মার্কিন রাজনীতিতে নতুন তারকা কে এই গাজালা হাশমি

গাজালা ফিরদৌস হাশমি। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)

নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির জৌলুসের কাছে আরও অনেক তারকা রাজনীতিক প্রথমে চাপা পড়লেও পরে তারা ধীরে ধীরে উদ্ভাসিত হতে শুরু করেন। এমনই একজন ভার্জিনিয়ার নবনির্বাচিত লেফটেন্যান্ট গভর্নর গাজালা হাশমি।

এই পদে নির্বাচিত হয়ে গাজালা হাশমি প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও মুসলিম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন।

গত ৫ নভেম্বর সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই নেতার বিজয় ও গৌরবগাথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, মার্কিন রাজনীতিতে শুধু জোহরান মামদানি ইতিহাস গড়েননি, এই তালিকায় আছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম নারী গাজালা ফিরদৌস হাশমিও।

১৯৬৪ সালে ভারতের হায়দারাবাদে জন্ম নেওয়া গাজালা হাশমি চার বছর বয়সে মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে। সেসময় গাজালা হাশমির বাবা স্টেটসবোরোর জর্জিয়া সাউদার্ন ইউনিভার্সিতে শিক্ষকতা করতেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে অভিবাসীদের দেশ হিসেবে প্রচার করা হলেও দেশটিতে ভিন্ন জাতি ও ভিন্ন ধর্মের মানুষদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের দৃষ্টিভঙ্গি গাজালা হাশমির মনে গভীর রেখাপাত করে।

গত ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে ৬১ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট গাজালা হাশমি তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী জন রিডকে পরাজিত করেন। বিজয়-ভাষণে গাজালা বলেন, 'এটা সম্ভব।' কারণ হিসেবে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা এত সুন্দর যে এখানে প্রচুর সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে।

ভার্জিনিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে গাজালা হাশমি সেই অঙ্গরাজ্যের রিচমন্ড থেকে রাজ্য সিনেটর নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে তিনি ভার্জিনিয়ায় দুটি কলেজে শিক্ষকতা করেছিলেন। ২০১৯ সালে ভার্জিনিয়া রাজ্য সিনেটের হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীকে পরাজিত করে গাজালা হাশমি মার্কিন রাজনীতিতে রাজকীয় প্রবেশ ঘটান।
এরপর গত জুনে লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পেয়ে তিনি আবারও আলোচনায় আসেন।

সিনেটর গাজালা হাশমির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে—গাজালা হাশমি প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় আমেরিকান হিসেবে ভার্জিনিয়ার সিনেটে কাজ করেছেন। তিনি সবার প্রতি সম্মান দেখানোর বাণী তুলে ধরেন। তিনি সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে প্রচারণা চালান।

গাজালা হাশমি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র, সবার স্বাধীনতা, অস্ত্র-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ রক্ষা, বাসস্থান ও কম খরচে স্বাস্থ্যসেবার ওপর গুরুত্ব দেন বলেও তার ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্বামী আজহার রফিকের সঙ্গে গাজালা হাশমি। ছবি: গাজালা হাশমির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

এতে আরও বলা হয়, চার বছর বয়সে গাজালা হাশমি যখন তার মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে জর্জিয়ায় আসেন তখন তার বাবা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর পিএইচডি শেষ করার পাশাপাশি শিক্ষকতা করছিলেন।

গাজালা হাশমি জর্জিয়া সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিএ (সম্মান) ও আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটি থেকে আমেরিকান সাহিত্যে পিএইচডি অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে গাজালা হাশমি ও তার স্বামী আজহার রফিক রিচমন্ডে চলে আসেন। সেখানে গাজালা প্রায় ৩০ বছর শিক্ষকতা করেন।

২০১৯ সালে গাজালা হাশমি ভার্জিনিয়া সিনেট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রার্থীকে পরাজিত করে রাজনৈতিক অঙ্গনে হৈচৈ ফেলে দেন। তিনি প্রথম মুসলিম হিসেবে আলোচনায় আসেন। ২০২৩ সালে বিপুল ভোটে আবারও এই পদে নির্বাচিত হন গাজালা হাশমি।

সিনেটর হিসেবে গাজালা হাশমি তার এলাকায় বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশসহ অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোর দেন।

গত ৬ নভেম্বর দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়, 'ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্র্যাটদের জন্য সুখের রাত, মুসলিমদের জন্য ইতিহাস।' প্রতিবেদনে লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদে গাজালা হাশমির বিজয়ের কথা উল্লেখ করে বলা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম কোনো মুসলিম এই পদে নির্বাচিত হলেন।

এতে আরও বলা হয়, ২০২০ সালে এক সাক্ষাৎকারে গাজালা হাশমি তুলে ধরেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলে মুসলিমদের কোন দৃষ্টিতে দেখা হতো।

এই জনপ্রতিনিধির ভাষ্য, 'তখনই রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম যখন দেখলাম এই দেশে এমন একটিও নেতা নেই যিনি নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলেন।' তারপর থেকে তিনি একের পর এক রচনা করেছেন ইতিহাস।

Comments

The Daily Star  | English
Sharif Osman Hadi dies in Singapore

Sharif Osman Hadi no more

Inqilab Moncho spokesperson dies in Singapore hospital

14h ago