তুরস্কের অনুরোধে নিরাপদে গাজা ছাড়ল ইসমাইল হানিয়ার পরিবার

তুরস্কের নেতা এরদোয়ানের সঙ্গে প্রয়াত হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া। ফাইল ছবি: এএফপি
তুরস্কের নেতা এরদোয়ানের সঙ্গে প্রয়াত হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া। ফাইল ছবি: এএফপি

চলতি মাসের শুরুতে অন্তত ৬৬ ফিলিস্তিনি ও তুর্কি নাগরিককে নিরাপদে গাজা ছেড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

মূলত আঙ্কারার কাছ থেকে আসা অনুরোধেই এই উদ্যোগ নেয় তেল আবিব।

গতকাল সোমবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানায়, ওই ৬৬ জনের মধ্যে তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হামাস নেতা ও সাবেক রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়ার পরিবারের ১৬ সদস্যও আছেন।

দুইটি আলাদা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল-তুরস্কের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় ১৪ তুর্কি নাগরিক ও তাদের ৪০ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে (স্বামী-স্ত্রী, পুত্র, মা ও বাবা) মুক্তি দেওয়া হয়।

চলতি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তি মেনে যুদ্ধে বিরতি দিতে সম্মতি দেয় হামাস ও ইসরায়েল। হামাসকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তুরস্ক।

হানিয়া ও তার পরিবারের সঙ্গে তুরস্কের ঘনিষ্ঠতা

জানা গেছে, ইসমাইল হানিয়া পরিবারের ১৬ জনের মধ্যে পাঁচ জনের সঙ্গে তুরস্কের নাগরিকদের আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে।

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক বিষয়গুলোর দেখভাল করতেন ইসমাইল হানিয়া। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন হানিয়া। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তুরস্কের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

বাম থেকে ডানে: ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। ফাইল ছবি:  তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত
বাম থেকে ডানে: ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। ফাইল ছবি: তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত

তুরস্কে হামাসের আনুষ্ঠানিক কার্যালয় না থাকলেও সংগঠনের নেতারা নিয়মিত কাতার, তুরস্ক, মিসর ও লেবাননে যাতায়াত করে থাকেন। অনেক সময় তারা তুরস্কে মাসের পর মাসও অতিবাহিত করেন।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তুরস্ক হানিয়াসহ একাধিক হামাস নেতাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে।

ইসরায়েলের 'বিস্ময়কর' সিদ্ধান্ত

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল হানিয়ার পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে গাজা ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে, যা 'বিস্ময়কর'। বিশেষত, আইডিএফের হাতে হানিয়ার তিন ছেলে ও চার নাতি-নাতনি নিহতের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিলে।

২০২৪ সালের এপ্রিলে হানিয়ার পরিবারের ওই সদস্যরা গাড়িতে থাকা অবস্থায় হামলার শিকার হন।

একই সময় ইসরায়েল হানিয়ার বোন সাবাহ আল-সালেম হানিয়াকেও গ্রেপ্তার করে। তিনি ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তেল শেভায় বসবাস করছিলেন।

এরদোয়ান-নেতানিয়াহুর সম্পর্কের বরফ গলানোর উদ্যোগ?

ইসরায়েল সরকার-সংশ্লিষ্ট সূত্ররা জানান, এই সিদ্ধান্ত আঙ্কারার সঙ্গে তেল আবিবের কূটনীতিক বরফ গলানোর উদ্যোগের অংশ।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চালুর পর থেকেই ইসরায়েলের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তুরস্কের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি 'উষ্ণতা' বাড়ানোর আগ্রহ দেখাচ্ছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম কালিনের প্রশংসা করে জানায়, তিনি '(হামাসের হাতে বন্দি থাকা) জিম্মিদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছেন' এবং 'ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের' উদ্যোগ নিয়েছেন।

নেতানিয়াহু-এরদোয়ানের করমর্দনের একটি বিরল মুহূর্ত। ফাইল ছবি: আনাদোলু এজেন্সির সৌজন্যে
নেতানিয়াহু-এরদোয়ানের করমর্দনের একটি বিরল মুহূর্ত। ফাইল ছবি: আনাদোলু এজেন্সির সৌজন্যে

ইসরায়েলি সাংবাদিক বেন কাসপিত এ মাসের শুরুতে মারিভ সংবাদমাধ্যমে বলেন, ইসরায়েল 'ভবিষ্যতের দিকে তাকাচ্ছে।'

'তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইসরায়েলের কট্টর সমালোচক হলেও, তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক গোয়েন্দা প্রধান হাকান ফিদানকে ইসরায়েল আরও বাস্তববাদী মনে করে,' যোগ করেন তিনি।

গত রোববার মারিভে প্রকাশিত অপর এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট উরিয়েল লিন যুক্তি দেন, ইসরায়েলের উচিৎ আগ বাড়িয়ে এরদোয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করা।

তার মতে, 'গাজার ভবিষ্যৎ চাবিকাঠি তুরস্কের হাতে।'

তিনি বলেন, 'তুরস্ক ইসরায়েলের শত্রু নয়। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন বাণিজ্য, অর্থনীতি ও পর্যটন নিয়ে ফলপ্রসূ সম্পর্ক ছিল।'

তিনি মন্তব্য করেন, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রনীতি কতিপয় কট্টর মন্ত্রীদের 'শিশুসুলভ আচরণ ও দাবিতে' প্রভাবিত হওয়া উচিৎ নয়।

এ বিষয়ে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ধৈর্যশীল মনোভাবের প্রশংসা করেন উরিয়েল।

'আমাদের আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক পরিবেশকে স্থিতিশীল করা ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে সামনে এগিয়ে রাখায় তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো খুবই জরুরি,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

1h ago