যে কারণে ইরানে যাচ্ছেন পুতিন-এরদোয়ান

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি (ডানে), রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। ছবি: আল জাজিরা থেকে নেওয়া

প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের প্রথম ইসরায়েল ও সৌদি আরব সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই মধ্যপ্রাচ্যে পা রাখছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একই সময়ে তেহরানে আসছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

আজ মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা'র প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়া রুশ প্রেসিডেন্ট তেহরানে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে সিরিয়ার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।

এতে আরও বলা হয়, ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও সফররত নেতারা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। সেসময় ইউক্রেন যুদ্ধ ও ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

এই ৩ দেশই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করে চলছে।

বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী ইউক্রেনে মস্কোর 'বিশেষ সামরিক অভিযান'র পর পুতিন দ্বিতীয়বারের মতো বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন। তিনি আজ তেহরানে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের পাশাপাশি বৈশ্বিক খাদ্য সংকট নিরসনে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানির বিষয়ে জাতিসংঘ-সমর্থিত প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হবে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমস ও তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম টিআরটি'তে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি

যে সিরিয়া নিয়ে আলোচনা করতে তেহরান যাচ্ছেন পুতিন সেই সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়া বিষয়ে ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে বিরোধ বেঁধেছে তুরস্কের।

গত ১ জুন এরদোয়ান বলেছিলেন, 'তুরস্কবিরোধী' কুর্দি সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে দমন করতে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি-অধ্যুষিত তাল রিফাত ও মানবিজ শহরে নতুন করে সামরিক অভিযান চালানো হবে। সেখানে ৩০ কিলোমিটারজুড়ে 'নিরাপত্তা অঞ্চল' গড়ে তোলার ঘোষণাও দেন তিনি।

২০১১ সালে আরব বসন্তের প্রভাবে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধী গণআন্দোলন শুরু হলে আসাদকে মূলত সমর্থন দেয় ইরান ও রাশিয়া। তারা আঙ্কারাকে নতুন আক্রমণ থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও তুরস্কের এমন ভাবনার বিরোধিতা করছে।

ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্ক ও ইরানের অবস্থান

তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য হয়েও ইউক্রেন সংকটে রাশিয়ার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। দেশটি একদিকে যেমন ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থনের কথা জানিয়েছে, অন্যদিকে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমের দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে।

তুরস্ক যুদ্ধবিরতির জন্য মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনের কাছে 'বেরাকতার' সামরিক ড্রোন বিক্রি করেছে। এ ছাড়াও, ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের বিরোধিতা করেছে আঙ্কারা।

সাম্প্রতিক সময়ে মস্কোর সঙ্গে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করেছে আঙ্কারা। রুশ পর্যটকদের পছন্দের স্থান হয়েছে তুরস্ক।

অপরদিকে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইরান। ন্যাটোর সম্প্রসারণনীতিকে এর জন্য দায়ী করেছে দেশটি। তবে যুদ্ধের বিরোধিতা করে ইরান আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে।

বিভিন্ন সময় ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান করেছে তেহরান।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিনের সঙ্গে এরদোয়ান মূলত জ্বালানি ও বাণিজ্য বিষয়ে কথা বলবেন। দেশ ২টির মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে অন্যান্য বিষয়েও কথা হতে পারে।

তাদের মতে, পুতিনের এই সফরকালে রাশিয়ার সঙ্গে ২০ বছরের সহযোগিতা চুক্তি করতে চায় ইরান। উপসাগরীয় দেশটির কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্যে নিজ নিজ দেশের মুদ্রা ব্যবহারের বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে কথা বলেছেন।

বেলফার সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স'র আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কর্মসূচির গবেষণা ফেলো নিকোল গ্রাজেভস্কি আল জাজিরাকে বলেন, 'রাশিয়া ও ইরান মূলত একই ধরনের পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করে থাকে। তাই তেহরানের চেয়ে আঙ্কারার সঙ্গে মস্কো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে।'

তিনি মনে করেন, মূলত মস্কোর সঙ্গে তেহরানের সম্পর্ক আরও গভীর করতেই পুতিন ও রাইসি আলোচনা করবেন।

Comments

The Daily Star  | English
Gunfight

Local BNP leader shot dead in Dhaka’s Badda

When Kamrul was sitting on a chair on the roadside and talking with 2-3 people, two assailants on foot came from behind and shot him before fleeing the scene

2h ago