরে যেতে বলে ধীরে ধীরে গাজা উপত্যকার ৮৬ শতাংশ অঞ্চলকে কার্যত সক্রিয় 'যুদ্ধক্ষেত্রে' রূপান্তর করেছে নেতানিয়াহুর বাহিনী।

তবে বাকি জায়গাটুকুতেও সম্প্রসারিত আকারে সামরিক অভিযান শুরু হলে ফিলিস্তিনিদের জীবন আরও বড় আকারে বিপন্ন হবে। ইতোমধ্যে দৈনন্দিন হামলা, অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগছেন তারা।

গাজা দখলের এই পরিকল্পনা হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর হাতে আটক থাকা বাকি জিম্মিদের জীবনকে বিপন্ন করবে বলে বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন।

জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা মিরোস্লাভ জেনচা মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর পরিকল্পনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন এতে 'বিপর্যয় ঘটার ঝুঁকি রয়েছে'।

জেনচা জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে বলেন, 'এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনে কোনো অস্পষ্টটা নেই। গাজাকে অবশ্যই ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে হবে।'

২০০৫ সালে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে সেনা ও অবৈধ বসতি সরিয়ে নেওয়ার দাবি করলেও আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, কার্যত পুরো এলাকাই এখনো ইসরায়েলের দখলে রয়েছে। এর মূল কারণ হলো গাজার আকাশ ও জল সীমানাসহ সেখানে প্রবেশের সব ধরনের পথের নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে।

২০২৩ সালের যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই কট্টর ইসরায়েলি নেতারা গাজায় আবার সামরিক ঘাঁটি ও বসতি গড়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছেন, ইসরায়েল গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে দিতে চায়। ট্রাম্প নিজেও ফেব্রুয়ারিতে এই পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।

ইসরায়েলি হামলায় গাজার বেশিরভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি হামলায় গাজার বেশিরভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। ছবি: এএফপি

তখন ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন, গাজা খালি করে সেখানে 'মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা' (সৈকতের অবকাশ শহর) তৈরি করা যেতে পারে।

গাজায় আরও বড় পরিসরে সেনা অভিযান চালাতে চায় ইসরায়েল—সম্প্রতি এমন খবরে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

কারণ, গাজায় হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তীব্র খাদ্যসংকট ছড়িয়ে পড়েছে।

চলতি বছরের মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে একটি সংগঠন চালু করা হয়য়। জিএইচএফ পরিচালিত কিছু কেন্দ্রই এখন ফিলিস্তিনিদের খাদ্যের একমাত্র উৎস।

প্রতিদিনই জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রের কাছে খাবারের লাইনে দাঁড়ানো ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। প্রতিদিনই অন্তত ২০-৩০ জন করে মানুষ খাবার সংগ্রহ করতে যেয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘকে সরাসরি গাজাবাসীর কাছে সহায়তা বিতরণের অনুমতি দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী আহ্বান চলছে।

সম্প্রতি ইসরায়েল কিছু খাদ্যবাহী ট্রাক ও আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে। তবে এখনো এসব সহায়তা গাজার বাসিন্দাদের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

গতকাল ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় মানবিক সহায়তা হিসেবে ছয় কোটি ডলার দিয়েছে। এর মধ্যে তিন কোটি ডলার গেছে জিএইচএফের তহবিলে।

ট্রাম্প বলেন, 'আপনারা জানেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি গাজায় ছয় কোটি ডলার দিয়েছে। সেখানে প্রচুর খাবার পাঠানো হয়েছে। বাস্তবে অনেক খাবারই তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। কারণ, খাবারের সরবরাহ বিবেচনায় ভালো অবস্থায় নেই তারা।'

খাবার সংগ্রহ করতে যেয়ে নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ। ছবি: এএফপি
খাবার সংগ্রহ করতে যেয়ে নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ। ছবি: এএফপি

'আমি জানি খাবার বিতরণ করা ও আরও অর্থের জোগান দিয়ে ইসরায়েল আমাদেরকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করবে। আমাদের সঙ্গে আরব দেশরাও আছে, যারা অর্থ দিয়ে ও খাবার বিতরণেও সম্ভবত আমাদেরকে সাহায্য করবে', যোগ করেন রিপাবলিকান নেতা।

ট্রাম্প আরও বলেন, 'আমি জানি, ইসরায়েল এ সহায়তা বিতরণে আমাদের সাহায্য করবে। অর্থের দিক থেকেও সাহায্য করবে। আমাদের সঙ্গে আরব দেশগুলোও আছে। তারাও অর্থ দিয়ে ও সম্ভবত বিতরণেও আমাদের সাহায্য করবে।'

ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৬১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এসব হামলায় গাজার বেশিরভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা একে 'গণহত্যা' বলে আখ্যা দিয়েছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

4h ago