যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব সর্বকালের সর্বোচ্চ: জরিপ

নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের বন্ধুত্ব অটূট থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ইসরায়েলকে আগের মতো পছন্দ করছে না। ছবি: রয়টার্স
নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের বন্ধুত্ব অটূট থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ইসরায়েলকে আগের মতো পছন্দ করছে না। ছবি: রয়টার্স

অবশেষে 'গণেশ' উল্টে গেল মার্কিন মুলুকে। সৃষ্টি হলো নতুন ইতিহাস। ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েলপন্থি মার্কিনিদের মনে এখন ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব সর্বকালের সর্বোচ্চ।

গতকাল মঙ্গলবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা ইউনিভার্সিটির জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিকাংশ মার্কিনি এখন ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি অর্থ ও সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিরোধী। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর এমন জনমত প্রকাশ্যে এলো।

এতে আরও বলা হয়, প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তার বিরোধিতা করছেন মার্কিন ভোটাররা। তারা সংঘাত দূর করতে ইসরায়েলি সরকারের ভূমিকার প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন।

মার্কিন জনমনে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে। মধ্যপ্রাচ্যের বহু পুরোনো এই সংঘাতে মার্কিনিদের সহানুভূতি এখন ইসরায়েলিদের তুলনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি বেশি। ১৯৯৮ সালে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এ বিষয়ে জরিপ শুরুর পর এই প্রথম মার্কিনিদের মনে এমন বিপরীত ভাবনা দেখা গেল।

প্রতিবেদন অনুসারে—৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর মার্কিন ভোটারদের ৪৭ শতাংশ ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। সেসময় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ছিল ২০ শতাংশ।

নতুন জরিপে দেখা গেছে—৩৪ শতাংশ মার্কিনি ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানালেও ৩৫ শতাংশ সমর্থন জানিয়েছেন ফিলিস্তিনিদের প্রতি। এ ছাড়াও, এই জরিপে ৩১ শতাংশ উত্তরদাতা কারও প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেননি।

ইসরায়েলি হামলায় আহত শিশুরা আল-শিফা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলি হামলায় আহত শিশুরা আল-শিফা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

গত ২২ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় পরিচালিত জরিপে ১ হাজার ৩১৩ জন অংশ নিয়েছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অধিকাংশ মার্কিন ভোটার ইসরায়েলে অতিরিক্ত আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পাঠানোর বিরোধী। প্রতি ১০ ভোটারের ছয়জন বলছেন—ইসরায়েলের উচিত যুদ্ধ বন্ধ করা। এমনকি, সব জিম্মি মুক্তি না পেলেও অথবা হামাসকে নির্মূল করা না গেলেও।

প্রায় ৪০ শতাংশ মার্কিন ভোটার মনে করছেন, ইসরায়েল ইচ্ছা করেই গাজায় বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা করছে। ২০২৩ সালের তুলনায় এই মনোভাবের মানুষের সংখ্যা এখন দ্বিগুণ।

প্রধান মিত্র ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল পূর্ণ সমর্থন দিলেও ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন জনগণের এমন মনোভাব হয়ত অনেককেই বিস্মিত করছে।

অস্টিন মাগলেসটন (৩৩) নামের এক ডেমোক্র্যাট সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, 'আসলে আমি গত কয়েক বছর ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলেছিলাম। বিশেষ করে, ৭ অক্টোবর হামলার কথা জানার পর থেকে। কিন্তু, যতই দিন যাচ্ছে এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর যতই নৃশংসতা বাড়াচ্ছে ততই মনে হচ্ছে যে সেখানে কোনো ভারসাম্য নেই।'

এই জরিপ থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের সম্পর্ক সংকটে পড়তে পারে। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়ে আসছে।

সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তরুণ ভোটাররা দলমত নির্বিশেষে ইসরায়েলকে এখন আর এত সহায়তা দিতে চাচ্ছেন না। জরিপে অংশ নেওয়া ৩০ বছরের কম বয়সী প্রতি ১০ ভোটারের সাতজন ইসরায়েলকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিরোধী।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পাশাপাশি রিপাবলিকান পার্টিতেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন কমছে। প্রায় দুই বছর আগে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ৩৪ শতাংশ ভোটার ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও ৩১ শতাংশের সমর্থন ছিল ফিলিস্তিনের প্রতি। নতুন জরিপে দেখা গেল—ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ৫৪ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন আর ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন মাত্র ১৩ শতাংশ।

প্রতি ১০ ডেমোক্র্যাটের মধ্যে আট জনের বেশি মনে করেন লক্ষ্য অর্জিত না হলেও ইসরায়েলের উচিত যুদ্ধ থামানো।

গাজা সিটি থেকে গণহারে পালিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
গাজা সিটি থেকে গণহারে পালিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

চিকিৎসাকর্মী ও ডেমোক্র্যাট শ্যানন ক্যারি (৩৯) বলেন, 'একজন মা হিসেবে আমি সেসব শিশুর ছবি দেখতে ভয় পাচ্ছি। এটা কোনো যুদ্ধ নয়, এটা গণহত্যা।'

ঐতিহাসিকভাবে রিপাবলিকানরা ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দিলেও সেই দুর্গেও ধস নামছে। ২০২৩ সালে ৭৬ শতাংশ রিপাবলিকান ইসরায়েলকে সমর্থন দিলেও এখন তা কমে হয়েছে ৬৪ শতাংশ।

এখন তিন ভাগের একভাগ রিপাবলিকান বলছেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজায় বেসামরিক মানুষদের রক্ষায় যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এমন ধারা চলতে থাকলে একদিন হয়ত দেখা যাবে, মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে নিজ দেশের জনমতের চাপেই ইসরায়েলকে 'বর্জন' করতে হচ্ছে।

Comments