আবারও ইমরান খানের মৃত্যুর গুজব, ছড়াল যেভাবে
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের মৃত্যুর গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভারতীয় গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল থেকেই ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি।
তবে পাকিস্তান সরকার এসব তথ্যকে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর বলে তাৎক্ষণিকভাবে অস্বীকার করেছে।
কারা কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, ইমরান খান সুস্থ আছেন।
যেভাবে ছড়াল গুজব
'ইমরান খান কোথায়?' গতকাল বুধবার রাতে ভারতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এমন প্রশ্ন তুলে দাবি করা হয়, রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে মারা গেছেন ইমরান খান।
আবার কোনো কোনো গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়, 'ইমরান খানকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগার থেকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।'
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া আউটলুকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরান খানের মৃত্যুর গুজব নিয়ে প্রকাশিত খবরগুলো একটি আফগান সংবাদমাধ্যমের বরাতে প্রকাশ করা হয়।
তবে কোনো গণমাধ্যমই ওই কথিত আফগান সূত্রের নাম, লিংক বা স্ক্রিনশট প্রকাশ করেনি। প্রতিবেদনে কোনো যাচাই, অফিশিয়াল মন্তব্য বা নিশ্চিত তথ্য ছিল না।
এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, আফগানিস্তান টাইমস নামে একটি পত্রিকা পাকিস্তানের একটি গ্রহণযোগ্য সূত্রের বরাতে খবর প্রকাশ করে 'ইমরান খানের রহস্যময় মৃত্যু হয়েছে। তার মরদেহ কারাগার থেকে অন্যত্র সরানো হচ্ছে।'
যাচাই-বাছাই ছাড়াই খবরটি দ্রুত প্রকাশ করে ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যম। একইভাবে খবরটি সামাজিকমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর আদিয়ালা জেলের বাইরে ইমরানের দল পিটিআইয়ের সমর্থকদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তারা ইমরানের বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দাবি জানান।
এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, 'ইমরান খান নিরাপদ আছেন, তার মৃত্যু সংক্রান্ত সব সংবাদই ভুয়া।'
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও এক বিবৃতিতে জানান,'ইমরান খান কারাগারে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তা তিনি নিজেও কখনো পাননি। ইমরান খানের জন্য যে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়, তা পাঁচ তারকা হোটেলেও পাওয়া যায় না।'
বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা বলছে, ইমরান খানের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলো বেশ পুরোনো। এর মধ্যে একটি ভিডিও ২০১৩ সালের। ওই সময় নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে আহত হয়েছিলেন ইমরান খান।
ইমরান খানকে ঘিরে ভুয়া সংবাদ ছড়ানো নতুন নয়। চলতি বছরের মে মাসেও বিষ প্রয়োগে ইমরানের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত একটি ভুয়া প্রেস রিলিজ পরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে মিথ্যা প্রমাণ করে।
২০২৩ সালের আগস্ট থেকে জেলে রয়েছেন ইমরান খান। তাকে ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় উপহার আত্মসাৎ ও দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে ইসলামাবাদ আদালত। তার বিরুদ্ধে আরো শতাধিক মামলা রয়েছে।
সম্প্রতি ইমরান খানের তিন বোন—নুরিন নিয়াজি, আলিমা খান ও ড. উজমা খান রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষের কাছে ইমরানের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেশ কয়েকবার অনুমতি চান। কারাগারের বাইরে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেছেন। তবে কারা কর্তৃপক্ষ সাক্ষাতের অনুমতি দেয়নি।


Comments