স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে চিরতরে ‘কবর’ দিতে পশ্চিম তীরের ‘দখল’ নেবে ইসরায়েল

যেকোনো মূল্যে ফিলিস্তিনও রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির উদ্যোগ বানচাল করার চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরায়েল, তথা নেতানিয়াহু প্রশাসন। স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছুক দেশগুলোকে হুশিয়ারি-হুমকির পাশাপাশি এই উদ্যোগকে সার্বিকভাবে অকেজো করে দিতে এক অভিনব বুদ্ধি বের করেছে ইসরায়েল।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশকে পাকাপাকিভাবে নিজ ভূখণ্ডের অংশ করে নিতে চাইছে ইসরায়েল। এর মাধ্যমেই স্বাধীন ফিলিস্তিনের ধারণাকে 'কবর' দিতে চায় দেশটি। এই তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গতকাল রোববার বার্তা সংস্থা এএফপি ও মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।
পশ্চিম তীর 'দখলের' উদ্যোগ
সম্প্রতি নেতানিয়াহুর সরকার পশ্চিম তীরে একটি নতুন বসতি স্থাপন পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে।
জেরুসালেমের পূর্বে এই বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অবিলম্বে শুরু হবে বলে জানিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। এই প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ই১।
এর বাস্তবায়ন হলে পশ্চিম তীর কার্যত দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে এবং একটি ভাগ স্থায়ীভাবে ইসরায়েলের অংশ হবে।
এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী বেজালেল স্মৎরিচ বলেন, 'এই উদ্যোগ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের চিন্তাধারাকে কবর দেবে।'

১৯৬৭ সাল থেকে পশ্চিম তীর অবৈধভাবে অধিগ্রহণ করে রেখেছে ইসরায়েল। সেখানে একের পর এক অবৈধ বসতি স্থাপন করে চলেছে 'সেটলার'রা।
স্মৎরিচ নিজেও একজন সেটলার। তিনি তার পরিবারসহ একটি অবৈধ বসতিতে বসবাস করেন।
গত বুধবার তিনি বলেন, 'আমাদের (ইসরায়েলের) ক্ষুদ্র ভূখণ্ডকে দ্বিভাজিত করে এর ঠিক কেন্দ্রে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র গঠনের চিন্তাকে চিরতরে বানচাল' করার জন্য পশ্চিম তীরের অংশবিশেষ ইসরায়েলি ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
ইউএনজিএ সম্মেলন
চলতি মাসের ২২ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে (ইউএনজিএ) সহ আয়োজকের ভূমিকায় থাকবে সৌদি আরব ও ফ্রান্স। ওই সম্মেলনে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ওই সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সা'আর হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, 'ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ এক মারাত্মক ভুল'।
যারা এই উদ্যোগ নেবে, তাদের বিরুদ্ধে 'একপাক্ষিক ব্যবস্থা' নেওয়ার হুমকি দেন তিনি। পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের ওই নতুন পরিকল্পনার ঘোষণার পরই ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান সা'আর।
গত ৩০ আগস্ট ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে নিউইয়র্কের অনুষ্ঠিতব্য ওই অধিবেশনে যোগ দিতে বাধা দিয়েছে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বার্তায় বলা হয়, মাহমুদ আব্বাস ও আরও ৮০ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার ভিসা খারিজ হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফিলিস্তিনি নেতাদের বিরুদ্ধে 'শান্তি প্রচেষ্টা'কে হেয় করা ও 'এক তরফা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার' চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট আব্বাস ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে মাহমুদ আব্বাসের কার্যালয় থেকে 'বিস্ময়' প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ চুক্তির বরখেলাপ।
বর্তমানে ফিলিস্তিন জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক হিসেবে আছে। ২০১২ সালে সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিতে ফিলিস্তিনকে স্থায়ী পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দা
পশ্চিম তীরে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ হিসেবে বিবেচিত বসতীগুলোতে প্রায় পাঁচ লাখ ইসরায়েলি সেটলার বসবাস করেন।
এর আগে পূর্ব জেরুসালেম ও গোলান মালভূমি অধিগ্রহণ করে ইসরায়েল। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে এই দুই কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল অধিগ্রহণ করে দেশটি।

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই ওই দুই অঞ্চলে ইসরায়েলের শাসন বা আধিপত্যের বিষয়টিকে অবৈধও হিসেবে বিবেচনা করে।
পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ রোববার জানান, 'পশ্চিম তীর দখল করে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো ইসরায়েলি উদ্যোগকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে জর্ডান। পাশাপাশি, গাজার ভবিষ্যতে ঘিরে যদি এমন কোনো পরিকল্পনা করা হয় যা ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করে বা পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, তাহলে সেসব পরিকল্পনাও জর্ডান প্রত্যাখ্যান করবে।'
Comments