সিউলে ‘নো ট্রাম্প! নো চায়না!’ বিক্ষোভ

সিউলে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট তার শহরে দাওয়াত দিয়েছেন দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতাদের। তা সবার কাছে অভূতপূর্ব ঘটনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে তো বটেই। কিন্তু, আমন্ত্রণকারী দেশটির অনেককে ঘটনাটির বিরোধিতা করতে দেখা যাচ্ছে।

আজ বুধবার বিবিসির 'নো ট্রাম্প! নো চায়না!' শিরোনামের প্রতিবেদনে এমনটিই জানা গেল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে নিয়ে আলোচনায় বসবেন তিন দেশের নেতারা। দক্ষিণ চীন সাগর ও অন্যান্য আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক বিষয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিং যখন অনেকটাই মুখোমুখি তখন এই দুই প্রভাবশালী নেতার বৈঠক নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া।

তাহলে কেন এই ট্রাম্প-শি বিরোধী সমাবেশ? দুই পরাশক্তি দেশের নেতাদের এই বৈঠককে স্বাগত না জানিয়ে কেন তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে স্লোগান দিচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ?

সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়—৩০ অক্টোবর সিউলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে আলোচনার আয়োজন করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। বিশেষ করে ১৯৫০-৫৩ সালে কোরিয়ান যুদ্ধে মার্কিন সাহায্যের কারণে। এমনকি এখনও দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। একই সঙ্গে চীন দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ও রপ্তানি বাজার হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—দুই পরাশক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা এবং নিজেদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ নিশ্চিত করা। তাই দেশটির প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ংকে কূটনৈতিকভাবে খুব সাবধানে পা বাড়াতে হচ্ছে।

এরই মধ্যে গত শনিবার সিউলে কয়েকশ মানুষ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মার্কিন দূতাবাসের কাছে শত শত মানুষ 'নো ট্রাম্প!' স্লোগান দেয়। মিছিলের অদূরেই বিক্ষোভকারীদের আরেকটি অংশ 'নো চায়না', 'সিসিপি আউট!' স্লোগানে তোলে। সিসিপি মানে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি।

প্রতিবাদগুলো দেখাচ্ছে যে, জনগণের একটি অংশ দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্রাম্পের অর্থনৈতিক চাওয়া-পাওয়া ও চীনের প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ংয়ের কৌশলই নির্ধারণ করবে দক্ষিণ কোরিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান।

ক্ষমতায় আসার পর থেকে লি জে-মিয়ং ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে ব্যস্ত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এরই মধ্যে জানিয়েছেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ও ১০০ বিলিয়ন ডলারের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনবে। বিনিময়ে ট্রাম্প শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশে আনতে রাজি হয়েছেন।

তবে এতকিছুর পরও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় হুন্দাই কারখানায় ৩০০-র বেশি অভিবাসী দক্ষিণ কোরিয়ানকে আটক করা হয়। তার ওপর হোয়াইট হাউস এখন আরও নগদ বিনিয়োগ চাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের এসব দাবি-দাওয়াকে ভালোভাবে নিতে পারছে না।
প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করারও পক্ষে। তিনি ভিসানীতি শিথিল করেছেন এবং শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। এটি গত ১১ বছরে শি'র প্রথম দক্ষিণ কোরিয়া সফর। লি বৈষম্যমূলক সমাবেশ নিষিদ্ধের আইন এনেছেন ও স্পষ্ট করেছেন যে তার লক্ষ্য চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা।

বৈঠকের পর শি জিনপিং এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (এপেক) সম্মেলনে অংশ নেবেন। তিনি ট্রাম্পের তুলনায় বেশি সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় কাটাবেন। এটি চীনকে স্থিতিশীল বাণিজ্যিক অংশীদার ও বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে দেখানোর সুযোগ দেবে। লিয়ের চীন-বান্ধব নীতি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যতে আলোচনার পথও খুলতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

Comments

The Daily Star  | English
Number of International Observers Bangladesh election

Growing global focus on February 12 vote

The number of foreign observers preparing to monitor the February 12 polls has already exceeded those of the last three national elections

11h ago