যুক্তরাজ্যে আরও কঠোর হচ্ছে অভিবাসননীতি

যুক্তরাজ্যে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য আরও কঠোর শর্ত চালু হতে যাচ্ছে। আজ সোমবার এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বার্তা সংস্থা এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে বলেছে—নতুন বিধানের মধ্যে থাকছে অভিবাসন প্রত্যাশীদের কর্মরত থাকার বাধ্যবাধকতা। পাশাপাশি, তারা কোনো ধরনের বিশেষ সুবিধা বা 'ভাতা' পেয়ে থাকলে (যেমন বেকার ভাতা) অভিবাসনের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এমনকি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন হতে পারে।
বর্তমান আইন অনুসারে, যুক্তরাজ্যে আগে থেকেই বৈধভাবে বসবাস করছেন বা নাগরিকত্ব নিয়ে থাকছেন এমন কোনো ব্যক্তির পরিবারের কোনো সদস্য যদি পাঁচ বছর ওই দেশে থাকেন, তাহলে তিনি পিআরের (অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই দেশে বসবাসের অনুমতি) যোগ্যতা অর্জন করেন।
পাশাপাশি, যেকোনো ধরনের ভিসায় যুক্তরাজ্যে ১০ বছর থাকলেও পিআরের জন্য আবেদন করা যায়।
যারা এই যোগ্যতা অর্জন করেন, তারা একইসঙ্গে যুক্তরাজ্যে বসবাস, কাজ ও পড়ালেখা করার অনুমতি পান। একই সঙ্গে তারা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের জন্যেও আবেদন করতে পারবেন।
তবে ওই নীতি থেকে সরে আসছে যুক্তরাজ্য।
আজ সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ নতুন নীতিমালার ঘোষণা দেবেন। অভিবাসনের যোগ্যতা অর্জন করতে হলে বিদ্যমান শর্তের পাশাপাশি নতুন শর্ত হিসেবে যোগ হবে:
- সামাজিক সুরক্ষায় অবদান রাখা
- কোনো ধরনের ভাতা/সুযোগ-সুবিধা না নেওয়া
- কোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড না থাকা এবং
- স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা
ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ পার্টির বার্ষিক সম্মেলনে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন শাবানা। বছরের শেষভাগে এটা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোয় লেবার পার্টিকে পেছনে ফেলেছে কট্টর ডানপন্থি রিফর্ম পার্টি। দলটি জানিয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে 'পিআর' বাতিল করবে। অর্থাৎ, কেউ আর নাগরিকত্ব না নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য যুক্তরাজ্যে থাকতে পারবেন না। তাদেরকে প্রতি পাঁচ বছর পর পর নতুন করে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে পিআর নিয়ে বসবাস করছেন লাখো মানুষ। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্লেষকরা জানান, সংখ্যাটি ২৫ থেকে ৩০ লাখও হতে পারে। নতুন নীতিতে তারা সবাই প্রভাবিত হবেন।
লেবার পার্টির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'এসব উদ্যোগ লেবার সরকারের সঙ্গে রিফর্ম পার্টির ধ্যানধারণার ব্যবধান স্পষ্ট করেছে। ওই দল যে পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে, তা বাস্তবায়ন করা হলে দশকের পর দশক আমাদের দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন এমন মানুষকেও তাদের বাড়ি ও পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে চলে যেতে হবে।'

গত রোববার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার রিফর্ম পার্টির পরিকল্পনাকে 'বর্ণবিদ্বেষী' বলে আখ্যা দেন এবং আশঙ্কা করে বলেন, এতে 'দেশ ছারখার হয়ে যাবে।'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে লেবার পার্টির সম্মেলনে প্রথমবারের মতো বক্তব্য রাখবেন শাবানা।
তিনি তার বক্তব্যে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ভালো ইংরেজি জানার বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেবেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, তিনি নিজেকে একজন 'কঠোর' মন্ত্রী হিসেবেও আখ্যা দেবেন।
যুক্তরাজ্যে অভিবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধারণা করা হচ্ছে তিনি দলের সদস্যদের হুঁশিয়ার করে বলবেন যে, বিষয়টি ভালো করে মোকাবিলা না করলে 'দেশের কঠোর পরিশ্রমী মানুষগুলো আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রিফর্ম নেতা নাইজেল ফারাজের মিথ্যা আশ্বাসে স্বস্তি খুঁজে নেবে।'
আজকের সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস ও বক্তব্য রাখবেন। তিনি 'যুক্তরাজ্যকে নতুন রূপে নিয়ে আসতে বিনিয়োগ করার' ওপর গুরুত্ব দেবেন এবং তরুণ-তরুণীদের কাজে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করবেন।
এসব তথ্য লেবার পার্টির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এর কপি এএফপির কাছে পাঠানো হয়েছে।
Comments