প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছে জার্মানি

ইসরায়েলের হাতজর বিমানঘাঁটিতে রাখা অ্যারো ৩ ক্ষেপণাস্ত্র। ফাইল ছবি: সংগৃহীত (২০১৮)
ইসরায়েলের হাতজর বিমানঘাঁটিতে রাখা অ্যারো ৩ ক্ষেপণাস্ত্র। ফাইল ছবি: সংগৃহীত (২০১৮)

ইসরায়েল-ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধে তেল আবিবকে সুরক্ষিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র-ভিত্তিক আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অ্যারো থ্রি।

এবার ইসরায়েলের নিজস্ব প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানের সমন্বয়ে নির্মিত ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা প্রথমবারের মতো বিদেশি কোনো দেশের হাতে পৌছাচ্ছে। দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্র জার্মানি জানিয়েছে, তারা দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে 'ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী' অ্যারো থ্রি মোতায়েন করতে চলেছে।

আজ রোববার ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টের প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।

এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ ইসরায়েলের কাছ থেকে পাওয়া অ্যারো থ্রি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ও মোতায়েন করবে জার্মানি।

এই সুরক্ষা ব্যবস্থা পেতে জার্মানিকে গুণতে হয়েছে তিন দশমিক ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইসরায়েলের বাইরে এবারই ভিন্ন কোনো দেশ অ্যারো থ্রি মোতায়েন করতে চলেছে। 

গাজায় ইসরায়েলি সহিংসতা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন তেল আবিবের কাছ থেকে সব ধরনের অস্ত্র কেনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বার্লিন।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ঐ নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে তুলে নিচ্ছে জার্মানি।

হুতি হামলা প্রতিহত করছে অ্যারো থ্রি। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
হুতি হামলা প্রতিহত করছে অ্যারো থ্রি। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

তারই অংশ হিসেবে অ্যারো থ্রি কেনার প্রক্রিয়া শেষ করেছে জার্মানি। এটাই এককভাবে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় আকারের রপ্তানি চুক্তি।

২০২৪ সালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক সহযোগিতা অ্যারো টু ও অ্যারো থ্রি ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা নির্মাণ করা হচ্ছে, যা দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করবে। এ কাজের জন্য সরকারি ঠিকাদার হিসেবে কাজ করবে আইএআই (ইসরায়েলি অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ)।

২০২৩ সালেই এ বিষয়ে জার্মানির সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছিল। তবে নানা কারণে এর বাস্তবায়নে অনেক সময় লেগে যায়।

চলতি বছরের জুনে ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তেহরান থেকে ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকাংশই অ্যারোর আঘাতে ধ্বংস হয়েছিল বলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।

ইসরায়েলি বিশ্লেষকদের মত, ইরান ওই সময়ে অন্তত ৫৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। তবে এসব হামলায় মাত্র ২৮ ইসরায়েলি নিহত হন। সব মিলিয়ে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হামলার মাত্রার তুলনায় নগণ্য—এমনটাই মনে করেন তারা। 

২০২৪ সালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের দুই সংস্থা ইসরায়েলি আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও উৎপাদনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। একইসঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা খাতকে সমর্থন জানাতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতাও অব্যাহত আছে।

অ্যারো থ্রির পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
অ্যারো থ্রির পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

অ্যারো টু ও থ্রির উন্নয়ন ও উৎপাদনে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্র।

যার ফলে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে জার্মানির সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওয়াশিংটনের নামও জড়িয়ে ছিল।

অ্যারো থ্রি ২,৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে থাকা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম। হাইপারসনিক গতিতে (শব্দের গতির চেয়ে ৫ গুণ বেশি, প্রায় ১০ ম্যাক) অ্যারো থ্রির ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কাজ করে।

একটি লঞ্চার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে পাঁচটিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুচ্ছ ঠেকাতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

How Bangladesh fought a global war without guns

Prof Rehman Sobhan recounts the lesser-known diplomatic battle of 1971

3h ago