ইমরান খানের মুক্তি ও পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞার দাবিতে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের চিঠি

কংগ্রেস সদস্য গ্রেগ কাসার ও প্রমীলা জয়পাল । ছবি: ডন
কংগ্রেস সদস্য গ্রেগ কাসার ও প্রমীলা জয়পাল । ছবি: ডন

যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৪২ সদস্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর কাছে চিঠি পাঠিয়ে জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ সব রাজনৈতিক বন্দীরও মুক্তি চেয়েছেন কংগ্রেস সদস্যরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন।

প্রতিনিধি পরিষদের (হাউস অব রেপ্রেজেন্টেটিভস) ওই সদস্যদের অভিযোগ, পাকিস্তানজুড়ে দমন পীড়ন বেড়েছে এবং দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে।

চিঠি পাঠানোর উদ্যোগে নেতৃত্বও দিচ্ছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য প্রমীলা জয়পাল ও গ্রেগ কাসার। তাদের সঙ্গে আরও ৪০ জন কংগ্রেস সদস্য আছেন। তাদের মধ্যে ফিলিস্তিনপন্থি মুসলিম সদস্য ইলহাম ওমর ও রাশিদা তায়েব অন্যতম।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: রয়টার্স

গত বুধবার চিঠিটি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়। ওই চিঠিতে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মার্কিন নাগরিক, সে দেশে বসবাসকারী পাকিস্তানি নাগরিক ও তাদের পাকিস্তান নিবাসী আত্মীয়-স্বজনদের হুমকি দিয়েছেন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মূলত পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করার কারণেই তারা কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়েছেন।

এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর বা ওয়াশিংটনে নিযুক্ত দূতাবাস কোনো মন্তব্য করেনি।

যেসব মানুষ 'রাষ্ট্রের ক্ষমতার অস্ত্রীকরণ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাবন্দী করে, বিদেশে বসবাসরত নাগরিকদের হুমকি দেয় ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করে', তাদের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান কংগ্রেসসদস্যরা।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অসংখ্য মার্কিন নাগরিক ও অভিবাসী পাকিস্তান সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলে হুমকি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের পাকিস্তান নিবাসী পরিবারের সদস্যরাও এতে আক্রান্ত হয়েছেন। কর্মকর্তারা যেসব কৌশল অবলম্বন করেন, তার মধ্যে আছে কোনো কারণ না দেখিয়ে আটক, প্রতিশোধমূলক সহিংসতা ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কিছু করতে বাধ্য করা। অনেক ক্ষেত্রেই প্রবাসী পাকিস্তানি ও তাদের আত্মীয়-স্বজন এ ধরনের আচরণের শিকার হয়েছেন।'

চিঠিতে মার্কিন আইনপ্রণেতারা হুশিয়ার করেন, পাকিস্তান কর্তৃত্ববাদী শাসনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে, দেশটি গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে। কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই বিরোধী দলের নেতাদের আটক, সাংবাদিকদের ভয় দেখানো বা জোর করে নির্বাসনে পাঠানো এবং সাধারণ নাগরিকদের সামাজিক মাধ্যমের পোস্টের জেরে গ্রেপ্তারের মতো ঘটনা নিয়মিত ঘটছে।

রাওয়ালপিন্ডিতে ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
রাওয়ালপিন্ডিতে ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

কংগ্রেস সদস্যরা আরও দাবি করেন, দেশজুড়ে নারী, সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা বৈষম্য ও শোষণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তারা আলাদা করে বেলুচিস্তান প্রদেশের কথা উল্লেখ করেন।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, 'পাকিস্তানের কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন দমন-পীড়নের মাধ্যমে টিকে আছে। বিরোধীদলের নেতাদের বিনা অভিযোগে আটক করা হচ্ছে। তারা ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদেরকে বিচারপূর্ব আটকাদেশ দেওয়া হচ্ছে। নিরপেক্ষ সাংবাদিকদের হয়রানি, অপহরণ অথবা জোরে করে নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। সাধারণ নাগরিকরা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার দায়ে গ্রেপ্তার হচ্ছেন। অপরদিকে, নারী, সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের—বিশেষত বেলুচিস্তানে—মাত্রাতিরিক্ত সহিংসতা ও নজরদারির মুখে পড়েন।'

আইনপ্রণেতারা এসব অভিযোগের বিপরীতে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।

ভার্জিনিয়া-ভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক আহমাদ নুরানি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন লেখার পর তার ভাইদেরকে অপহরণ করে এক মাসেরও বেশি সময় আটক রাখা হয় বলে অভিযোগ করা হয় চিঠিতে।

২০২৪ সালের নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কংগ্রেস সদস্যরা।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এসব অনিয়ম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছিল।

চিঠিতে মার্কিন প্রশাসনকে দায়ী পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ম্যাগনিটস্কি বিধিনিষেধ, ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দের দাবি জানানো হয়।

চিঠিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তিরও দাবি জানানো হয়।

কংগ্রেস সদ্যরা ওই চিঠির জবাব দিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English
Sharif Osman Hadi dies in Singapore

Sharif Osman Hadi no more

Inqilab Moncho spokesperson dies in Singapore hospital

4h ago