ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে একযোগে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে একযোগে স্বীকৃতি দিয়েছে তিন পরাশকিত যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগে পশ্চিমা দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সুর দেখা গেছে।
আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
পর্তুগালও আজ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর এই উদ্যোগে ক্ষিপ্ত হয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা। ইতোমধ্যে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার নানা ফন্দিফিকির খুঁজে বেড়াতে শুরু করেছে দেশটি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাস হামলা চালালে এক হাজার ২০০ ব্যক্তি নিহত ও তাদের হাতে ২৫০ জন জিম্মি হন। সেদিনই ওই হামলার প্রতিশোধ নিতে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচার ও বিধ্বংসী হামলা শুরু করে ইসরায়েল। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিন্দা কুড়িয়ে গত ২৩ মাসে ৬৫ হাজারেরও ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ চললেও বারবার তা ভেস্তে যায়। যার ফলে পশ্চিমা দেশগুলো ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিকল্প চিন্তা থেকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া বার্তায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, 'ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের শান্তির আশার পুনর্জাগরণ করতে এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করতে আজ যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।'
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী সাত দেশের জোট জি সেভেনের প্রথম সদস্য দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও কানাডা।
আগামীকাল সোমবার নিউইয়র্কে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশ একই উদ্যোগ নেবে। সবার আগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির ঘোষণা দেয় ফ্রান্স।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক্সে পোস্ট করে বলেন, 'কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল, উভয় রাষ্ট্রের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়তে অংশীদারিত্বের হাত বাড়াচ্ছে।'
Today, Canada recognises the State of Palestine. pic.twitter.com/zhumVJRBfe
— Mark Carney (@MarkJCarney) September 21, 2025
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়া 'স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে'।
'দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের রাষ্ট্র গড়ার যে আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে এসেছে, তা বৈধ, এবং এই উদ্যোগের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া এর সঙ্গে একমত প্রকাশ করছে', বিবৃতিতে বলেন আলবানিজ।
তিনি আরও বলেন, 'আজকের এই স্বীকৃতি দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘ দিনের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য টেকসই শান্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র পথ এটাই।'
My statement formally recognising the State of Palestine. pic.twitter.com/HtBmnIQGBS
— Anthony Albanese (@AlboMP) September 21, 2025
এতদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
তবে এই উদ্যোগে সেই নীতি থেকে সরে এলো পশ্চিমের শক্তিধর দেশগুলো।
তবে এই উদ্যোগের চরম বিরোধিতা করেছে ইসরায়েল ও তাদের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘের সম্মেলনে বিষয়টির বিরোধিতা করার অঙ্গীকার করেছেন নেতানিয়াহু।
আজ রোববার নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির আহ্বান 'আমাদের (ইসরায়েলের) অস্তিত্বকে বিপন্ন করে এবং এটি সন্ত্রাসবাদের জন্য মানুষকে পুরস্কৃত করার সমতুল্য, যা অবিশ্বাস্য।'
তবে গাজার ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট, বারবার আহ্বান সত্ত্বেও হামলা বন্ধ না করে বরং এর মাত্রা বাড়ানো, যুদ্ধবিরতি চুক্তি বানচাল ও লঙ্ঘনসহ বেশ কিছু সহিংস উদ্যোগের জেরে একে একে মিত্র দেশগুলো ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে ইসরায়েল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
২৩ মাসের যুদ্ধে গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশই ধ্বংস হয়েছে। সেখানে অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগছে বিশাল জনগোষ্ঠী।
Comments