যা পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা পেলেন বিন সালমান

ওয়াশিংটনে আয়োজিত সৌদি বিনিয়োগ সম্মেলনে ট্রাম্প-সালমান। ছবি: রয়টার্স
ওয়াশিংটনে আয়োজিত সৌদি বিনিয়োগ সম্মেলনে ট্রাম্প-সালমান। ছবি: রয়টার্স

প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম-লেখক সৌদি নাগরিক জামাল খাসোগিকে হত্যার পর দীর্ঘদিন 'এক ঘরে' হয়েছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সেটা ছিল ২০১৮ সাল। এরপর নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয় এই ক্ষমতাবান ও ধনকুবের যুবরাজকে। কালের পরিক্রমায় দেখা গেল—হোয়াইট হাউসের কাছে এক সময়ের ব্রাত্য রাজকুমার এখন সেই ভবনেই আলো ছড়ালেন রাজকীয় অতিথি হিসেবে।

খাসোগি হত্যার পর এই প্রথম হোয়াইট হাউসে গেলেন মোহাম্মদ বিন সালমান। কেন সৌদি আরবের এই ভবিষ্যৎ বাদশাহকে মহাক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা দিলেন? ডোনাল্ড ট্রাম্প কী পেলেন এই সফর থেকে ও মুহাম্মদ বিন সালমানকেই বা কী দিলেন ট্রাম্প?

আজ বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়—দুই নেতার বৈঠকের মাধ্যমে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশের সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ খনিজ তেল সরবরাহকারী দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়টি উঠে এসেছে।

বিনিয়োগ সম্মেলনে সৌদি ও মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে ট্রাম্প-এমবিএস। ছবি: রয়টার্স
বিনিয়োগ সম্মেলনে সৌদি ও মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে ট্রাম্প-এমবিএস। ছবি: রয়টার্স

এতে আরও বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দিয়েছেন। ইস্তানবুলে সৌদি কনসুলেটে খাসোগিকে হত্যার পর দেশ দুইটির সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যায়। ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকার সময় সৌদি আরব সফর করলেও যুবরাজ সালমানকে কখনই হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানাননি।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান মাধ্যমে ইসরায়েলকে সৌদি আরবের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় থাকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। 'আব্রাহাম চুক্তি'র মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরব সম্পর্ক স্বাভাবিক করলে তা ট্রাম্পের সফলতা হিসেবে দেখা হবে। ট্রাম্পের মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সেই সাফল্যও পাবেন তিনি।

যা পেলেন বিন সালমান

গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ও সৌদি যুবরাজ বিন সালমান যে কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে তা এই দুই দেশের মধ্যে ৮০ বছরের অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করেছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।

এতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প বিপুল পরিমাণে অস্ত্র সৌদি আরবের কাছে বিক্রির অনুমোদন দিয়েছেন। মার্কিন প্রতিরক্ষাশিল্পকে আরও চাঙা করতে ও সৌদি আরব মার্কিন অস্ত্র কিনবে এমন নিশ্চয়তার মাধ্যমে রিয়াদকে ভবিষ্যতে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়ার বিষয়টিও এতে অন্তর্ভুক্ত আছে।

বিনিয়োগ সম্মেলনে ট্রাম্প-এমবিএস। ছবি: রয়টার্স
বিনিয়োগ সম্মেলনে ট্রাম্প-এমবিএস। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ ট্যাংক কেনার অনুমতি সৌদি আরব পেয়েছে। তবে এর মাধ্যমে একদিকে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন শক্তিশালী হবে, অন্যদিকে কয়েক হাজার মার্কিনির চাকরির সুযোগ হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির মধ্য দিয়ে সৌদি আরব বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য পরমাণু শক্তি, দুর্লভ খনিজ ও প্রযুক্তি খাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ পাবে। চুক্তিতে বলা হয়েছে যে, মার্কিন পরমাণু গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো সৌদি আরবে শান্তিপূর্ণ পরমাণু গবেষণায় কাজ করবে।

ট্রাম্প যা পেলেন

হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়—যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাড়াতে একগুচ্ছ ঐতিহাসিক চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এসব চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বেশি বেতনের চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল শক্তিশালী হবে। মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বাড়বে। এসবের মাধ্যমে মার্কিন কর্মী, শিল্পকারখানা ও নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পাবে।

এতে আরও বলা হয়, গত মে মাসে ট্রাম্পের সফল রিয়াদ সফরের সময় সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এসব চুক্তি সেগুলোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

নৈশভোজে সালমান-ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
নৈশভোজে সালমান-ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

সেই অংশীদারিত্বের পরিধি এতটাই বেড়েছে যে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষণা দিয়েছেন, সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বাড়িয়ে এক ট্রিলিয়ন ডলার (১০ লাখ কোটি) করবে। এর ফলে দেশ দুইটির মধ্যে গভীর আস্থা সৃষ্টি হবে। এটি ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও এক বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট অনুসারে যেসব গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করা হবে এর মধ্যে আছে বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা, বিরল খনিজ নিয়ে গবেষণা-সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এগুলো থেকে মার্কিনিরা সরাসরি উপকৃত হবেন।

এতে আরও বলা হয়, এসব চুক্তির মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব উদ্ভাসিত হয়েছে। দেশটির ভবিষ্যৎ অর্থনীতি নিশ্চিত হয়েছে।

আজ বুধবার সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া জানায়—যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূত রাজকন্যা রিনা বিন বন্দর বলেছেন যে, এসব চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, উভয় দেশের নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের দুই দেশের প্রতিশ্রুতি জোরালো হবে।

নৈশভোজের অনুষ্ঠানে মেলানিয়া, ট্রাম্প ও সালমান। ছবি: রয়টার্স
নৈশভোজের অনুষ্ঠানে মেলানিয়া, ট্রাম্প ও সালমান। ছবি: রয়টার্স

বিশ্লেষকদের অনেকের ভাষ্য, গত জুনে সৌদি আরবের প্রধান আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানে দেশটির প্রধান আঞ্চলিক শত্রু ইসরায়েল হামলা চালালে ও গত সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনি নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে কাতারে ইসরায়েলি হামলার ঘটনা সৌদি আরবকে প্রতিরক্ষা বিষয়ে ভিন্নভাবে ভাবতে উৎসাহিত করে।

এ ছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের শক্তিশালী অবস্থানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা। এর মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। আর এ ক্ষেত্রে যেন পথ দেখাবেন সৌদি যুবরাজ।

Comments

The Daily Star  | English

How Bangladesh fought a global war without guns

Prof Rehman Sobhan recounts the lesser-known diplomatic battle of 1971

3h ago